ঢাকা, সোমবার, ১৭ ভাদ্র ১৪৩১, ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৭ সফর ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

চিকিৎসার নামে অপচিকিৎসা-৫

অনৈতিক কর্মকাণ্ডও চলে ক্লিনিকপাড়ায়

এম.আব্দুল্লাহ আল মামুন খান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৫১ ঘণ্টা, জুলাই ৮, ২০১৫
অনৈতিক কর্মকাণ্ডও চলে ক্লিনিকপাড়ায় ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

শিক্ষা ও সংস্কৃতির শহর ময়মনসিংহে এখন চিকিৎসাসেবা প্রতিষ্ঠানের ব্যাপক দাপট। শহরের চরপাড়া, ব্রাহ্মপল্লী, ভাটিকাশর ও বাঘমারা এলাকায় গত কয়েক বছরে গড়ে উঠেছে নামসর্বস্ব ও নিম্নমানের অসংখ্য ক্লিনিক আর ডায়াগনস্টিক সেন্টার।

যেগুলোর অধিকাংশেই স্থায়ী চিকিৎসক, দক্ষ টেকনিশিয়ান, নার্স, আয়া বা অন্যান্য স্টাফ না থাকায় চিকিৎসার নামে চলছে অপচিকিৎসা। হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে রোগী ও তাদের স্বজনদের। কিন্তু ঠিকই প্রতিনিয়তই কাড়ি কাড়ি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে ক্লিনিকওয়ালারা।

সম্প্রতি শহরের ক্লিনিকপাড়ার বেপরোয়া এই চিকিৎসা বাণিজ্য ও অনিয়মের নানা দিক অনুসন্ধান করে ধারাবাহিক প্রতিবেদন তৈরি করেছেন বাংলানিউজের স্টাফ করেসপন্ডেন্ট এম আব্দুল্লাহ আল মামুন খান। পড়ুন পঞ্চম পর্ব
   
ময়মনসিংহ: ময়মনসিংহ শহরে ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠা ক্লিনিক-প্যাথলজি সেন্টারগুলোর অভ্যন্তরে চলে অপচিকিৎসা থেকে শুরু করে সব ধরণের অনৈতিক কর্মকাণ্ড। একশ্রেণীর ক্লিনিক-প্যাথলজি স্বাস্থ্যসেবায় সুবিধা করতে না পেরে জড়িয়ে পড়েছে নানা অপকর্মে।

মাদক বানিজ্য, জুয়া খেলা, দেহ ব্যবসাসহ নিরীহ রোগীর অভিভাবকদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ, প্রতারণা চলছে শহরের ক্লিনিকপাড়ার একাংশে। প্রভাবশালী মহল এক্ষেত্রে অনিয়ম, দুর্নীতিতে জড়িত মালিকদের শেল্টার দেয়। যেসব প্রতিষ্ঠানে অপকর্ম চলে সেখানে রয়েছে সন্ত্রাসী বাহিনী।

সূত্র জানায়, চরপাড়া এলাকার কয়েকটি ক্লিনিক-বেসরকারি হাসপাতালের সঙ্গে রয়েছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার বিশেষ আঁতাত। গ্রামগঞ্জ থেকে আসা ছেলে-মেয়েদের দিয়ে অসামাজিক কার্যকলাপ চালিয়ে আর্থিক সুবিধা নেয়ার ঘটনায় কয়েকটি প্রতিষ্ঠান বিতর্কিত হয়ে আছে।

সূত্রমতে, শহরের চরপাড়া ও ব্রাক্ষপল্লী এলাকার যেসব ক্লিনিক-ডায়াগনোস্টিক সেন্টারে রোগীদের আনাগোনা কম সেগুলোতেই চলে অপকর্ম। হাসপাতালের সামনের কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে রয়েছে স্থানীয় মাদক ব্যবসায়ীদের যোগসাজস।

ময়মনসিংহ শহরের চরপাড়া সংলগ্ন ব্রাক্ষপল্লী পুরোহিতপাড়ার মাদকজোন সম্প্রতি পুলিশি হানায় ভেঙে গেলে মাদক সম্রাটরা চরপাড়া ক্লিনিকপাড়ার পেছনে মাদক ব্যবসা জমিয়ে তোলে। কয়েকটি কেন্দ্রের বিরুদ্ধে রয়েছে হেরোইন, গাজা, ফেনসিডিল, ইয়াবা বিক্রিতে জড়িত থাকার অভিযোগ।

কিছুদিন আগে মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর অভিযান চালিয়ে জনৈক ডাক্তারকে ফেনসিডিলের চালানসহ গ্রেফতার করে। পরে রাজনৈতিক প্রভাবশালী মহলের মধ্যস্থতায় মোটা অংকের টাকায় আপসরফা হয়। এর আগে ফেনসিডিলের চোরাচালান নেটওয়ার্ক একটি ক্লিনিকের নাম আলোচনায় আসে।

