ঢাকা: আমাদের হৃদপিণ্ড আমাদের বন্ধুও। এক বন্ধুর প্রতি রয়েছে অন্য বন্ধুর দায়িত্ব।
এসব সমস্যার সম্মুখীন হলে সেবন করতে হয় স্টাটিনের মতো ওষুধ যা হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমালেও রয়ে যায় পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া।

undefined
ইংল্যান্ডের স্বাস্থ্য বিষয়ক পত্রিকার সম্পাদকীয়তে বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, স্টাটিনের মধ্যেই যে হৃদরোগের সুরক্ষা রয়েছে তাই নয়, এটি ব্যক্তিকে অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপন ও তার আচরণে পরিবর্তন আনে।
তারা আরও জানান, ৮০ শতাংশ হৃদরোগই মূলত অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভাস ও শারীরিক পরিশ্রমের অভাবে দেখা দেয়। এসব লোকেরা সহজ উপায় হিসেবে স্টাটিন গ্রহণ করে। তবে অতিরিক্ত ওষুধ সেবনেরও একটা বিরূপ ফলাফল রয়েছে।
হৃদপিণ্ডকে সুরক্ষিত রাখতে স্টাটিন সেবনের চাইতে প্রচুর পরিমাণে বাদাম ও অলিভ অয়েল খাওয়া বেশি ফলদায়ক বলে জানিয়েছেন ডাক্তাররা।

undefined
কোলেস্ট্রলের নিয়ন্ত্রক ওষুধ স্টাটিন সেবন না করে যদি স্বাস্থসম্মত আহারে অভ্যস্ত হওয়া যায় তাহলে সেটাই উত্তম।
হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডাক্তার অসীম মলহোত্রা, আন্দ্রু এপস ও ক্লিনিক্যাল এপিডেমিওলজির অধ্যক্ষ এবং ইংল্যান্ডের জনস্বাস্থ্য অনুষদের ভাইস প্রেসিডেন্ট সাইমন কেপওয়েল গতবছর যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসে (এনএইচএস) একটি জরিপ চালান। এতে দেখা যায় ১০ জন বয়স্ক ব্যক্তির মধ্যে চারজনই হৃদরোগের ওষুধ সেবন করেন।
একটি প্রবন্ধে তারা বলেছেন, কোলেস্ট্রল কমানোর বা হৃদরোগ নির্মূলের ওষুধগুলো যতটা না রোগীদের জন্য উপযোগী তার চেয়ে বেশি ক্ষতিকারক। কারণ এতে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে।

undefined
নানা ধরনের বাদাম যেমন কাজুবাদাম, হ্যাজলনাট, পিক্যান, পাইন বাদাম, পেস্তাবাদাম ও আখরোটে রয়েছে উন্নত ফ্যাটজাতীয় উপাদান যা রক্তের ক্ষতিকর চর্বি কমাতে সাহায্য করে।
অন্যদিকে হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে প্রতিদিন একটি আপেল, একমুঠো বাদাম ও চার টেবিলচামচ বিশুদ্ধ অলিভ অয়েল খাওয়া যেতে পারে।
কারণ বাদামে রয়েছে ভিটামিন, মিনারেল, প্রোটিন, ফাইবার যা হৃদপিণ্ড সুরক্ষিত রাখে। এছাড়াও এটি শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রিত রাখে ও শরীরের পক্ষে ক্ষতিকারক এন্টি অক্সিডেন্ট শোষণ করে।

undefined
অন্যদিকে অলিভ অয়েলে রয়েছে ফ্যাটি এসিড যা শরীরে মেদ জমতে দেয়না ও করোনারি হৃদরোগ থেকে মুক্তি দেয়। আপেল রক্তে চর্বি জমতে দেয় না। ধমনিকে রাখে সুরক্ষিত ও রক্তনালীতে বিশুদ্ধ রক্ত সরবরাহ করে।
স্বাস্থ্যবান পুরুষদের মধ্যে ষাটোর্ধ্ব ও নারীদের মধ্যে ৬৫’র উপরে যাদের বয়স তাদের এই ওষুধ সেবন করতে দেখা যায়।
অন্যদিকে যারা স্থুলতায় ভুগছেন বা বংশগতভাবেই হৃদরোগের স্বীকার তাদের অনেক সময় কম বয়সেই হৃদরোগের ওষুধ খেতে দেখা যায়।

undefined
যাদের ৩০ শতাংশ হৃদরোগ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে আগে তাদের এসব ঔষধ সেবন করতে বলতেন ডাক্তার। কিন্তু ২০০৫ সাল থেকে ২০ শতাংশ ঝুঁকি দেখা গেলেই তারা এসব ওষুধ সেবনের পরামর্শ দিচ্ছেন।
এবং এই হার গতবছর আরও কমে দাঁড়িয়েছে ১০ শতাংশে। এতে দেখা গেছে, যাদের বয়স ৮৫ বছরের বেশি তারাও সেবন করছেন এসব ওষুধ।
অন্যদিকে যুক্তরাস্ট্রের বিশেষজ্ঞদের মতে, এসব ওষুধ মানুষকে মাখন ও চর্বিজাতীয় খাবারের দিকে ঠেলে দিতে পারে।
একটি গবেষণায় দেখা গেছে, যারা স্টাটিন সেবন করেন তারা ফ্যাট ও ক্যালরি জাতীয় খাবার বেশি খান। ফলে ওজন দ্রুত বেড়ে যায়।

undefined
তবে স্টাটিন হার্ট অ্যাটাকজনিত কারণে মৃত্যুর হার হ্রাস পেয়েছে বলে জানান মেডিক্যাল রয়েল কলেজ একাডেমির ক্লিনিক্যাল সহযোগী পরামর্শক মলহোত্রা।
তবে তারা জানিয়েছেন, নিয়মিত এই ওষুধ সেবনে হতে পারে পেশীতে ব্যথা। প্রায় সতেরো শতাংশ মানুষই এরকম দুর্ভোগে ভোগেন। এছাড়াও দশজনের মধ্যে একজন ভোগেন গলা ব্যথা, বমিভাব, হজমের সমস্যা, পেশী ও জয়েন্টের ব্যথায়। রক্তে বেড়ে যেতে পারে শর্করার মাত্রাও।
বাংলাদেশ সময়: ০৭৫০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২২, ২০১৫