ঢাকা, শুক্রবার, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

বিনামূল্যে চিকিৎসা, তবুও আসে না রোগী

একরামুল কবীর, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯২৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২০, ২০১৬
বিনামূল্যে চিকিৎসা, তবুও আসে না রোগী ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

গোপালগঞ্জ: আছে চিকিৎসা সেবা প্রদানের সব ধরণের উপকরণ ও ব্যবস্থা। এমনকি, চিকিৎসা সেবা দেওয়া হয় বিনামূল্যে।

তবুও রোগী পাচ্ছে না গোপালগঞ্জের ১৫ শয্যাবিশিষ্ট মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র।

সবরকম সুবিধা থাকা সত্ত্বেও চরম অপব্যবস্থানার কারণেই মূলত এ হাসপাতাল থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে রোগীরা। ফলে দিনকে দিন কমে যাচ্ছে সেবা নিতে আসা গর্ভবর্তী, প্রসূতি ও কিশোরীদের সংখ্যা।

এতে করে মা ও শিশুর স্বাস্থ্যসেবার জন্য জেলার অন্যতম ভরসার এ কেন্দ্রটি অনেকটাই হারিয়ে ফেলেছে সুনাম ও ঐতিহ্য।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, এ কেন্দ্র থেকে গর্ভবতী ও প্রসূতি মায়েদের বিনামূল্যে সিজারিয়ান অপারেশন ও ওষুধ দেওয়ার নিয়ম রয়েছে। কিন্তু আদতে এর কোনটাই পায় না এখানে আসা মা ও শিশুরা।  

এর পেছনে মাঝখানে দীর্ঘ তিন বছর ধরে চিকিৎসক না থাকাকে দায়ী করেছেন সংশ্লিষ্টরা। এছাড়া কেন্দ্রের একমাত্র অ্যাম্বুলেন্সটি দীর্ঘদিন ধরে অকেজো হয়ে পড়ে আছে। সবমিলিয়ে দীর্ঘসময় হ-য-ব-র-ল অবস্থার কারণে রোগীর আস্থা অর্জনে ব্যর্থতা আর কাটিয়ে উঠতে পারেনি কেন্দ্রটি। এছাড়াও রয়েছে নানা অব্যবস্থাপনা।

বর্তমানে এখানে ডা. উদ্ধব চন্দ্র পান্ডে মেডিকেল অফিসার (ক্লিনিক) ও ডা. বিএম মনিরুজ্জামান (এমসিএইচপি) সদর হিসেবে দায়িত্বে রয়েছেন।

সম্প্রতি সরেজমিনে কেন্দ্রটি ঘুরে দেখা গেলো, কেন্দ্রটিতে ১৫টি বেডের কথা থাকলেও রয়েছে মাত্র ৬টি বেড। এর মধ্যে ১নং ওয়ার্ডে ৪টি ও লেবার রুমে ২টি। ২নং ওয়ার্ডে কোনো বেড নেই।

এছাড়া দীর্ঘদিনের পুরাতন ভবন হওয়ায় কেন্দ্রটির নিচতলার ছাদের পলেস্তরা জায়গায়-জায়গায় খঁসে পড়ছে। অপারেশন থিয়েটারের টাইলস উঠে গেছে। বিভিন্ন জানালায় নেই কাঁচ।   দরজাগুলোও অনেকটাই নষ্ট হয়ে গেছে। কেন্দ্রের বাথরুমগুলোও ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। তবে এখানকার সব প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সচল রয়েছে।

অভিযোগ রয়েছে, এ কেন্দ্রের কয়েকজন কর্মচারী ঠিকমতো অফিসে আসেন না। রোগী আসলে তাদের ফোন করে আনতে হয় বলেও জানালেন মেডিকেল অফিসার ডা. উদ্ধব চন্দ্র পান্ডে।

কেন্দ্র সংশ্লিষ্টরা জানান, এখানে সেবা দেওয়ার মতো পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা রয়েছে। কিন্তু কেন্দ্রে কর্মরত চিকিৎসকদের নিজস্ব ক্লিনিক ও হাসপাতাল রয়েছে। তাই এখানে তেমন সময় দেন না তারা। এ সুযোগে কর্মচারীরাও ঠিকমতো কাজ করেন না।

সূত্র জানায়, স্বাধীনতার পর পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের অধীনে গোপালগঞ্জ শহরের নবীনবাগ এলাকায় মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রটি স্থাপিত হয়। এখানে রয়েছে একটি অত্যাধুনিক অপারেশন থিয়েটার, লেবার রুমসহ যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা। এ কেন্দ্র থেকে প্রসূতি মায়েদের স্বাভাবিক প্রসব, সিজারিয়ান অপারেশন, প্রসব পূর্ব ও প্রসবোত্তর সেবা, জরুরি প্রসূতিসেবা,  টিউবেকটমি (লাইগেশন), ছুরিবিহীন ভ্যাসেকটমি স্থায়ী পদ্ধতি ও খাবার বড়ি, কনডম, ইনজেকশন, ইমপ্ল্যান্ট, নরপ্লান্ট, কপারটি সেবা প্রদানের সুযোগ চালু করা হয়।

কিন্তু ২০১২ সালে থেকে ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত এ কেন্দ্রটিতে চিকিৎসক না থাকায় সিজারিয়ান অপারেশন, পরিবার পরিকল্পনার স্থায়ী পদ্ধতিসহ বিভিন্ন কার্যক্রম কার্যত বন্ধ থাকে। তখন থেকে গর্ভবর্তী ও প্রসূতি মা, কিশোরী ও শিশুরা ধীরে ধীরে এ কেন্দ্রে আসা বন্ধ করেন দেয়। ২০১৫ সালে ফেব্রুয়ারির শেষে চিকিৎসক পদায়ন করা হলেও আর প্রাণ ফিরে পায়নি মাও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রটি।

জানা যায়, ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত মাত্র ২১ জন গর্ভবর্তী মায়ের সিজারিয়ান অপারেশন হয়েছে এখানে। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে মাত্র ২ জন ও ফেব্রুয়ারি মাসের ৬ তারিখ পর্যন্ত ১ জন গর্ভবতী মায়ের সিজারিয়ান অপারেশন হয়েছে।

এ হার অত্যন্ত হতাশাজনক বলে জানালেন কেন্দ্রের দায়িত্বরত চিকিৎসক উদ্ধব চন্দ্র পান্ডে নিজেই।

তিনি বলেন, দীর্ঘদিন চিকিৎসক না থাকায় ও একমাত্র অ্যাম্বুলেন্সটি দীর্ঘদিন নষ্ট হয়ে পড়ে থাকায় এখানে রোগীরা তেমন আসেন না। এ সুযোগে কিছুসংখ্যক  কর্মচারীও ঠিকমতো অফিসে আসেন না। এ কারণে এক কর্মচারীকে  শোকজ ও অন্যদের মৌখিকভাবে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে।

মাঠ পর্যায়ের পরিবার পরিকল্পনা কর্মীদের মাধ্যমে প্রচার-প্রচারণা চলাতে পারলে রোগীর সংখ্যা বাড়তে পারে বলে তিনি মনে করেন।

এ কেন্দ্রে মা, শিশু ও কিশোরীদের সব সেবার ব্যবস্থা রয়েছে জানিয়ে তিনি এ সেবা নিতে গর্ভবতী ও প্রসূতি মা, কিশোরী ও ৫ বছরের কম বয়সী শিশুদের বিনামূল্যে সেবা নিতে আসার আহ্বান জানান।

বাংলাদেশ সময়: ০৯১৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২০, ২০১৬
এসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।