ঢাকা: ঢাকার সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতাল থেকে ক্যামেরুনের একজন ৩৮ বছর বয়সী এইডস রোগী নিখোঁজ হয়েছেন। গত ১১ আগস্ট সকালে তিনি হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে আর ফেরেননি।
গত ৬ আগস্ট দুপুরে একজন বাংলাদেশি নারীর সঙ্গে মহাখালীর সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে আসেন ক্যামেরুনের ওই নাগরিক। হাসপাতালের এইডস বিভাগে দায়িত্বরত চিকিৎসক এবং সেবিকারা জানান, দুজনেই মাঝবয়সী ছিলেন।
৬ আগস্ট কর্মরত একজন সেবিকা জানান, প্রায় ৬ ফুট দীর্ঘদেহি ব্যক্তি ছিলেন তিনি। গায়ের রঙ কালো। যেদিন ভর্তি হন, তার পায়ের গোড়ালি ও অন্যান্য জায়গায় ঘা হয়ে গিয়েছিল। এছাড়াও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত ছিলেন তিনি।
হাসপাতালে কর্তব্যরত চিকিৎসক বাংলানিউজকে বলেন, তিনি ভাঙ্গা ভাঙ্গা ইংরেজি এবং বাংলা বলতে পারতেন। তার কাছে কোন পাসপোর্ট ছিল না। পাসপোর্টের প্রথম পাতার ফটোকপি ছিল। সেখানে দেখা যায়, আগামী বছর ২০১৭ সালে পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হবে।
চলতি বছরের ২২ জুন তিনি সর্বশেষ বাংলাদেশে প্রবেশ করেন বলে জানা যায়।
পাসপোর্ট হারিয়ে যাওয়ায় গুলশান থানায় সাধারণ ডায়েরি করা হবে বলে ক্যামেরুনের ওই নাগরিক জানিয়েছিলেন।
সংক্রামক ব্যধি হাসপাতালে ৩য় তলার ওয়ার্ড নং ৩ এ ছিলেন তিনি। চিকিৎসক এবং সেবিকারা জানান, উত্তরার একটি বেসরকারি হাসপাতালে পিত্তথলির পাথরের অস্ত্রপচার করতে গিয়েই তার এইচআইভি পজিটিভের লক্ষণ ধরা পড়ে। ঢাকার ইউনাইটেড হাসপাতালে আবারো স্ক্রিনিং করা হয় এবং পজিটিভ আসে। এরপরই সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে নিয়ে আসা হয় তাকে।
হাসপাতালে কনফারমেটিভ টেস্টে রক্তে এইচআইভি পজিটিভ ধরা পড়ে। চিকিৎসকরা জানান, এরপর আরো কিছু টেস্টের প্রয়োজন হয়। কিন্তু এর আগেই ওই রোগী চলে যান।
হাসপাতালের নথিতে ওই ব্যক্তির নামের পাশে ঠিকানা হিসেবে উত্তরা ১৩ নং সেক্টর লেখা রয়েছে এবং একটি ফোন নাম্বার রয়েছে। বিস্তারিত ঠিকানা নেই।
চিকিৎসকরা জানান, ওই ব্যক্তির দেয়া তথ্য মতে তিনি সঙ্গে থাকা বাংলাদেশি নারীর সঙ্গে ব্যবসা করতেন। তবে কিসের ব্যবসা সেটি জানা যায়নি। ওই নারী বিকেলের দিকে তাকে দেখতে আসতেন। কিছুক্ষণ থেকে চলে যেতেন। সেবিকারা নাম জিজ্ঞাসা করলেও বলেননি। বরং এক বিকেলে দুর্ব্যবহার করেন। রোগী হাসপাতাল থেকে চলে যাওয়ার পর থেকে ওই নারীর নাম্বারে ফোন দিলেও আর রিসিভ করেননি।
হাসপাতাল থেকে পাওয়া মোবাইল নাম্বারে ফোন দিলে ক্যামেরুনের ওই ব্যক্তি জানান, তিনি এখন ঠিক আছেন। পাল্টা জানতে চান, ‘আপনার সমস্যা কি? আপনার কি লাগবে? কেন ফোন দিয়েছেন? আমি আপনার কথা বুঝতে পারছি না। ’
এ বিষয়ে সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালের সিনিয়র কনসালট্যান্ট ডা. আনজুমান আরা বাংলানিউজকে বলেন, হাসপাতালে সাধারণত রোগীরা ওষুধ নিয়ে চলে যায়। আর এইচআইভি পজিটিভের রোগীরা একদম শেষ মুহূর্তে বা হঠাৎ করে শরীর খারাপ হয়ে পড়লে ভর্তি হন। ক্যামেরুনের ওই রোগীর এইচআইভি পজিটিভ ধরা পড়ার পর আমরা ভর্তি করে নিই। তবে চিকিৎসা ছাড়াই তিনি চলে যান।
একজন ভিনদেশি ব্যক্তির এভাবে এইচআইভি পজিটিভ নিয়ে দেশে ঘুরে বেড়ানো নিরাপদ নয়। তাই আমরা হাসপাতালের পক্ষ থেকে বনানী থানায় একটি সাধারণ ডায়রি করি। এরপর আর তার কোন খোঁজ পাইনি।
বুধবার বিকেলে বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) মো. ওয়াহিদুজ্জামান বাংলানিউজকে বলেন, ক্যামেরুনের ওই এইচআইভি আক্রান্ত ব্যক্তির বিষয়ে একটি সাধারণ ডায়রি করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৪০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৮, ২০১৬
এমএন/জেডএম