ঢাকা: রোগীকে প্রভু ভেবে চিকিৎসা দেয়ার জন্য চিকিৎসকদের প্রতি আহ্বান জানালেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী মো: নাসিম।
বুধবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে রাজধানীর মহাখালীর রাওয়া কনভেনশন হলে ‘ইউনিভার্সেল কার্ডিয়াক হাসপাতাল’ ( সাবেক আয়েশা মেমোরিয়াল কার্ডিয়াক হাসপাতাল) এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
মন্ত্রী বলেন, ‘সুন্দর ভবন, সুন্দর যন্ত্রপাতি বসলো, কিন্তু ভাল চিকিৎসকও থাকতে হবে, রোগীকে ভালো চিকিৎসা দিতে হবে। প্রভু, ঈশ্বর হিসেবে দেখে রোগীর চিকিৎসা করতে হবে। এর ফলেই রোগী রোগমুক্তি লাভ করবে।
নাসিম বলেন, জনগণকে স্বাস্থ্যসেবা দিতে সরকারি হাসপাতালের পাশাপাশি বেসরকারি হাসপাতালগুলোকেও সরকার উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ প্রতিবছর নতুন নতুন মেডিকেল হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে। জেলা ও থানা পর্যায়ের হাসপাতালগুলোর রোগীদের আসন বাড়ানো হচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘আমাদের অনেক কাজ এখনো বাকি রয়েছে। বর্তমানে হৃদরোগ আমাদের দেশে একটি কঠিন রোগ হিসেবে দেখা দিয়েছে। এক সময় দেশের হৃদরোগের চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে যেতে হতো, এখন ঢাকায় এই রোগের চিকিৎসা হচ্ছে। পারদর্শী হৃদরোগ চিকিৎসক দেশে তৈরি হয়েছে। ’ যোগ করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের চিকিৎসকদের অনেক চাপের মধ্যে কাজ করতে হয়। দৈনিক ১০০/২০০ রোগীর চিকিৎসা দিয়ে থাকেন তারা। উন্নত বিশ্বে একজন চিকিৎসক দৈনিক ১৫/২০ জন রোগীকে স্বাস্থ্য সেবা দিয়ে থাকেন। এত চাপে থেকে চিকিৎসকদের সেবা প্রদানের উদহারণ পৃথিবীর আর কোথাও পাওয়া যাবে না। ’
দেশের চিকিৎসা সেবার সফলতা তুলে ধরতে গিয়ে মন্ত্রী বলেন, গুলিবিদ্ধ শিশুকে বাঁচিয়ে তুলেছে দেশের চিকিৎসকরা, বিরল রোগে আক্রান্ত বৃক্ষমানবের চিকিৎসা চলছে, তার অপারেশন হয়েছে, সে এখন ভাল আছে। প্রধানমন্ত্রী চ্যালেঞ্জ নিয়েছেন যেভাবেই হোক এই রোগীকে বাঁচাতে হবে।
তবে রোগীদের জিম্মি করে সেবার নামে বেসরকারি হাসপাতালগুলোর বাণিজ্যের সমালোচনা করে মন্ত্রী বলেন, ‘হাসপাতালে শিশুর লাশ রেখে অর্থ আদায় হয়েছে, এটা হতে পারে না। এতে সুনাম আসে না। আমি বলবো হাসপতাল করুন, বিনিয়োগ করুন। কিন্তু মানুষের স্বাস্থ্যসেবাকে আগে দেখতে হবে।
‘ইউনিভার্সেল কার্ডিয়াক হাসপাতাল’ এর হাসপাতালের নাম যেন সার্থক হয়, সার্বজনীন চিকিৎসা সেখানে যেন দেওয়া হয় সেই বিষয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে আহ্বান জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি বক্তব্যে স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, বাংলাদেশে স্বাস্থ্য সেবার অনেক অগ্রগতি হয়েছে। সরকারি হাসপাতালের পাশাপাশি বেসরকারি খাতেরও স্বাস্থ্য সেবা এগিয়ে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, আমাদের দেশে কার্ডিয়াক রোগী বেশি। বিশ্বে এই সমস্যা এখন বেড়ে গেছে। জনগণকে জানাতে হবে ভালো চিকিৎসা কোথায় পাওয়া যায়। একইসাথে এই সমস্যা কিভাবে এড়ানো যায় সেই বিষয়েও মানুষকে জানাতে হবে।
স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘সরকারি ও প্রাইভেট মিলে এখন সারাদেশের হাসপাতালে রোগীদের চিকিৎসার জন্য এক লাখ আসন রয়েছে। তারপরও আমাদের জনবলের অভাব রয়েছে। টেকনিক্যাল ব্যক্তিদের এখনো আমাদের অভাব রয়েছে। এই বিষয়ের প্রশিক্ষণ নিয়ে প্রাইভেট হাসপাতাল অবদান রাখতে পারে। ’
ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হসপিটালের চেয়ারম্যান প্রীতি চক্রবর্তীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন স্বাধীনতা চিকিৎসা পরিষদের সভাপতি ও বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব অধ্যাপক ডা. এম ইকবাল আর্সলাম প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. আশীষ কুমার চক্রবর্তী। আরও বক্তব্য রাখেন হাসপাতালের চিফ কার্ডিয়াক সার্জন অধ্যাপক ডা. নাসির উদ্দিন আহমেদ, চিফ কার্ডিওলজিস্ট অধ্যাপক ডা. খন্দকার কামরুল ইসলাম প্রমুখ।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৩৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০১৬
টিএইচ/আরআই