রাজশাহী: ‘এভিয়েন ইনফ্লুয়েঞ্জা’ বা বার্ড-ফ্লু যেন কোনোভাবেই মানবদেহে ছড়িয়ে পড়তে না পারে সেজন্য এবার সংশ্লিষ্ট সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে। রাজশাহীতে বার্ড-ফ্লু ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (রাসিক) পক্ষ থেকে জোর তৎপরতা শুরু হয়েছে।
এ ব্যাপারে করণীয় নির্ধারণ করতে বুধবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) সংশ্লিষ্টদের নিয়ে সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত হযেছে। দুপুরে নগর ভবনের সরিৎ দত্ত গুপ্ত সভাকক্ষে ওই সভা অনুষ্ঠিত হয়।
রাসিকের দায়িত্বপ্রাপ্ত মেয়র নিযাম উল আযীমের সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য দেন প্রাণিসম্পদ দফতরের সহকারী পরিচালক কল্যাণ কুমার ফৌজদার, জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা নিজাম উদ্দিন, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. গাজী সাইফুল আলম, রাসিকের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. এফএএম আঞ্জুমান আরা বেগম, সিভিল সার্জন দফতরের মেডিকেল অফিসার ডা. ফরিদ হোসেন, পরিচালক স্বাস্থ্য রাজশাহী বিভাগের মেডিকেল অফিসার ডা. রোজি আরা খাতুন, রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের ৫নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর কামরুজ্জামান, রাসিকের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দা জেবিননিছা সুলতানা, প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা শেখ মোঃ মামুন প্রমুখ।
সভায় জানানো হয়, সম্প্রতি বার্ড-ফ্লু’র কারণে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল চত্বরে কাকের মৃত্যু হয়েছে। বিষয়টি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে নিশ্চিত হওয়া গেছে। তবে তা নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। সতর্কতা অবলম্বন করে তা প্রতিরোধ করা সম্ভব।
সভায় বক্তারা বলেন, জবাই করা মুরগির উচ্ছিষ্ট থেকে কাকের মধ্যে এ ভাইরাস সংক্রমিত হয়ে থাকতে পারে। তবে আক্রান্ত মুরগিগুলো রাজশাহীর পাশের কোনো জেলা থেকেও আসতে পারে। বর্তমানে তা খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে। এ নিয়ে নগর সংস্থানে উচ্ছিষ্ট ব্যবস্থাপনা উন্নয়নে গুরুত্বারোপ করে পোল্ট্রি ফার্ম, মুরগি বিক্রেতাসহ সংশ্লিষ্টদের সতর্ক হবারও পরামর্শ দেওয়া হয়।
বিষয়টির প্রতি গুরুত্বারোপ করে দায়িত্বপ্রাপ্ত মেয়র বলেন, মহানগরীর উচ্ছিষ্ট ব্যবস্থাপনায় যথেষ্ট গুরুত্ব দিচ্ছে রাসিক। আর বিশেষ গুরুত্ব পাচ্ছে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম। এ নিয়ে গাফিলতি পেলে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে রাসিক।
তিনি আরও বলেন, বার্ড-ফ্লু’র অস্তিত্বের উৎস খুঁজতে প্রাণিসম্পদ দফতরকে জানানো হয়েছে। তারা প্রতিটি পোল্ট্রি ফার্ম থেকে নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছেন।
‘এভিয়েন ইনফ্লুয়েঞ্জা’ প্রতিরোধে সবার সহযোগিতাও চান রাসিকের দায়িত্বপ্রাপ্ত মেয়র।
চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে রাজশাহীতে শতাধিক কাকের মৃত্যু হয়। এর মধ্যে বেশি সংখ্যক কাক মারা গেছে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল চত্বরে।
এছাড়া মহানগরীর শালবাগান, উপশহর ও সাহেববাজার এলাকার রাস্তার ধারে বেশ কিছু কাক মরেছে। এ নিয়ে আতঙ্ক ছড়ায় শহর জুড়ে। পরে বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের পরীক্ষায় প্রমাণিত হয়, এসব কাক মরছে এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জায় বা বার্ড-ফ্লু ভাইরাসে।
বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর গত ১৮ ফেব্রুয়ারি প্রণিসম্পদ অধিদফতরের রোগতত্ত্ব-রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) ১২ সদস্যেরর তদন্ত কমিটি রাজশাহীতে যান।
তারা কাকের খাদ্যের উৎস পরিদর্শন করে সিটি করপোরেশনের কর্তৃপক্ষকে উচ্ছিষ্ট ব্যবস্থাপনা উন্নয়নের সুপারিশ করেন। এজন্য পরবর্তী করণীয় নির্ধারণে সিভিল সার্জন, প্রাণিসম্পদ অধিদফতরসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে নিয়ে এ সমন্বয় সভা ডাকেন রাসিকের দায়িত্বপ্রাপ্ত মেয়র।
এর আগে সর্বশেষ ২০১১ সালের ২ ফেব্রুয়ারি রাজশাহীর পোল্ট্রি খামারে বার্ড-ফ্লু দেখা দিয়েছিল। কিন্তু কাকের মধ্যে এতো ব্যাপকহারে তা কখনো দেখা যায়নি। ওই সময় তাৎক্ষণিক ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এরপর আর ভাইরাসজনিত এ রোগের অস্তিত্ব মেলেনি।
বাংলাদেশ সময়: ১৭০৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০১৬
এসএস/এএসআর