ঢাকা: দেশে যক্ষ্মার চিকিৎসায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাকের ডটস কর্মসূচি। এই কর্মসূচিতেই এক সময়ের মরণব্যাধি যক্ষ্মা রোগ এখন নিয়ন্ত্রণে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এক সময় যক্ষ্মা হলে রক্ষা নেই-এধরনের কথা প্রচলিত হয়ে পড়েছিল। কিন্তু বর্তমানে রোগটি সম্পূর্ণ নিরাময়ে যোগ্য। বর্তমানে তা নিয়ন্ত্রণে
চলে এসেছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির (এনটিপি) তথ্য অনুযায়ী, প্রতিবছর দেশে দেড় লাখেরও বেশি যক্ষ্মা রোগী শনাক্ত হয়। তবে ডটস পদ্ধতির চিকিৎসায় ৯২ শতাংশ রোগী সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে যান।
সম্প্রতি গাজীপুর জেলায় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণে ব্র্যাকের ডটস কর্মসূচি পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, রোগীর রোগ শনাক্ত থেকে শুরু করে নিয়মিত ওষুধ সেবনের দায়িত্বও ব্র্যাকের স্বাস্থ্য সেবীরা পালন করছেন।
গাজীপুরের ভোগড়ার ডটস কর্মসূচিতে কাজ করেন স্বাস্থ্য সেবিকা আকলিমা বেগম। প্রতিদিন সকালে ডটস-এর ওষুধ নিয়ে যক্ষ্মা আক্রান্ত হাসমত আলীর (৪২) বাড়িতে যান তিনি।
হাসমত আলীকে ওষুধ দেওয়ার পাশাপাশি অন্যান্য রোগীদের ওষুধ দেন আর তাদের খোঁজ-খবর নেন তিনি।
গাজীপুর জেলার বিভিন্ন অঞ্চলে আকলিমার মতো ১ হাজার ৯৫০ সেবিকা ডটস কর্মসূচির আওতায় নিয়োজিত আছেন। তারা ওই এলাকার আনাচে-কানাচে যক্ষ্মা আক্রান্ত রোগীদের খুঁজে বের করেন এবং তাদের নিয়মিত ওষুধ দেন।
বাংলানিউজকে সেবিকা আকলিমা বেগম বলেন, যক্ষ্মা আক্রান্ত রোগীদের খালি পেটে তিনটি করে টুএফডিসি ওষুধ খাওয়াতে হয়। এর আগে প্রথম পর্যায়ে ২ মাস ফোরএফডিসি ট্যাবলেট খাওয়ানো হয়েছিল।
যক্ষ্মা আক্রান্ত হাসমত আলী বাংলানিউজকে বলেন, প্রথমে কাশিতে রক্ত ধরা পড়ে। এরপর ব্র্যাকের সহায়তায় তিন মাস ধরে চিকিৎসা নিচ্ছি।
উচ্ছ্বসিত হাসমত আলী বলেন,‘শরীরের অবস্থা এখন ভালো। ’
ব্র্যাক- এর জেলা ম্যানেজার হিমাংশু মণ্ডল বাংলানিউজকে বলেন, গাজীপুরে প্রতি ২০০ থেকে ২৫০ জনের জন্যে একজন করে স্বাস্থ্য সেবিকা রয়েছেন। এ বছরের জুলাই পর্যন্ত ৩ হাজার ৯ জন রোগীকে ডটস-এর আওতায় সেবা দেওয়া হয়েছে। অনুমান করা হয়েছিল ১৭ হাজার ১১৬ জনকে।
তিনি জানান, বর্তমানে ১৬ জন মাল্টি ড্রাগ রেসিসটেন্স (এমডিআর) রোগীকেও সেবা দেওয়া হচ্ছে। এমডিআর রোগীকে প্রতিদিন ভরা পেটে ২০টা করে
ট্যাবলেট খেতে হয়।
স্বাস্থ্য সেবিকাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ডটস কর্মসূচির আওতায় কোনো রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয় না। একজন যক্ষ্মা রোগীকে প্রতিদিন সকালে খালি পেটে সেবিকার বাড়িতে যেতে হয়।
রোগী আসার পর স্বাস্থ্য সেবিকা তাকে সেবন বিধি অনুযায়ী ওষুধ খেতে দেন। যদি কোনো কারণে রোগী সেবিকার বাড়িতে হাজির না হয়, তবে সেবিকা রোগীর বাড়িতে গিয়ে তাকে ওষুধ খাইয়ে দেন।
ওষুধে কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার খবর পাওয়া গেলে রোগীকে সঙ্গে সঙ্গে নিকটস্থ স্বাস্থ্য কেন্দ্রে যাওয়ার পরামর্শ দেন তারা।
বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাক ১৯৮৪ সালে এক উপজেলায় সমাজভিত্তিক যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি শুরু করে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের তথ্যমতে, দেশে বর্তমানে প্রতি লাখে ৪১১ জন যক্ষ্মায় আক্রান্ত রোগী পাওয়া যায়। প্রতি বছর নতুনভাবে আক্রান্ত হন প্রতি লাখে ২৫ জন।
তবে সময় মতো সঠিক চিকিৎসা নিয়ে শতকরা ৯০ ভাগ রোগীই সম্পূর্ণরূপে সুস্থ হয়ে ওঠেন।
ব্রাকের দেওয়া তথ্যমতে, সারাদেশে সরকারিভাবে ৮৫০ টি ডটস সেন্টার রয়েছে। সেন্টারগুলোতে প্রত্যেক রোগীর জন্যে খরচ হয় প্রায় ৩২ হাজার টাকা। বাংলাদেশে যক্ষ্মার প্রার্দুভাব ও মৃত্যুহার ২০১৫ সালের অর্ধেকে নামিয়ে আনা এ কর্মসূচির লক্ষ্য।
এ প্রসঙ্গে ব্র্যাকের পরিচালক মো. আকরামুল ইসলাম (টিবি, ম্যালেরিয়া, ওয়াশ, ডিইসিসি) বাংলানিউজকে বলেন, স্বাস্থ্য খাতের কর্মসূচিগুলোর মধ্যে যক্ষ্মা নিরাময় সবচেয়ে সফল। সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ের কারণে এ সফলতা পাওয়া গেছে।
বিশেষ করে যক্ষ্মা রোগীকে চিহ্নিত হওয়ার পর থেকেই নজরদারির কারণে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় অনেক বেশি সফলতা পাওয়া গেছে বলে জানান তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৪২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৬, ২০১৪