ঢাকা: ক্লাস চলাকালীন হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ে যশোরের এক স্কুলছাত্রী। দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হলে সেখান থেকে সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
দরিদ্র পরিবারের ওই কিশোরী ন্যাপকিনের পরিবর্তে পুরনো ন্যাকড়া ভাঁজ করে ব্যবহার করতো। ঘরের ভেতর ওই ন্যাকড়া কাঠের ওপর শুকাতে দিলে, ভেজা ন্যাকড়ায় রাতের বেলা ছোট সাপ এসে ডিম পেড়ে যায়। এরপর ওই ন্যাকড়া ব্যবহার করে জরায়ুর ভেতর সাপের বাচ্চা জন্ম নেয়! যাদের ছোট ছোট ছোবলে ক্ষত-বিক্ষত হতে থাকে জরায়ু এবং একসময় মৃত্যু হয় ওই কিশোরীর।
মাসিকের সময় কতো সংখ্যক কিশোরী এখনও ন্যাপকিন ব্যবহার করে না, এর কোনো জরিপ হয়নি। তবে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই সংখ্যা অর্ধেকের বেশি। আর ন্যাপকিন ব্যবহার না করার কারণে দীর্ঘমেয়াদী শারীরিক সমস্যায় ভুগছেন কিশোরীরা।
নারায়ণগঞ্জের সরকারি তোলারাম কলেজের শিক্ষার্থী শাহনাজ আক্তার বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের দেশে এখনও ন্যাপকিনের যে দাম, তা নিম্নবিত্ত পরিবারের পক্ষে বহন করা সম্ভব হয় না। আবার অনেক কিশোরী দোকানে গিয়ে সরাসরি কিনতে পারে না বা পরিবারের অভিভাবকরা এ বিষয়ে সাহায্য করেন না।
মাসিকের বিষয়ে আলোচনা সহজভাবে নেওয়া এবং ন্যাপকিনের মূল্য হ্রাসের দাবি জানান এই শিক্ষার্থী।
রাজধানীর বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখা যায়, বর্তমানে প্রতি পিস ন্যাপকিনের গড় মূল্য ১০ টাকা। এক মাসে একজন কিশোরীর চার থেকে সাতটি পর্যন্ত ন্যাপকিন ব্যবহার করতে হয়। কিশোরীরা একটু টাইট ধরনের ন্যাপকিনকে প্রাধান্য দেন। বেল্ট ও প্যান্ট সিস্টেমের ন্যাপকিন রয়েছে বাজারে। মান বুঝে দামেও তারতম্য রয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের অ্যাডোলেসেন্ট অ্যান্ড স্কুল হেলথ প্রোগ্রামের ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার শফিউর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, শুধু মাসিককালীন দুর্ভোগের কারণে অনেক কিশোরী স্কুল থেকে ঝরে পড়ে। অপরিচ্ছন্ন ন্যাকড়া ব্যবহারের কারণে কিশোরীরা মাসিকের সমস্যা, সাদা স্রাব, জরায়ুতে চুলকানি, দাঁদ, তলপেটের ব্যথায় (যাকে চিকিৎসা বিজ্ঞানে বলা হয় মেনেরোজিয়া) ভোগে। যা পরবর্তী সময়ে তাদের মা হওয়াতেও সমস্যা সৃষ্টি করে।
উন্নত দেশগুলোর আদলে কিশোরীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে বিনামূল্যে ন্যাপকিন বিতরণের পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের।
শফিউর রহমান বলেন, স্কুল হেলথ প্রোগ্রামের অধীনে পাঁচ বছরের মেয়াদে এই প্রকল্প শুরু হবে আগামী জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি থেকে। ইতোমধ্যে প্রকল্প পরিকল্পনা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং বিশ্ব ব্যংকে পাঠানো হয়েছে।
তিনি বলেন, প্রকল্প অনুযায়ী উপজেলা হেলথ কমপ্লেক্সের মাধ্যমে কিশোরীদের মধ্যে ন্যাপকিন বিতরণ করা হবে। আটটি বিভাগের ৭টি বিভাগীয় শহরে এবং ঢাকার নারায়ণগঞ্জ জেলায় এই ন্যাপকিন বিতরণ করা হবে। এসব জেলার প্রতিটি উপজেলায় প্রথম পর্যায়ে ২শ করে ন্যাপকিন বিতরণ করা হবে। এই পাইলট প্রকল্পের মাধ্যমে স্যানিটারি ন্যাপকিন বিতরণের কার্যাবলীর সফলতা যাচাই করা হবে।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের গাইনি বিভাগে এই ন্যাপকিন থাকবে। কিশোরীরা চিকিৎসা নিতে এলে ন্যাপকিন সংগ্রহের জন্যে বলা হবে। প্রতি মাসে একজন কিশোরী দু’টি করে ন্যাপকিন পাবে। যদিও মেয়েদের আরও বেশি প্রয়োজন হয়। সিভিল সার্জনের কাছ থেকে চাহিদা পেলে ন্যাপকিন সরবরাহ বাড়বে। ১০ থেকে ১৯ বছর বয়সী মেয়েদের মধ্যে এসব ন্যাপকিন বিতরণ করা হবে বলে জানান শফিউর রহমান।
ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ডাইরিয়াল ডিজিজ রিসার্চ (আইসিডিডিআরবি) এর সিনিয়র গবেষক ড. সোহানা শফিক বাংলানিউজকে বলেন, ন্যাপকিনের সঙ্গে কিশোরীদের পরিচ্ছন্ন থাকা এবং সুস্থতার বিষয়টি জড়িত। প্রকল্পের মাধ্যমে কিশোরীদের মধ্যে ন্যাপকিনের সহজলভ্যতা তৈরি করার উদ্যোগ ভালো। তবে এ বিষয়ে কিশোরী ও পরিবারের মধ্যে সচেতনতা তৈরির ওপরও গুরুত্ব দিতে হবে।
তিনি বলেন, দীর্ঘমেয়াদে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে উন্নয়ন সহযোগী সংস্থ্যাগুলো সাহায্য করতে পারে। এছাড়াও যদি কিশোরীদের প্রতিদিন দুই টাকা করে জমা করতে বলা হয়, তবে মাসে ৬০ টাকা জমা হয়। এই টাকায় তাদের এক মাসের চাহিদাও পূরণ সম্ভব হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১১০৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৬, ২০১৬
এমএন/এসএনএস