ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

বিদেশি শিক্ষার্থীদেরও প্রথম পছন্দ এনাম মেডিকেল কলেজ

মাজেদুল নয়ন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৩১ ঘণ্টা, জুন ৬, ২০১৬
বিদেশি শিক্ষার্থীদেরও প্রথম পছন্দ এনাম মেডিকেল কলেজ ছবি: জিএম মুজিবুর

সাভার থেকে ফিরে: ভারত, নেপাল ছাড়াও এশিয়ার বিভিন্ন দেশের শিক্ষার্থীরা চিকিৎসক হিসেবে নিজেদের তৈরি করতে বেছে নিচ্ছেন বাংলাদেশকে। আর এ দেশের প্রথম সারির শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এনাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালই বর্তমান প্রেক্ষাপটে তাদের প্রথম পছন্দ।


 
শিক্ষার্থী সংকট এবং পড়াশোনার মানের প্রশ্নে গত ২ বছর ধরে যখন দেশের বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলোর খেই হারানোর দশা, তখন শিক্ষার্থী ভর্তির চাপে এনাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের অবস্থান বেশ ঈর্ষণীয়। এমনকি বিদেশি শিক্ষার্থীদের চাপও রয়েছে বেশ।
 ২০১৩ সালে সাভারের রানা প্লাজা ট্রাজেডিতে বিশ্বজুড়ে নাম ছড়িয়ে পড়ে থানা রোডের এনাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের। বিল দেয়ার পরেই যখন দেশের অন্য বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে সেবা গ্রহণের অনুমতি দেয়া হয়, সেখানে এনাম মেডিকেল কলেজ স্থাপন করলো এক অনন্য নজির। এখানকার প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীরাও ২০১৩ সালের ২৬ এপ্রিল কাজ করলেন স্ট্রেচার টানার, রোগী বহনের। আর পুরো প্রতিষ্ঠানের চিকিৎসক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীর একযোগে নেমে গেলেন সেবার ব্রত নিয়ে। মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের চেয়ারম্যান ডা. এনামুর রহমান উন্মুক্ত করে দিলেন সেবার সকল দ্বার।
নেপালের শিক্ষার্থী বিকাশ কুমারের (১৯) বোন ঢাকায় সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে পড়ছেন। তার কাছ থেকেই এনাম মেডিকেল কলেজের সুনাম শোনেন তিনি। রোববার বাংলানিউজকে বলেন, ‘নেপালেও বেশ পরিচয় রয়েছে এনাম মেডিকেল কলেজের। যারা বাংলাদেশের বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলোতে পড়তে ইচ্ছুক, তাদের প্রথম পছন্দ এখন এনাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল। আমার বোন বলেছিলেন, এখানে শিক্ষকরা বেশ দক্ষ এবং অভিজ্ঞ। এছাড়াও হাতপাতালে প্রচুর রোগী রয়েছে, যেটা মেডিকেল শিক্ষায় বেশ জরুরি।
 নেপালেরই আরেক শিক্ষার্থী রাশমিতা (১৮) জানান, তাদের দেশের চিকিৎসকরাও এখন বাংলাদেশের এনাম মেডিকেলে পড়ার জন্য সুপারিশ করেন। তিনি সেভাবেই জানতে পেরেছেন এই প্রতিষ্ঠানের কথা। এখানে মেয়েদের জন্যে নিরাপদ হোস্টেল রয়েছে, এখানে ভাষার সমস্যা হয় না, খাবারের সুবিধা রয়েছে। যেটা সহজেই মানিয়ে নেয়া যায়। বিশেষভাবে এনাম মেডিকেল কলেজের অভিজ্ঞ এবং আন্তরিক শিক্ষকদের কথা উল্লেখ করেন তিনিও।
 
এনাম মেডিকেল কলেজের প্রথম বর্ষের ভারতীয় শিক্ষার্থীরাও জানান, এখানে পর্যাপ্ত ক্লাস রুম এবং ব্যবহারিক শিক্ষার সুবিধার কথা। এছাড়াও ভারতের তুলনায় বাংলাদেশে বেসরকারি মেডিকেল কলেজে পড়াশোনার খরচও বেশ কম।
এনাম মেডিকেল কলেজের প্রতিষ্ঠাকালীন অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. আব্দুল মান্নান শিকদার বাংলানিউজকে বলেন, যে কোনো মেডিকেল কলেজের ক্ষেত্রে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ শর্ত হচ্ছে, নিজস্ব জমি, দক্ষ ফ্যাকাল্টি ব্যবস্থাপনা এবং হাসপাতাল সুবিধা। এখানে তিনটি শর্তই বেশ ভালভাবে পূরণ করা হয়েছে। এখানে হাসপাতালে সরকারি হাসপাতালের মতোই রোগী সমাগম রয়েছে। যেটা শিক্ষার্থীদের ব্যবহারিক ও ইন্টার্নিতে সাহায্য করে।
 
