রমজান মাস দিনের বেলা পানাহার থেকে বিরত থাকার মাস। এলাকার অবস্থান অনুসারে এ মাসে ১০ থেকে ২২ ঘণ্টা পর্যন্ত পানাহার থেকে বিরত থাকতে হয়।
আমাদের দেশে এ বছর পানাহার থেকে বিরত থাকার এ সময় ১৫ থেকে সোয়া ১৫ ঘণ্টা পর্যন্ত।
দীর্ঘ এ সময় পানাহার থেকে বিরত থাকতে গিয়ে কিছু শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়। এ সব সমস্যার মধ্যে রয়েছে- গ্যাস্ট্রিক, বদহজম, পেটে ব্যথা, খাওয়ার প্রতি অরূচি ইত্যাদি। বিশেষ কিছু নিয়মনীতি মেনে চললে এসব শারীরিক সমস্যা থেকে বাঁচা সম্ভব। সেই সঙ্গে সুস্থ থেকে রোজা পালন করা সম্ভব। খাদ্য ও পুষ্টি বিজ্ঞানের দৃষ্টিকোণ থেকে বিষয়গুলো তুলো ধরা হলো-
![](files/good_1_466857080.jpg)
সেহরিতে করণীয়:
ক. কাঁচা সবজি ও ফল খাওয়া বাদ: বিশেষ করে সেহরির সময় কাঁচা পেঁপে, কাঁচা আম, কাঁচা পেয়ারা খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। এসব ফল অ্যাসিড সমৃদ্ধ হওয়ায় সহজেই গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা সৃষ্টিতে সহায়তা করে।
খ. সালাদ কম অথবা না খাওয়া*: আমরা প্রায় সবাই খাবারের প্রতি অতিরিক্ত আকর্ষণ বাড়াতে খাবারের সঙ্গে সালাদ খেয়ে থাকি। এ সব সালাদ তৈরি হয় টমেটো, শশা, খিরা ইত্যাদি সবজি দিয়ে। সবজিতে শক্তিমাত্রা অন্যান্য খাবারের থেকে কম থাকে। খাবারের চাহিদা যদি এসব দিয়ে অনেকটা পূরণ হয়ে যায়, তাহলে সারাদিন চলার জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে।
গ. কম শাক-সবজি খাওয়া*: একই কারণে শাক-সবজি কম খেতে হবে। শাকসবজি খাবরের পরিমাণ বাড়ায়, কিন্তু শক্তিমান কম পরিমাণে রাখে।
ঘ. কমপক্ষে আধা ঘণ্টা পর ঘুমানো: সেহরি করার পর কমপক্ষে আধাঘণ্টা পর ঘুমাতে হবে। যাদের দিনের শুরুতে কাজ নেই, তারা ইচ্ছে করলে আরও একটু পরে ঘুমাতে পারেন। খাওয়ার পর সঙ্গে সঙ্গে ঘুমালে অর্থাৎ শরীরের নড়াচড়া বন্ধ হয়ে গেলে খাদ্য হজম হওয়া শুরুর সময়টি দীর্ঘায়িত হয়। এতে করে অতিরিক্ত গ্যাস্ট্রিক রস গলায় ও মুখে চলে এসে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। এছাড়া, শারীরিক নড়াচড়া না থাকার কারণে বদহজম দেখা দিতে পারে।
দিনের বেলা করণীয়:
ক. সকালের ঘুমের মাঝে বিরতি: সেহরি করার পর ঘুমানোর সময় দীর্ঘ হলে ঘুমের ১ থেকে দেড় ঘণ্টা পরপর বিরতি দিয়ে প্রসাব-পায়খানার কাজ সারতে হবে। শারীরিক সুস্থতার জন্য সঠিক সময়ে প্রসাব-পায়খানা করা জরুরি। বিশেষ করে সেহরির পর প্রসাব-পায়খানার চাপ নিয়ে ঘুমিয়ে থাকলে বদহজমের পাশাপাশি গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা খুব বেশি।
![](files/bad_1_525826383.jpg)
খ. বিকেলে না ঘুমানো: রোজা রাখা অবস্থায় বিকেলের ঘুম শরীরে গ্যাস্ট্রিক রসের মাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারে। বিশেষ করে শুরুর দিকের রোজাগুলোতে এ সমস্যা সৃষ্টি হয় বেশি।
ইফতার ও ইফতারের পর করণীয়:
