ঢাকা: কর্নিয়াজনিত অন্ধত্ব দূর করতে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে বৃহৎ কর্মসূচির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। নিজেদের খরচেই বাংলাদেশের কর্নিয়া সার্জনদের কারিগরি সহায়তা ও প্রশিক্ষণ দিতে এসেছে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের চক্ষু বিশেষজ্ঞ দল।
বুধবার (৩০ মার্চ) থেকে শনিবার (০২ এপ্রিল) পর্যন্ত চলবে এ সহযোগিতা কার্যক্রম।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতাল, সন্ধানী চক্ষু হাসপাতাল, জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট হাসপাতাল এবং ইসলামিয়া চক্ষু হাসপাতালে কর্নিয়া সার্জনদের প্রশিক্ষণ দেবেন দুই দেশের বিশেষজ্ঞরা।
মঙ্গলবার (২৯ মার্চ) বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানায় সন্ধানী জাতীয় চক্ষুদান সমিতিসহ সংশ্লিষ্টরা।
সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ডা. মো. আলী আসগর মোড়ল জানান, প্রশিক্ষণ-সহযোগিতার এ উপলক্ষে সন্ধানী জাতীয় চক্ষুদান সমিতি ও রোটারি ক্লাব, আইএফইটিবি অ্যান্ড টিবিআই’র সহযোগিতায় কর্নিয়াজাত অন্ধত্ব বিমোচন জাতীয় কর্মসূচি নিয়েছে।
আলী আসগর মোড়ল জানান, কৃষিকাজজনিত ইনজুরি বাংলাদেশে কর্নিয়া ক্ষতের অন্যতম কারণ। দেশে অন্ধত্বের হার এক দশমিক ৫৩ শতাংশ, যার মধ্যে ৩০ শতাংশ কর্নিয়াজনিত অন্ধত্বের শিকার। দেশে কর্নিয়াজনিত অন্ধের সংখ্যা পাঁচ লাখের বেশি, যা প্রতিনিয়তই বাড়ছে। গড়ে প্রতি বছর প্রায় তিন হাজার ব্যক্তি নতুন করে কর্নিয়াজনিত অন্ধত্বের শিকার হন।
তিনি জানান, দুই বছর মেয়াদী এ কর্মসূচির আওতায় ছয় হাজার কর্নিয়া প্রতিস্থাপন, ৮০০ মেডিকেল শিক্ষার্থী, তরুণ চিকিৎসক, রোটারিয়ান, স্বেচ্ছাসেবকদের কর্নিয়া সংগ্রহের প্রশিক্ষণসহ কর্নিয়া সার্জনদের কর্নিয়া প্রতিস্থাপনের বিশেষায়িত প্রশিক্ষণ অন্তর্ভুক্ত। সমন্বিতভাবে এসব উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বলে তা আরো বেশি কার্যকর হবে বলেও আশা করছেন তারা।
সমিতি জানায়, কর্নিয়াজনিত অন্ধত্ব বিমোচনের লক্ষ্যে গৃহীত কর্নিয়াজনিত অন্ধত্ব বিমোচন জাতীয় কর্মসূচির আওতায় অনুষ্ঠিতব্য আন্তর্জাতিক চক্ষু ব্যাংক ও কর্নিয়া প্রতিস্থাপন শীর্ষক সিম্পোজিয়ামের প্রাক্বালে সন্ধানী জাতীয় চক্ষুদান সমিতি, রোটারি ইন্টারন্যাশনাল, রোটারি ক্লাব অব ঢাকা সেন্ট্রাল, অফথালমোলজিক্যাল সোসাইটি অব বাংলাদেশ, ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব আই অ্যান্ড টিস্যু ব্যাংক এবং টিস্যু ব্যাংক ইন্টারন্যাশনাল সমন্বিতভাবে এসব উদ্যোগ নিয়েছে।
ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব আই অ্যান্ড টিস্যু ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ ফারাজডাগি, টিস্যু ব্যাংক ইন্টারন্যাশনালের সিইও ডগলাস এ ফারলং, রোটারি ইন্টারন্যাশনাল এতে সহযোগিতা করছে।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সমিতির নেতারা জানান, এখানে কর্নিয়া কেনা-বেচার কোনো বিষয় নেই। একজন দান করে অন্যজনের চোখের আলো আনে। শুধু টোকেন মানি হিসেবে পাঁচশ’ টাকা খরচ হয় রেজিস্ট্রেশন বাবদ। কর্নিয়া সংযোজনের যে অপারেশনে ২০-২৫ হাজার টাকা ব্যয় হয়, সেটিও এখানে বিনাব্যয়ে করা হয়।
ম. হামিদ বলেন, এই প্রথম স্বেচ্ছাসেবায় কর্নিয়াব্যাংক স্থাপিত হতে যাচ্ছে, যা আগে আমাদের ছিল না। দেশে ২০ থেকে ২৫ লাখ অন্ধ রয়েছেন। সবার অন্ধত্ব ঘোচার নয়। তবে যারা কর্নিয়াজনিত অন্ধত্বে রয়েছেন, তাদের সুস্থ করা সম্ভব। এজন্যই এতো আয়োজন।
বিশেষজ্ঞরা জানান, সব কর্নিয়া ব্যবহারের যোগ্য হয় না। নির্দিষ্ট সময়ে এগুলো সঠিকভাবে সংরক্ষণ করতে হয়। তা নাহলে সেগুলো কাজে লাগে না। এছাড়া কোনোটি যদি এইচআইভি পজিটিভ বলে প্রমাণ পাওয়া যায়, সেটিও কোনো কাজে লাগে না।
তিনি বলেন, এবারের উদ্যোগটি আরও সমন্বিত বলে অধিক কার্যকর হবে বলে আশা করছি।
১৯৮৪ সাল থেকে এ সমিতি কাজ করছে। সে বছরের ২৪ নভেম্বর শ্রীলঙ্কার চিকিৎসক ডা. হাডসন ডি সিলভা দু’টি কর্নিয়া এনে সমিতিতে দান করেন। কিশোরী টুনটুনির চোখে সেগুলো প্রতিস্থাপিত করে অন্ধত্ব দূরীকরণের সূচনা হয়। এ পর্যন্ত তিন হাজার ২৫০ জন অন্ধের চোখে আলো ফিরিয়েছে সন্ধানী। সমিতিতে এ পর্যন্ত মরণোত্তর চক্ষুদানের অঙ্গীকার করেছেন ৪০ হাজার ব্যক্তি।
রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীও সন্ধানীতে নিজেদের চোখদানের প্রতিশ্রুতি দিয়ে রেখেছেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৪২ ঘণ্টা, মার্চ ২৯, ২০১৬
এসকেএস/এএসআর