ঢাকা: ‘বয়স কোনো বিষয়ই নয়। শাশুড়িকে অন্তঃস্বত্ত্বা দেখতে চাইলেও গৌতম খাস্তগীরের চিকিৎসার কোনো জুড়ি নেই!’- এমন গালভরা বুলি দিয়েই নতুন স্টাইলে বাংলাদেশে চলছে কোলকাতায় রোগীর অভাব আর আস্থা সংকটে থাকা প্রজনন বিশেষজ্ঞ এবং গাইনোকোলজিক্যাল অ্যান্ডোস্কোপিক সার্জন ডা. গৌতম খাস্তগীরের প্রতারণা।
খাস্তগীরের প্রতারণার কৌশল ভিন্ন। খাসলতও আলাদা। টাকাই তার কাছে সবকিছু।
‘শাশুড়িকে নিয়ে জামাই এসেছেন ডাক্তারের চেম্বারে। শাশুড়ির বয়স পঞ্চাশ ছুঁই ছুঁই। ভদ্রমহিলা ৩২ সপ্তাহের অন্তঃস্বত্ত্বা! গর্ভে বেড়ে উঠছে একটি নয়। দু-দু’টি ভ্রূণ। আগে মেয়ে নিয়ে আসতেন মাকে। কিন্তু এখন মেয়ের শিশুপুত্র জন্মানোয় এবার শাশুড়িকে ডাক্তারের চেম্বারে নিয়ে এসেছেন জামাই।
ব্যাপারটা আজব ঠিকই। কিন্তু নিখাদ সত্যি!’
কলকাতা হারবালের মতোই এমন প্রচারণা চালিয়ে নি:সন্তান দম্পতিকে প্রতারণার জালে বন্দি করছেন ডা. গৌতম খাস্তগীরের দেশীয় এজেন্টরা।
অভিনব টোপ ফেলে বাংলাদেশের রোগীদের সঙ্গে প্রতারণার নানা অভিযোগে উদ্বিগ্ন দেশের চিকিৎসকরাও।
তারা বলছেন, ‘আমরা যেটা নীতিগত ভাবে করি না, সেই কাজটিই করেন গৌতম খাস্তগীর। বলতে গেলে সকলকেই গ্যারান্টি দেন সন্তান সম্ভাবনার’।
‘যে কারণে সহজেই প্রতারণার শিকার হন বাংলাদেশের নিরীহ সন্তান প্রত্যাশী পুরুষ ও নারীরা’।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ মেডিকেল ও ডেন্টাল কাউন্সিলের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলানিউজকে বলেন, ‘অনেকের ঘাড়ে পা দিয়ে এ দেশে নিজের বাণিজ্য ও আখের গোছানোর কাজটি করছেন গৌতম খাস্তগীর। বিধি বহির্ভূতভাবে ৩ হাজার টাকা থেকে ৫ হাজার টাকা রোগীপ্রতি ফি নিচ্ছেন তিনি’।
‘প্রথমে চট্রগ্রাম। সেখানে খুব একটা সুবিধে করতে না পেরে প্রভাবশালীদের মাধ্যমে ঢাকার উপকণ্ঠে ঘাঁটি গেড়েছেন তিনি। তার বিরুদ্ধে চমকপ্রদ নানা বিজ্ঞাপনের জালে রোগীদের প্রতারণার ফাঁদে ফেলে প্রতারণার বহু অভিযোগ এসেছে আমাদের কাছে’।
একটি অভিযোগের উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, ‘ওই রোগীর ভাষ্য- ৫ মিনিট সময় না দিয়েই তার কাছ থেকে গৌতম খাস্তগীরের ভিজিট বাবদ নেওয়া হয় ৫ হাজার টাকা’।
‘আমরা খোঁজ নিয়ে জেনেছি, মাত্র দু’দিনে তিনি চারশ’ থেকে ৫শ’ রোগী দেখেন। এটা কি করে সম্ভব? এটা তো রোগীদের সঙ্গে প্রতারণার সামিল। তাদের দুর্বলতা নিয়ে ছিনিমিনি খেলা’- যোগ করেন তিনি।
প্রথমবার চিকিৎসা নেওয়া ২২ জন রোগীর সঙ্গে কথা বলেছে বাংলানিউজ। তাদের সবারই অভিজ্ঞতা অভিন্ন।
চিকিৎসা নেওয়া এক নারী বলেন, ‘ডা. গৌতম খাস্তগীরের রোগী দেখা আর প্রতিশ্রুতির তুবড়ি ফোটানো বাক্যালাপে ভেবেছিলাম, এই বুঝি মা হয়ে গেলাম। চিকিৎসাও নিলাম। পরে দেখলাম, সবই ভুয়া’।
‘ডা. গৌতম খাস্তগীরের মোহ কেটে গেছে। দ্বিতীয়বার ঢাকার উপকণ্ঠের একটি হাসপাতালে আসছেন। কোনো আগ্রহ বোধ করছি না’।
রোগীদের অভিযোগ, আসলে বাংলাদেশে তারা রোগীদের নিয়ে বাণিজ্য করতেই আসেন। এক গাদা টেস্ট, লাখ লাখ টাকা খুইয়েও মা হতে পারেননি, এমন রোগীদের সংখ্যাটাই বেশি। যারা টেস্ট টিউবে মা হন, তাদের বিষয়টাই ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে প্রচার করে নি:সন্তান নারীদের বিভ্রান্ত করেন খাস্তগীর।
এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একজন শীর্ষ কর্মকর্তার দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে নানা মহল থেকে অভিযোগ আসছে। আমরা নজরদারির মধ্যে রেখেছি। ছদ্মবেশে বা রোগীর বেশে আমাদের মন্ত্রণালয় থেকে লোক থাকবেন’।
প্রয়োজনে আইনের ব্যত্যয় হলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার ইঙ্গিত দেন তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ০৮৩০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৬, ২০১৬
এএসআর/
**কলকাতার ডাক্তার গৌতম খাস্তগীরের প্রতারণার ফাঁদ বাংলাদেশে
**বিএমডিসি’কে জানাননি খাস্তগীর, ব্যবস্থা নিচ্ছে স্বাস্থ্য অধিদফতর