ঢাকা: শাশুড়িকে নিয়ে জামাই এসেছে ডাক্তারের চেম্বারে। শাশুড়ির বয়স পঞ্চাশ ছুঁই ছুঁই।
এমন টোপ ফেলেই এবার বাংলাদেশের রোগীদের সঙ্গে প্রতারণা শুরু করেছেন কলকাতার প্রজনন বিশেষজ্ঞ এবং গাইনোকোলজিক্যাল এন্ডোস্কোপিক সার্জন ডা. গৌতম খাস্তগীর।
প্রথমে বন্দরনগরী চট্রগ্রাম, পরে ঢাকায় একটি চিকিৎসা সেবা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে প্রতারণার জাল বিছিয়েছেন এই চিকিৎসক।
ঢাকার উপকণ্ঠে একটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে একদফা রোগী দেখে চলতি মাসের শেষ দিকেই দ্বিতীয় দফায় আবার রোগী দেখতে আসবেন তিনি।
প্রথমবারের চিকিৎসা নেয়া ২২ জন রোগীর সঙ্গে কথা বলেছে বাংলানিউজ। তাদের এক কথা। ডা. গৌতম খাস্তগীরের রোগী দেখা আর প্রতিশ্রুতির তুবড়ি ফোটানো বাক্যালাপে ভেবেছিলাম এই বুঝি মা হয়ে গেলাম। চিকিৎসাও নিলাম। পরে দেখলাম সবই ভুয়া।
ডা. গৌতম খাস্তগীরের মোহ কেটে গেছে? কেন আর কিভাবেইবা মোহ কাটলো?
উত্তরে ঢাকার ইলেকট্রনিক মিডিয়ার একজন নারীকর্মী জানান, খবরের কাগজে তাকে নিয়ে লেখাখেলি যে বাংলাদেশে তার বাজার সম্প্রসারণ বা মার্কেটিং কৌশল প্রথমে তা বুঝতে পারিনি।
নিজের অভিজ্ঞতা থেকে তিনি বলেন, কোথায় ডাক্তারের ফি তিন হাজার টাকা আছে বলুন! বিকাশের মাধ্যমে ওই হাসপাতালকে তিন হাজার টাকা অগ্রিম ফি দিলাম। সিরিয়াল নিলাম। তার চেম্বারে যাবার আগে সহকারীরা আগের চিকিৎসা পত্র দেখলেন। দিলেন এক গাদা টেস্ট। সেটাও করালাম। তারপর মাত্র মিনিট তিনেক সেসব কাগজপত্রে চোখ বুলিয়ে তিনি বললেন, বাংলাদেশে হবে না। কলকাতায় আসুন। তারপর ধরিয়ে দিলেন নিজের ভিজিটিং কার্ড।
এই হলো চিকিৎসা!
সুলতানা জামান (ছদ্মনাম) নামে আরেক সন্তান প্রত্যাশী বাংলানিউজকে বলেন, প্রথমে তাকে ঢাকায় দেখালাম। তার নির্দেশনা মতো কলকাতায় গেলাম। বললেন, টেস্ট টিউব বেবী নিতে হবে। তারপর ধরিয়ে দিলেন বিশাল এক খরচের ফর্দ। অথচ কোলকাতায় যাবার আগে এমনভাবে আমাদের প্রতিশ্রুতি দিলেন যে, গেলেই বোধ হয় মা হয়ে যাবো।
উনি কাউকে নিরাশ করেন না, যোগ করেন সুলতানা।
সন্তান প্রত্যাশী ফজলুল হক একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। বাংলানিউজকে তিনি জানান, এবার জাতীয় পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেখে তার এক আত্মীয় ওই হাসপাতালে ডা. গৌতম খাস্তগীরকে দেখানো জন্যে ফোন দেন।
বিকাশের মাধ্যমে তার কাছে অগ্রীম ৫ হাজার টাকা পরিশোধ সাপেক্ষে ডা. গৌতম খাস্তগীরের প্রাথমিক স্বাক্ষাত মিলবে বলে জানানো হয়।
প্রিয়তা বালা (ছদ্ম নাম) নামে আরেক নারী বাংলানিউজকে বলেন, ডা. গৌতম খাস্তগীরের পরামর্শে কোলকাতায় যাই। তার আগে স্বামীর সাথে এখানে সেখানে খোজঁ খবর নিয়ে জানতে পারি খোদ কোলকাতার রোগীদেরই তার প্রতি আস্থা নেই। যে কারণে বাংলাদেশি রোগীদের দিকে ঝুঁকছেন তিনি।
কিন্তু কিভাবে বাংলাদেশে তিনি ৫ হাজার টাকা ফি নিচ্ছেন? কোন নীতিমালার আলোকে? এগুলো কি দেখার কেউ নেই। এভাবে তিনি বাংলাদেশ থেকে গোপনে অর্থ পাচার করছেন কি করে?
কলকাতার একটি সূত্র বাংলানিউজকে জানিয়েছে, সেখানকার একজন সাংবাদিকের মাধ্যমে ঢাকায় প্রতারণার ঘাঁটি গাড়তে চাইছেন ডা. গৌতম খাস্তগীর।
নি:সন্তান দম্পত্তিদের আবেগকে পুঁজি করেই এখান থেকে কলকাতায় নিজের বানিজ্য সম্প্রসারণ করতে চাইছেন তিনি।
তার বক্তব্য, চট্রগ্রামের সন্তান হয়েও এদেশের মানুষদের প্রতি তার কোন কমিটমেন্ট নেই। তিনি টাকাটাই বেশি চেনেন। আর এদেশে তার বাপ দাদার আবাস ছিলো সেই সহানূভূতিকে পুঁজি করেই দেশের নি:সন্তান দম্পত্তিদের কোলে ফুটফুটে সন্তান এনে দেবার চিকিৎসার নামে চলছে দেশের মানুষকে নি:স্ব ও সর্বশান্ত করার পাঁয়তারা।
রোগীদের প্রতারণা ঠেকাতে এখনই সরকারের বিভিন্ন সংস্থার সর্তকতা অবলম্বন জরুরি বলে মনে করেন প্রতারিত রোগীদের অনেকে।
বাংলাদেশ সময়: ১২১৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৫, ২০১৬
জেডএম/