ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

জীবিত নারীকে মৃত ঘোষণা

ঢামেক পরিচালকের দুঃখ প্রকাশ

আবাদুজ্জামান শিমুল, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৫২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৫, ২০১৪
ঢামেক পরিচালকের দুঃখ প্রকাশ ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এক জীবিত নারীকে মৃত ঘোষণা করায় দুঃখ প্রকাশ করেছেন হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোস্তাফিজুর রহমান।

শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) সকালে বাংলানিউজকের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ দুঃখ প্রকাশ করেন।



তিনি বাংলানিউজকে বলেন, আমি সকালে ওই নারীকে ওয়ার্ডে দেখে আসছি এবং ওই নারীর আলট্রা সনোগ্রাম, ইসিজি, এক্স-রে সহ বেশ কয়েকটি রক্তের পরীক্ষা করতে বলেছি।

তিনি আরো বলেন, নারীকে মৃত ঘোষণার বিষয়টি খতিয়ে দেখতে চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ডা. এনামুল করিমকে এ তদন্ত কমিটির প্রধান করা হয়।

কমিটিকে তিন দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়। রিপোর্ট আসলেই আমরা ওই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবো।

জীবিত নারীকে মৃত ঘোষণা করায় নিজেও মর্মাহত হয়েছেন বলে দুঃখ প্রকাশ করেন তিনি।

উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) বিকেলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এক নারীকে মৃত ঘোষণা করেন চিকৎসকরা। এমনকি ‘মৃত্যুর প্রমাণপত্র’ (ডেথ সার্টিফিকেট) ইস্যু হয়েছিলো তার নামে। মরদেহও নিতে এসেছিলেন মর্গের লোকজন। কিন্তু মৃত ঘোষণ‍ার ঘণ্ট‍া তিনেক পর জেগে উঠে ওই নারী সবাইকে চমকে দেন।

পরে এ ঘটনায় তোলপাড় চলে পুরো হাসপাতালে।

জানা যায়, ২ ডিসেম্বর ঢামেকে ভর্তি করা হয়েছিলো অজ্ঞাতপরিচয় (৪৫) ওই নারীকে।   তার স্থান হয় ঢামেকের নতুন ভবনের ৮০২ নং ওয়ার্ডের ৭ নং ইউনিটে।

দু’দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর বৃহস্পতিবার দুপুর ২টার দিকে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করলে সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডবয় বেলাল মৃত ঘোষণার কাগজপত্র নিয়ে মর্গ অফিসে যান। মর্গ অফিসের দায়িত্বরত কর্মকর্তা নূরে আলম বাবু মৃত ঘোষণার কাগজপত্র গ্রহণ করে আজিজ নামে এক কর্মীকে মৃত নারীর লাশ আনতে পাঠান।

বেলালকে নিয়ে আজিজ লাশ আনতে গেলে লক্ষ্য করেন, ‘মৃত’ নারীর হাত-পা নড়ছে। এতে পুরো ওয়ার্ডসহ ঢামেকজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়ে যায়।

তবে চতুর ওয়ার্ডবয় বেলাল মর্গ অফিসের কর্মী আজিজের কাছ থেকে মৃত ঘোষণার কাগজ কেড়ে নিয়ে চিকিৎসকদের কাছে চলে যান।

খবর পেয়ে সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডে ছুটে যায় বাংলানিউজ।

ঘটনার সত্যতা জানতে চাইলে নাম জানাতে অপারগতা প্রকাশ করেন সংশ্লিষ্ট নারী চিকিৎসক বলেন, ‘আসলে আমরা যখন তাকে মৃত ঘোষণা করেছি, তখন তার হৃদকম্পন বা শারীরিক কোনো সচলতা ছিল না। ’

ওই নারী চিকিৎসকের কাছে বাংলানিউজ জানতে চায়, ‘মৃত ঘোষিত নারী দুর্ঘটনার শিকার নাকি অন্য কিছু। ’ জবাবে তিনি বলেন, ‘অপুষ্টির কারণে তার এ অবস্থা’।

এরপর রোগী এখনও বেঁচে আছে কিনা জানতে চাইলে ওই নারী চিকিৎসক বলেন, ‘অবশ্যই বেঁচে আছে’। কথাটি বলেই তিনি ওয়ার্ডবয় বেলালকে স্যালাইন দেওয়ার নির্দেশ দেন। তখন বাংলানিউজের উপস্থিতিতেই হাতে ক্যানোলা করে ওই নারীকে স্যালাইন দিতে থাকেন বেলাল।

ওই নারী সম্পর্কে জানতে চাইলে তার ভর্তি ফাইলে দেখা যায়, ‘প্রযত্নে (কেয়ার/অফ): পরিচালক’। কোন ‘পরিচালক’ প্রশ্ন করা হলে ওয়ার্ডবয় বেলাল জানান, ঢামেক পরিচালকের রেফারেন্সে তাকে ভর্তি করা হয়েছে এখানে।

এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট ইউনিটের সিএ (অ্যাসিন্ট্যান্ট রেজিস্ট্রার) মোহাম্মদ সোহেল বাংলানিউজকে বলেন, ‘এটা ভুল বোঝাবুঝি। বিষয়টি খতিয়ে দেখছি আমরা। রোগী এখন ভালো আছেন। ’

বাংলাদেশ সময়: ১৩৫২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৫, ২০১৪

** মর্গের লোক এসে দেখলো লাশ নড়ছে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।