তিনি জানান, মেডিকেলে ভর্তির সর্বনিম্ন নাম্বার ৪০ নির্ধারণ করায় ২০১৪ সালে অনেক বেসরকারি মেডিকেল কলেজ শিক্ষার্থী পাচ্ছিল না। অথচ সেই বছরও আমাদের শিক্ষার্থী ভর্তি চাপ ছিলো অনেক। আমরা নাম্বার কমানোর আবেদন করিনি। বরং সিট বাড়ানোর আবেদন করেছি। যার ফলে এখন গত শিক্ষাবর্ষে ১৫৫ সিটের সবগুলোই পূর্ণ হয়েছে। আর প্রতি বছরই ৫ থেকে ১৫ টি করে সিট বাড়ছে।
তিনি জানান, এখানে দেশ সেরা অভিজ্ঞ শিক্ষকদের ফ্যাকাল্টিতে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এবং সংখ্যাটাও পর্যাপ্ত। উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, বিএমডিসি’র (বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজ ও ডেন্টাল কাউন্সিল) শর্তানুযায়ী কলেজগুলোর অনুষদে একজন করে ফুলটাইম অধ্যাপক থাকতে হবে। তবে আমাদের বেসিক সায়েন্স অনুষদে ফুলটাইম অধ্যাপকই রয়েছেন ৬ জন। এখানে পর্যাপ্ত সংখ্যার চেয়ে বেশি ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট (আইসিইউ), করোনারি কেয়ার ইউনিট (সিসিইউ), নিউরো কেয়ার ইউনিট (এনসিইউ) রয়েছে। যার সুবিধা শিক্ষার্থীরা পেয়ে থাকেন।
 
কলেজটিতে বর্তমানে অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ও সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. এ কে এম মুজিবুর রহমান। বাংলানিউজকে তিনি বলেন, কলেজে বর্তমানে শিক্ষার্থী সংখ্যা ৭৫০ জন। গত শিক্ষাবর্ষে ভর্তি সংখ্যা ১৫৫ জন। আর মোট শিক্ষার্থীর ৪৫ শতাংশ বিদেশি। এখানে ভারত ও নেপাল ছাড়াও মালদ্বীপ ও শ্রীলংকার শিক্ষার্থীরা আসছে।
 তিনি বলেন, এই দেশগুলোর রোগীর প্যাটার্ন একই, যোগাযোগে সুবিধা আর এনাম মেডিকেল কলেজের দক্ষ ফ্যাকাল্টির কারণেই বিদেশি শিক্ষার্থীরা তাদের প্রতিষ্ঠানকে বেছে নিচ্ছেন। এখানে অনুষদগুলোর ওপর আলাদা আলাদা অপারেশন থিয়েটার শিক্ষার্থীদের শিক্ষা অর্জনের বড় সহায়ক। এখানকার আধুনিক ও নিরাপদ হোস্টেল সুবিধা বিদেশি ও দেশি শিক্ষার্থীদের আকর্ষণ করে।
 
অধ্যাপক ডা. আব্দুল মান্নান শিকদার বলেন, এনাম মেডিকেল কলেজ থেকে পাশ করে শিক্ষার্থীরা স্ব স্ব ক্ষেত্রে বেশ সুনামের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছেন। বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে ৪০ জনের মতো সরকারি চিকিৎসক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেলে এফসিপিএস’এ ২০ জনের বেশি শিক্ষার্থী রয়েছে।
রোববার সরেজমিনে কমপ্লেক্সটি ঘুরে দেখা যায়, হাসপাতালের মূল ভবনের পেছনে গড়ে উঠছে ৭ তলা একাডেমিক ভবন। চেয়ারম্যান ডা. এনামুর রহমান ঘুরে দেখান নতুন এই ভবন। সেখানে প্রতিটি ফ্লোরেই রয়েছে একটি করে মোট ৬টি লেকচার গ্যালারি। বাংলাদেশে আর কোন মেডিকেল কলেজে এ ধরনের আধুনিক লেকচার গ্যালারি নেই বলে জানান তিনি। এছাড়াও নির্মাণাধীন কলেজ ভবনেও বসানো হয়েছে নতুন এমআরআই মেশিন। সবমিলিয়ে এ হাসপাতালে এমআরআই মেশিন রয়েছে দুটি। রয়েছে এন্ডোসকোপিসহ অন্যান্য সার্জারির সর্বাধুনিক প্রযুক্তি। বর্তমান ভবনের ১২ তলায় রয়েছে সুবিশাল অডিটোরিয়াম। সেটিতে যৌথ ক্লাস নেয়ার সুবিধা পাওয়া যায়। যা শিক্ষার্থীদের জন্যে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
দেশের সরকারি উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো যখন জার্নাল বের করার সক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোও নিয়মিত করতে পারছে না, সেখানে প্রতি বছরই দুটি করে জার্নাল নিয়মিত প্রকাশ করছে এনাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল। এসব জার্নাল পৌছে যাচ্ছে, চিকিৎসা সর্ম্পকিত আন্তর্জাতিক ও জাতীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর দপ্তরে।
 কলেজের লাইব্রেরিটি বেশ সমৃদ্ধ। সেখানে দেশ বিদেশের সকল জার্নালও হাতের কাছে পাচ্ছে শিক্ষার্থীরা। স্বাস্থ্য সম্পর্কিত আন্তর্জাতিকমন্ডলে সবচেয়ে সমৃদ্ধ জার্নাল ল্যানসেটও রাখা হচ্ছে নিয়মিত। লাইব্রেরিতে শুধুই পড়ার পরিবেশ।
 ডা. এনামুর রহমান বলেন, আমরা ভাল করছি বলেই প্রতি শিক্ষাবর্ষে আমাদের আসন সংখ্যা বাড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। এখানে হাসপাতালে সরকারির চেয়েও বেশি ভিড়। যেটা শিক্ষার্থীদের জন্যে খুবই জরুরি। চিকিৎসা বিজ্ঞানের বিভিন্ন অনুষদের সবচেয়ে অভিজ্ঞ শিক্ষকদের এখানে নিয়োগ করা হয়েছে। যেটা বিদেশি শিক্ষার্থীদেরও আকর্ষণ করে। শিক্ষক এবং বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাও তাদের প্রতি আন্তরিক থাকেন।
 
বাংলাদেশ সময়: ১১৩৮ ঘণ্টা, জুন ৬, ২০১৬
এমএন/জেডএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।