ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

আইসিডিডিআর,বি’র গবেষণা

দেশে বিবাহিত নারীরা স্থুল হচ্ছে

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৫৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ৬, ২০১৬
দেশে বিবাহিত নারীরা স্থুল হচ্ছে

ঢাকা:  আইসিডিডিআরবি'র একটি নতুন গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশে প্রতি পাঁচজন বিবাহিত নারীর মধ্যে একজন স্থুল অথবা অধিক ওজনের অধিকারী। গবেষণাটি এ ধরনের স্থুলতার জন্য সম্পদ সূচক, শিক্ষার অবস্থা, টেলিভিশন দেখার সময়কাল এর মতো বেশকিছু কারণকে চিহ্নিত করে, যেগুলোর সঠিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে বিবাহিত নারীদের স্থূলতার ব্যাপকতাকে হ্রাস করা সম্ভব।

 

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসেব মতে, প্রতি বছর কমপক্ষে ২৮ লাখ মানুষ অধিক ওজন এবং স্থুলতার কারণে মারা যান।

আইসিডিডিআর,বি এক বার্তায় এ গবেষণার ফলাফলগুলো তুলে ধরেছে।

বিশেষ করে নারীদের জন্য স্থুলতা নানাভাবে ক্ষতিকর   হতে পারে। স্থুলতার কারণে তারা ডায়াবেটিস এবং অ্যান্ডমেট্রিয়াল ক্যান্সার, জরায়ু-মুখ ক্যান্সার, স্তন ক্যান্সার, ডিম্বাশয়ের ক্যান্সারের মতো বিভিন্ন ধরনের রোগে আক্রান্ত হওয়ার অনেক বেশি ঝুঁকিতে থাকে বলে প্রমাণিত।

২০১৬ সালে আইসিডিডিআর,বি’র পুষ্টি প্রোগ্রামের প্রধান হরিবন্ধু শর্মা আইসিডিডিআর,বি এবং আমেরিকার স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকর্মীদের  নিয়ে ১৮ থেকে ৪৯ বছরের নারীদের (যারা বর্তমানে বিবাহিত বা আগে ছিলেন) অধিক ওজন এবং স্থুলতা সংশ্লিষ্ট কারণগুলো চিহ্নিত করার জন্য বাংলাদেশ ডেমোগ্রাফিক অ্যান্ড হেলথ সার্ভে ২০১১ এর পুষ্টি সংক্রান্ত উপাত্ত বিশ্লেষণ করেন।

সম্প্রতি গবেষণাটির ফলাফল বিএমসি ওবেসিটি জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। যেখানে দেখা গেছে, গবেষণার আওতাভুক্ত ১৬ হাজার ৪৯৩ জন নারীর মধ্যে ১৮ শতাংশই অধিক ওজনের অধিকারী অথবা স্থুল।

শহরে বসবাসরত নারীদের মধ্যে শারীরিক পরিশ্রমের সঙ্গে যুক্ত নারীদের চেয়ে পূর্ণ মাত্রার কর্মজীবী নয়, এমন নারীরা অধিক ওজন এবং স্থুল হওয়ার দেড়গুণ (১.৪৪ গুণ) বেশি ঝুঁকিতে থাকেন। শহর ও গ্রাম উভয় জায়গার ধনী ও খাদ্য সুরক্ষিত পরিবারের নারীরা অধিক ওজন এবং স্থুল হওয়ার উচ্চ ঝুঁকিতে আছেন।  

আইসিডিডিআর,বি’র পুষ্টি এবং ক্লিনিক্যাল সার্ভিসেস বিভাগের জ্যেষ্ঠ পরিচালক   এবং  এই   গবেষণার   জ্যেষ্ঠ   গবেষক   ড. তাহমিদ  আহমেদ বলেন, ‘স্থুলতার এই উচ্চমাত্রা আমাদের দেশের চিকিৎসা বাজেটে প্রভাব ফেলবে। যদি এর মোকাবেলা করা না হয় তবে অধিক ওজন এবং স্থুলতা সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন রোগ যেমন   ডায়াবেটিস,   উচ্চ   রক্তচাপ,   দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগ, হৃদরোগ ইত্যাদি বৃদ্ধি পাবে’।

প্রধান গবেষক হরিবন্ধু শর্মার মতে, ‘স্থুলতা সমস্যার ক্রমবর্ধমান অবস্থান ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোর জন্য স্বাস্থ্যখাতের জন্য হুমকিস্বরূপ। ঐতিহ্যগতভাবে স্থুলতা এবং অধিক ওজনের সমস্যা বৃহদার্থে ধনী-দেশগুলোর সমস্যা হিসেবে পরিচিত। কিন্তু এ গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, মধ্যম   আয়ের দেশগুলোতেও এর প্রাদুর্ভাব বাড়ছে। এ   দেশগুলোর স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় সাধারণত অপুষ্টি এবং সংক্রামক রোগ মোকাবেলায় সম্পদ ব্যয় করবার প্রবণতা দেখা যায়। কিন্তু যেহেতু তাদের অর্থনৈতিক উন্নয়ন বাড়ছে, তাই   তাদের অবশ্যই পুষ্টি সংশ্লিষ্ট অসংক্রামক রোগ ব্যবস্থাপনায়ও মনোনিবেশ করতে হবে’।

গবেষণায় দেখা গেছে, গ্রামীণ এলাকার চেয়ে শহুরে এলাকায় স্থুলতা এবং অধিক ওজনের প্রাদুর্ভাব বেশি।          

তবে শর্মা মনে করেন, বাংলাদেশের প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের মাঝে এই সমস্যার গভীরতা বোঝার জন্য আরও   গবেষণার প্রয়োজন আছে। তিনি বাংলাদেশের পরবর্তী ডেমোগ্রাফিক অ্যান্ড হেলথ সার্ভেতে স্থুলতা সংশ্লিষ্ট সূচকগুলো- যেমন শারীরিক কার্যকলাপ, টিভি দেখার সময়কাল, কিভাবে প্রাপ্তবয়স্করা অবসর সময় কাটান এবং খাদ্যগ্রহণ বিষয়ক তথ্য গ্রহণ করার জন্য গুরুত্ব প্রদান করেন।

এ পরীক্ষামূলক গবেষণা ও অনুসন্ধান বাংলাদেশের গ্রাম এবং শহরের নারীদের স্থুলতা এবং অধিক ওজন সমস্যা প্রতিরোধ কার্যক্রমের সঠিক কৌশল মূল্যায়নে সহায়তা করবে।

শহর ও গ্রামের নারীদের স্থুলতা প্রাদুর্ভাব কমাতে জনস্বাস্থ্য কার্যক্রম অপরিহার্য। স্থুলতা মোকাবেলায় বিদ্যালয়ে, সমাজে এবং কর্মক্ষেত্রে স্থুলতার পরিণতি, শারীরিক কর্মকাণ্ডকে উদ্বুদ্ধকরণ, সঠিক খাদ্যাভ্যাস ও স্থুলতা প্রতিরোধ বিষয়ে সচেতনতামূলক কার্যক্রম গ্রহণ করা দরকার।

বাংলাদেশ সময়: ১০৪৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৬, ২০১৬
এমএন/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।