ঢাকা, শুক্রবার, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

বেহাল দশায় স্বাস্থ্যসেবা

জনবল বাড়েনি সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে

শেখ তানজির আহমেদ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৪৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২২, ২০১৪
জনবল বাড়েনি সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

সাতক্ষীরা: ‘ভাই কাল রাতে বুকের ব্যথা নিয়ে সদর হাসপাতালে ভর্তি হইছি। সকালে ডাক্তার এসে বেশ কয়েকটি টেস্ট দিয়ে যান।

প্রায় নয়শ’ টাকা খরচ করে টেস্টগুলো করতে দিতেই অন্য একজন ছাড়পত্র দিয়ে গেল। এখনো টেস্টের ফলাফল পাইনি, ডাক্তারও দেখেনি। কোনো কথা না শুনে বলল, সিট ছেড়ে চলে যেতে। ’ সরেজমিনে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে গেলে এভাবেই নিজের অসহায়ত্বের কথা তুলে ধরেন গোলাম সরোয়ার। তিনি সাতক্ষীরা সদর উপজেলার পারকুখরালী গ্রামের বাসিন্দা।

শুধু গোলাম সরোয়ার নন, আরো অনেকেই এমন অব্যবস্থাপনার কারণে বঞ্চিত হচ্ছেন সুচিকিৎসা থেকে। এছাড়াও প্রয়োজনীয় ওষুধ সরবরাহ না দেয়া, চাহিদার তুলনায় কম বরাদ্দ, আবাসিক রোগীদের মানসম্মত ও নিয়ম অনুযায়ী খাবার না দেওয়া, সেবিকাদের চরম দুর্ব্যবহার, ডেলিভারি রোগীদের কাছ থেকে উৎকোচ নেয়া, প্যাথলজিক্যাল টেস্টে অতিরিক্ত অর্থ আদায়, প্রয়োজনীয় পদ সৃষ্টি না করাসহ নানা অব্যবস্থাপনার মধ্য দিয়ে চলছে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের চিকিৎসা সেবা।

তথ্য অনুসন্ধানে জানা গেছে, ১৯৮০ সালে ৫০টি শয্যার সমন্বয়ে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতাল প্রতিষ্ঠিত হয়। এরপর ১৯৯৭ সালে হাসপাতালটি ১০০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। কিন্তু সে অনুযায়ী জনবল কাঠামো বাড়ানো হয়নি।

বর্তমানে হাসপাতালে আউটডোরে প্রতিদিন গড়ে এগারশ’ ও ইনডোরে তিনশ’ রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন। ফলে স্বল্প জনবল নিয়ে চিকিৎসকরা রোগীদের প্রত্যাশিত সেবা দিতে ব্যর্থ হচ্ছেন বলে অভিযোগ রোগীর স্বজনদের।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, এখানে একটি তত্ত্বাবধায়ক, একটি আবাসিক মেডিকেল অফিসার, ১০টি কনসালটেন্ট, তিনটি ইএমও, ছয়টি মেডিকেল অফিসার, দুইটি নার্সিং সুপারভাইজারসহ ৫৯টি নার্স, একটি প্যাথলজিস্ট, ১৩টি এমএলএসএস, সাতটি ক্লিনার ও অন্যান্য ২৪টি পদ রয়েছে। যা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই অপ্রতুল। এর মধ্যেও আবার দুইটি কনসালটেন্ট, দুইটি ইএমও, একটি মেডিকেল অফিসার ও অন্যান্য চারটি পদ শূন্য রয়েছে।

জানা যায়, প্রায় এক দশক আগে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালকে ১০০ শয্যা থেকে ২৫০ শয্যায় উন্নীত করার ঘোষণা দেওয়া হয়। কিন্তু কোনো অজানা কারণে আজও তা বাস্তবায়িত হয়নি।

অনেক সুপারভাইজার ও স্টাফ নার্স রোগীদের সাথে চরম দুর্ব্যবহার করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। অনেকেই অভিযোগ করেন, কোনো প্রসূতির বাচ্চা হলে নার্সদের উৎকোচ না দিলে ছাড়পত্র দেওয়া হয় না। নানা উপায়ে একই কর্মস্থলে বছরের পর বছর চাকরি করে যাচ্ছেন অনেকে।

আবাসিক রোগীরা জানান, তাদের জন্য যে খাবার বরাদ্দ রয়েছে তা দেওয়া হয় না। যে খাবার সরবরাহ করা হয় তা অতি নিম্ন মানের। এছাড়া বাথরুমগুলো অপরিষ্কার ও স্যাঁতসেঁতে।

জানা যায়, বর্তমানে হাসপাতালে বিনামূল্যে ২৯ প্রকার ওষুধ সরবরাহের কথা থাকলেও, পর্যাপ্ত সরবরাহ না থাকায় রোগীদের বাইরে থেকে ওষুধ কিনতে হচ্ছে। যদিও কখন, কোন ওষুধ, কি পরিমাণ আছে তা সবসময় ডিজিটাল ডিসপ্লে বোর্ডে প্রদর্শিত হচ্ছে।

পুরুষ ওয়ার্ডের একজন আবাসিক রোগী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ভাই ওষুধ সব বাইরে থেকে কিনতে হচ্ছে।

আউটডোরে চিকিৎসা নিতে আসা আব্দুল কাদের বলেন, এতো রোগী, কিন্তু ডাক্তার কম। জেলার প্রধান চিকিৎসা কেন্দ্র হিসেবে এখানে আরো চিকিৎসকের পদ সৃষ্টি করা উচিত।

সার্বিক বিষয়ে সাতক্ষীরার সিভিল সার্জন ও সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক ডা. সালেহ আহমেদ বলেন, যে পরিমাণ রোগী চিকিৎসা নেন সে তুলনায় ওষুধ সরবরাহ নেই। চিকিৎসকের পদও অপ্রতুল। এছাড়া আউটডোরের জন্য কোনো ওষুধ বরাদ্দ নেই। ইনডোরের বরাদ্দ দিয়েই সবদিক সামলানো হয়। সর্বোচ্চ ভালো সেবা দেওয়ার জন্য আন্তরিক চেষ্টা চালানো হচ্ছে। টুকটাক সমস্যাগুলো দূর করতে পারলে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতাল দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থার মডেল হতে পারে।

বাংলাদেশ সময়: ২১০৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২১, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।