ক. দুই পর্যায়ে খাওয়া: ইফতারের সময় কিছু খাবার এবং ইফতার থেকে দেড় থেকে দুই ঘণ্টা পর আর একবার খাবার খেতে হবে। ইফতারের শুরুতে চিনি ও লেবু সমৃদ্ধ শরবত খাওয়া যাবে। তবে লেবুর পরিমাণ কম রাখতে হবে। এরপর, পাকা বিভিন্ন ফল যেমন, পাকা আম, খেজুর, কলা খাওয়া যেতে পারে। পরে, মুড়ি, ছোলা, চানাচুরসহ অন্যান্য স্ন্যাকস জাতীয় খাবার খাওয়া যেতে পারে।
খ. অনেকেই ইফতারের খাবার একত্রিত করে মেখে খেতে পছন্দ করেন। এ সময় কম মরিচ ও পেঁয়াজ ব্যবহার করতে হবে। অধিক স্বাদের জন্য বেশি পরিমাণ মরিচ-পেঁয়াজ পেটের সমস্য বিশেষ করে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা সৃষ্টি করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
![](files/good_486330286.jpg)
গ. ইফতারের শুরুতে নয় অ্যাসিড সমৃদ্ধ ফল: অ্যাসিড সমৃদ্ধ ফল ইফতারের শুরুতে না খাওয়া উত্তম। বিশেষ করে, কাঁচা আম, আপেল, তেঁতুল, লেবু, বাতাবি লেবু, কামরাঙ্গা ইফতারের শুরুতে না খাওয়া ভালো। ইফতারের শেষ দিকে এসব ফল খেতে হবে। এতে করে শরীরে সৃষ্ট ফ্রি রেডিকেল (শরীরের কোষের বর্জ্য) কমে গিয়ে শরীর চাঙ্গা হবে।
ঘ. ভাজা এবং তেল-চর্বি সমৃদ্ধ খাবার বর্জন: অধিক ভাজা ও তেল সমৃদ্ধ খাবার বর্জন করতে হবে। এসব খাবার খালি পেটে গ্যাস্ট্রিক সমস্যা বাড়িয়ে তোলে। দেখা দিতে পারে বদহজম ও পেটে ব্যথা।
ঙ. খাবারে কম মশলা: কম মশলাযুক্ত খাবার খেতে হবে। অধিক মশলাযুক্ত খাবার পেটে গ্যাস্ট্রিকের কারণে সৃষ্ট ক্ষত বাড়িয়ে তোলে এবং যন্ত্রণা বাড়িয়ে দেয়।
চ. ধীরে খান, কম খান: ইফতারের সময় খাবার ধীরে ধীরে খেতে হবে। এতে করে শরীর দীর্ঘ সময় উপবাসের পর স্থিতিশীল অবস্থায় আসবে। গ্যাস্ট্রিক রসসহ হজমে সহায়ক অন্যান্য উপাদান শরীর থেকে ধীরে ধীরে নিঃসৃত হবে। এতে করে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা কম হবে।
![](files/bad_2_281824403.jpg)
ছ. খাওয়ার মাঝে পানি পান নয়: ইফতারে খাওয়ার মাঝে পানি পান থেকে বিরত থাকতে হবে। এতে হজমে সহায়ক উপাদান সঠিকভাবে নিঃসৃত হবে। খাওয়ার মাঝে পানি পান করলে সহায়ক উপাদান নিঃস্বরণে সমস্যা সৃষ্টি হয়ে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
জ. ইফতারে চা-কফিতে না: ইফতারে খালি পেটে চা-কফি খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। চা-কফি পেটে গ্যাস্ট্রিকের ব্যাথা বাড়িয়ে তুলতে পারে।
ঝ. দেড় থেকে দুই ঘণ্টা পর প্রতিদিনের অভ্যাস অনুযায়ী খাবার খাওয়া যাবে। এ সময় ভাত, ডাল, মাছ, মাংস, সবজিসহ অন্যান্য খাবার খাওয়া যাবে। তবে, পরিমাণের দিকে খেয়াল রাখতে হবে, যেন স্বাভাবিকের থেকে বেশি না হয়।
*: স্বাভাবিক ওজনের লোকজনের জন্য প্রযোজ্য। স্বাভাবিকের থেকে অতিরিক্ত ওজনের লোকজন এসব খাবার খেয়ে ওজন কমাতে পারেন।
মনিরুজ্জামান, সাবেক ছাত্র,ফলিত পুষ্টি ও খাদ্য প্রযুক্তি বিভাগ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া
** যেসব কারণে রোজা ভাঙ্গে না
বাংলাদেশ সময়: ১৮০৮ ঘণ্টা, জুন ২০, ২০১৫