স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, চিকিৎসা সেবার নামে চরপাড়ার কয়েকটি বেসরকারি হাসপাতালের অভ্যন্তরে দেহব্যবসার অভিযোগ রয়েছে। কতিপয় হাসপাতালে একশ্রেণীর নারীদের নাইট ডিউটির নামে রেখে তাদের দিয়ে অনৈতিক কর্মকাণ্ড চালানো হয়। এ ধরনের ঘটনা প্রকাশ পাওয়ার পর মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে স্থানীয় প্রভাবশালীরাই তা ধামাচাপা দিয়ে দেয়।

শহরের চরপাড়া এলাকার স্থানীয় দিবারাত্রি ক্লিনিক ও ব্রাক্ষপল্লী এলাকার কয়েকটি ক্লিনিকে এসব অনৈতিক কার্যকলাপ হচ্ছে বলে গুঞ্জণ রয়েছে। এসব ক্লিনিকের সার্বিক কার্যক্রম রহস্যঘেরা হওয়ায় স্থানীয় বাসিন্দাদের মাঝে সন্দেহ-সংশয় রয়েছে।  

নাম প্রকাশে আপত্তি জানিয়ে এক ক্লিনিক মালিক বলেন, আগে দেহ ব্যবসা হতো আবাসিক হোটেল ও বিভিন্ন বাসা বাড়িতে। কিন্তু পুলিশি ঝক্কি-ঝামেলার কারণে এসব জায়গায় সেই ব্যবসা নিরাপদ না। এ কারণে নামসর্বস্ব ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার খুলে নতুন আঙ্গিকে চলছে দেহ ব্যবসা।

কোন কোন ক্ষেত্রে এসব ক্লিনিকে কক্ষ ভাড়া দেয়া হয় ডেট করার জন্য। আর এ থেকে ক্লিনিক মালিক হাতিয়ে নেন টাকা। তবে বুঝার উপায় নেই এসব ক্লিনিকে এমন অনৈতিক ব্যবসা হচ্ছে। পুলিশ সন্দেহের চোখে না দেখায় তারা রাখ-ঢাকের ধার না ধেরে চালিয়ে যাচ্ছে এ ব্যবসা। তবে এ ব্যাপারে প্রতিবেশী ও সচেতন মহলের মধ্যে ক্ষোভ রয়েছে।

ময়মনসিংহ জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইমারত হোসেন গাজী বলেন, আমাদের কাছে ক্লিনিকের আড়ালে দেহ ব্যবসা সংক্রান্ত কোন তথ্য নেই। তবে খোঁজখবর নিয়ে দেখা হবে।

ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কর্মরত এক গোয়েন্দা সদস্য অবশ্য ক্লিনিকপাড়ার বেশ কয়েকটি ক্লিনিকে নারী কেলেঙ্কারীর খবরের সত্যতা স্বীকার করেন।

একই রকমের তথ্য জানিয়ে মানব কল্যাণ সমিতি (মাকস) সাধারণ সম্পাদক মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, ক্লিনিকের আড়ালে অনৈতিক কাজ চলে এমন ক্লিনিক সব মিলিয়ে ৮ থেকে ১০টি হবে। অনেকেই আমাদের কাছে এমন অভিযোগ করেন।

তবে তিনি এসব ক্লিনিকের নাম-পরিচয় বলতে রাজি হননি।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ প্রাইভেট ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের ময়মনসিংহ জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ডা: এ.কে.এম.ওয়ালিউল্লাহ বলেন, ক্লিনিকপাড়ায় অনেক অনৈতিক কাজই হয়, এটা অবিশ্বাস করি না। কিন্তু অদৃশ্য কারণে এসব ক্লিনিক মালিকরা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যায়। আসলে এদের কান নেই, এ কারণে কান ধরারও জায়গা নাই।

যোগাযোগ করা হলে ময়মনসিংহ জেলা সিভিল সার্জন ডা: মোস্তফা কামাল বলেন, এ ধরনের অভিযোগ আমরাও শুনি। কিন্তু হাতেনাতে না ধরতে পারলে তো ব্যবস্থা নেয়া যায় না।

বাংলাদেশ সময়: ০৭৫৫ ঘণ্টা, জুলাই ০৮, ২০১৫
জেডএম

** সড়কজুড়ে রোগী ঠকানো বাণিজ্য!
** হাসপাতালের সামনেই ক্লিনিক-প্যাথলজির জঞ্জাল
** ৪ শতাধিক পেশাদার দালাল, আতঙ্ক ‘রোগী ধরা’
** পিয়ন ও ওটি বয় থেকে ক্লিনিক মালিক!


বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।