ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স

নিকলীতে জনসংখ্যা দেড়লাখ, চিকিৎসক ২ জন

টিটু দাস, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮১১ ঘণ্টা, মার্চ ১৩, ২০১৬
নিকলীতে জনসংখ্যা দেড়লাখ, চিকিৎসক ২ জন ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

কিশোরগঞ্জ: কিশোরগঞ্জের হাওর উপজেলা নিকলী। জনসংখ্যা এক লাখ ৩৩ হাজার ৭২৯ জন।

এ বিপুলসংখ্যক মানুষের চিকিৎসা সেবার জন্য ‘সবেধন নীলমণি’ হিসেবে রয়েছে নিকলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। তবে সেখানে চিকিৎসক রয়েছেন মাত্র দুইজন।

ফলে লোকবল সংকটে ও রোগীদের চাপে হাসপাতালটি নিজেই যেন রোগী হয়ে উঠছে দিন দিন। এতে করে কোনোরকমে খুঁড়িয়ে চলছে সাধারণ ও গরিব মানুষের ভরসার একমাত্র আশ্রয় ৩১ শয্যার এ হাসপাতাল।

অবশ্য উপজেলায় কয়েকটি বেসরকারি ক্লিনিক ও হাসপাতাল রয়েছে। তবে সেখানে সেবার মান নিয়ে রয়েছে প্রশ্ন। সেইসঙ্গে আর্থিক সামর্থ্যের বিষয়ও।

২৯ ফেব্রুয়ারি সরেজমিনে নিকলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ঘুরে ও খোঁজ নিয়ে জানা যায়, হাসপাতালটিতে ১৬ জন চিকিৎসকের পদ রয়েছে। ছিলেন মাত্র চারজন।

এদের মধ্যে ২৪ ফেব্রুয়ারি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আবদুল মজিদ ভূঁইয়া পদোন্নতি পেয়ে অন্যত্র চলে গেছেন। অপরজন আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. সারোয়ার জাহান গত ২৮ ফেব্রুয়ারি উচ্চতর ডিগ্রির জন্য ঢাকায় অবস্থান করছেন। ফলে বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসক হিসেবে রয়েছেন দুইজন।

একই অবস্থা নার্সের ক্ষেত্রেও। নয়টি পদের বিপরীতে এখানে নার্স রয়েছে তিনজন। এছাড়া এমএলএসএস তিনটি পদের মধ্যে একটি খালি, ওয়ার্ড বয় তিনটি পদের মধ্যে একটি খালি ও মালির পদটি খালি রয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, ২০০৮ সালের ডিসেম্বর মাস থেকে স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ নেই হাসপাতালে। এতে গত আট বছর ধরে বন্ধ রয়েছে জরুরি প্রসূতিসেবা (ইওসি) কার্যক্রম।

একইভাবে গত পাঁচ বছর ধরে একমাত্র এক্সরে মেশিনটি বিকল হয়ে পড়ে আছে, নেই টেকনিশিয়ানও। ফলে হাসপাতাল হলেও এখানে রক্ত ও প্রসাব পরীক্ষার  কোনো ব্যবস্থা নেই।

এছাড়া দীর্ঘদিন ধরে জেনারেটর নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। ফলে বিদ্যুৎ না থাকলে সৌরবিদ্যুতের আলোতে চালাতে হয় সেবা কার্যক্রম, তবে এতেও রয়েছে অনিশ্চয়তা।

হাসপাতালের পুরুষ ওয়ার্ড ও মহিলা ওয়ার্ড ঘুরে দেখা যায়, মহিলা ওয়ার্ডে বেড রয়েছে ১৫টি। এরমধ্যে চারটি বেডে শিশু সন্তানকে ভর্তি করিয়ে আছেন তাদের মায়েরা। অপরদিকে পুরুষ ওয়ার্ডে বেড রয়েছে ১৬টি। ভর্তি আছেন কেবল সেলিম (৩৫) নামে একজন।

বর্তমানে কর্মরত রয়েছেন মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. সাইফুল ইসলাম ও সহকারী সার্জন ডা. আব্দুল আল শাফী। ভর্তি থাকা রোগীর দেখভাল ও বহির্বিভাগে সেবা নিতে আসা রোগীদের চাপে ঠিকমতো সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের।

কথা হয় সেবা নিতে আসা হাসশুভা রানী দাস (৩৮), আমেনা বেগম (৪২) ও বকুলা আক্তারের (৩৬) সঙ্গে।

তারা অভিযোগ করেন, এ হাসপাতাল সরকার কেন রাখছে বুঝি না? এখানে ডাক্তার নাই, নার্স নাই। সরকার যদি আমাদের না দেখে আমরা কোথায় যাব?

হাসপাতালের অব্যস্থাপনা ও সমস্যার কথা স্বীকার করলেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার (ভারপ্রাপ্ত) দায়িত্ব পালনকারী ডা. আব্দুল আল শাফী।

তিনি বাংলানিউজকে বলেন, দুইজন চিকিৎসক দিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স চলে না। প্রতিদিন প্রায় ৪০০ মতো রোগী হয়। আমরা দুইজন এতো মানুষের সেবা দিতে পারি না।

তিনি জানান, লোকবল সংকটের কারণেই মূলত বিভিন্ন সেবা ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা বন্ধ রাখতে হচ্ছে।

এমনকি, নিজেরা যাতায়াতের জন্য তাদের কোনো যানবাহনের ব্যবস্থাও নেই বলে জানান তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ০৭১৩ ঘণ্টা, মার্চ ১৩, ২০১৬
এসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।