ঢাকা: স্বাভাবিকভাবে রোজ তিন বেলা আমরা হাত দিয়ে খাই। আমরা বলতে, বিশেষ করে এই উপমহাদেশের মানুষ।
পশ্চিমা দেশের মানুষদের কাছে এ এক বিস্ময়! তাদের কাছে হাত দিয়ে খাওয়াটা এক ধরনের অসভ্যতাও বটে।
কিন্তু আয়ুর্বেদ বলছে, হাত দিয়ে খাওয়ায় শুধু শরীর নয়, মনের সঙ্গেও এক ধরনের আন্তঃসংযোগ ঘটে। আয়ুর্বেদের আঁতুড়ঘর ভারতের কেরালা আরও একধাপ এগিয়ে।
কারণ, সেখানে হাত দিয়ে খাওয়ার পাশাপাশি কলা পাতায় খাওয়ারও একটি রেওয়াজ আছে। স্থানীয়দের মত, এর পেছনের রয়েছে আয়ুর্বেদের জ্ঞান। আয়ুর্বেদে নানা জায়গায় কলা পাতার ব্যবহার দেখা যায়।
তারা বিশ্বাস করেন, খাবারের ষোল আনা মজা কেবল হাত দিয়ে খেলেই, ছুঁরি-চামচে নয়।
এ ধারণা শুধু কেরালার নয়, উপমহাদেশের সবখানেই। তারপরও কলা পাতায় করে হাতে খাওয়ার এ বিষয়টি তারা ‘ভোজন বিষয়ক’ শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে গেছেন।
পাশাপাশি স্থানীয় বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী রেস্তোরাঁয় দেখা মিলবে, ‘হাতে খাওয়ার পেছনে বেদের জ্ঞান’ লেখাটি। বিষয়টি তারা শুধু মনে-প্রাণে মানেনই না, প্রচারও করেন।
লেখাটি ব্যাখ্যা করলে দাঁড়াবে, আয়ুর্বেদ অনুযায়ী আমাদের পাঁচ আঙুল পাঁচটি উপাদানকে নির্দেশ করে। বুড়ো আঙুল নির্দেশ করে আগুন। আমরা সবাই শিশুদের বুড়ো আঙুল চোষা দেখে থাকবো। এই বয়সে যখন তারা কোনো কিছু চিবাতে পারে না, প্রাকৃতিক এ উপায়ে তাদের খাবার হজম হয়। এরপর তর্জনি হচ্ছে বাতাস, মধ্যমা আকাশ, অনামিকা পৃথিবী আর কনিষ্ঠা হলো পানি।
এমনি একটি ঐতিহ্যবাহী রেস্তোরা ‘সাড়িয়া’ (মালয়ালম ভাষায়) বা ভোজ। দিনে প্রায় ২৪ থেকে ২৮ রকমের আলাদা খাবার এখানে পরিবেশন করা হয়।
সাড়িয়ার নির্বাহী রন্ধনশিল্পী অশোক পিল্লাই জানান, বিয়ে ও বিভিন্ন উৎসবে নিরামিশ খাবার পরিবেশনের জন্য সাড়িয়া একটি ঐতিহ্যবাহী রেস্তোরাঁ। আমরা সব খাবারই কলাপাতায় পরিবেশন করি এবং সেটি হাত দিয়ে খাওয়া হয়।
এছাড়াও, সাড়িয়া’র আরেকটি প্রধান আকর্ষণ ‘নাবারা’। এটি একপ্রকার ঔষধি চাল। এর আদি উৎপত্তিও কেরালায়। আয়ুর্বেদেও এ চালের ব্যবহার পাওয়া যায়। নাবারা স্বাস্থের জন্যও দারুণ পুষ্টিকর। আথ্রাইটিস, প্যারালাইসিস, আলসারসহ, মূত্রনালী ও মস্তিষ্কের সমস্যাসহ বিভিন্ন রোগ নিরাময়ের জন্য এটি ভীষণ উপকারী।
সাড়িয়ার মতো দেখা মিলবে ‘তাজ বেকাল’সহ বেদে’র দর্শন মেনে চলা বেশ কিছু খাবারের রেস্তোরাঁ। তারা তাদের নিজস্ব নিরামিশ আয়োজনের পসরা সাজিয়ে বসে আছেন। খাবারের পাশাপাশি মিলবে আয়ুর্বেদের দর্শন।
সেখানকার রেস্তোরাঁ কর্তাদের মত, আজকাল পর্যটকরাও নাকি সভ্য-অসভ্যের তোয়াক্কা না করে হাত দিয়ে খেতে বসে যান কলা পাতায়। এক সময় নাক-সিঁটকানো থাকলেও, এখন এসবের প্রতি যথেষ্ট আগ্রহ তাদেরও।
তাছাড়া, হাজার বছরের প্রাচীন জ্ঞানভাণ্ডার আয়ুর্বেদের সঙ্গে আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের কোনো সংঘর্ষ খুঁজে পান না চিকিৎসকরা। কলাপাতায় হাত দিয়ে খাওয়ার মধ্যে কোনো ক্ষতি তো নয়ই, বরং হজমের জন্য মহা উপকারী বলেই মত তাদের।
তাহলে আর চিন্তা কী!
বাংলাদেশ সময়: ০০৪০ ঘণ্টা, আগস্ট ৩০, ২০১৪