ঢাকা: দেশের ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার জন্য বেশ ক’বছর আগে রাজধানীর মহাখালীতে গড়ে তোলা হয় জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল (এনআইসিআরএইচ)। কিন্তু অব্যবস্থাপনায় বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠানটি যেন নিজেই ক্যান্সারে ধুঁকছে।
হাসপাতালটি ঘুরে দেখা গেছে, যেখানে-সেখানে ময়লা-আবর্জনা ফেলে রাখায় চরম অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে। এমনকি রোগীর জানালার পাশেই রাখা হয়েছে ডাস্টবিন! আবার ময়লা কাপড়ের ঝুড়ি, ময়লা ফেলার উপকরণও রাখা হয়েছে হাসপাতালের অবজারভেশন রুমের সামনে।
হাসপাতালের ঠিক ভেতরে যে ফাঁকা জায়গা রয়েছে, সেখানেও অবাধে ফেলা হয়েছে ময়লা-অবর্জনা। বিভিন্ন প্লাস্টিক দ্রব্যের অব্যবহৃত অংশ, খাবারের উচ্ছিষ্ট, কাগজ, প্লাস্টিকের বোতল এসব দিয়ে রীতিমত ময়লার ভাগাড়েই পরিণত করা হয়েছে হাসপাতাল এলাকাকে।
হাসপাতালের সিঁড়ি বেয়ে ভেতরে প্রবেশ করলেই হাতের বাঁয়ে চোখে পড়ে পুরুষ অবজারভেশন রুম। এখানেই রোগীদের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করা হয়। কিন্তু এই রুমের ডান দিকেই জানালার কাছে রয়েছে কিছুটা মাঝারি আকারের ডাস্টবিন। যেখানে অবাধে ময়লা ফেলা হচ্ছে। ডাস্টবিনের ঢাকনাও নেই। ফলে রুম ও রুমের বাইরে অবস্থান করা হয়ে পড়ে দুর্বিষহ।
পুরুষ অবজারভেশন রুম থেকে একটু সামনে গেলেই হাতের বাঁয়ে পড়ে নারী অবজারভেশন রুম। এই রুমের সামনেই ময়লা কাপড় রাখার বড় সাইজের পাত্র, বস্তা, বালতি রাখা হয়েছে। যেখানে অক্সিজেন সিলিন্ডার আর রোগীর স্বজনের ব্যাগও রাখা হয়েছে।
নারী ওয়ার্ডের পাশেই অসুস্থ মাকে নিয়ে বসে ছিলেন মধুপুরের আলী হোসেন। বাংলানিউজকে তিনি বলেন, এতো দুর্গন্ধের মধ্যে ক্যান্সারে আক্রান্ত মা কীভাবে থাকবেন, বুঝতে পারছি না। এ সময় অ্যাপ্রোন পরা দুই নারীকে দেখা গেল মুখে উড়না চেপে বেরিয়ে যাচ্ছেন।
ভুক্তভোগীরা বলছেন, ক্যান্সারের মত দুরারোগ্য রোগের চিকিৎসা নিতে এসে স্বজনদের অবস্থাই খারাপ হয়ে যাচ্ছে। তাহলে রোগীদের অবস্থা কেমন হয়, তা বোঝাই যাচ্ছে। হাসপাতালে ঢুকলে স্যাভলন, ডেটল কিংবা ন্যাপথালিনের গন্ধ পাওয়া যায়। কিন্তু এ হাসপাতালের গন্ধটা স্রেফ দুর্গন্ধ। অথচ এ নিয়ে কর্তৃপক্ষের কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই।
২০০৯ সালের ১১ আগস্ট ৫২০ শয্যা বিশিষ্ট এনআইসিআরএইচ মহাখালীতে যাত্রা শুরু করে। ৯টি ওয়ার্ড ও ৩০টি কেবিনে রোগীদের সেবা দেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। দু’টি ভবনের তিনটি ব্লকে রয়েছে ওয়ার্ডগুলো।
বর্তমানে শয্যার তুলনায় রোগীর সংখ্যা অনেক বেড়ে যাওয়ায় প্রতিদিন আগতের সংখ্যাও বাড়ছে হাসপাতালে। সেই সঙ্গে নোংরাও হচ্ছে বেশি। ভবনের প্রাচীর ঘেঁষা জায়গাগুলোর কোথাও কোথাও একেবারে ঘিনঘিনে অবস্থা। সেসব স্থান থেকেও ছড়াচ্ছে বিশ্রী গন্ধ।
এদিকে হাসপাতালে রয়েছে শয্যা সংকটও। অনেক রোগীই জায়গা না পেয়ে রুমের বাইরে ফ্লোরে অবস্থান নেন। ফলে ক্যান্সারের চিকিৎসা নিতে এসে অন্য রোগের সংক্রমণের শঙ্কা নিয়েও সেবা নিচ্ছেন অনেকে।
ভুক্তভোগী আশিকুর রহমান বলেন, মাকে নিয়ে এসেছি। কিন্তু সিট খালি নেই। তাই বাইরেই শুইয়ে রেখেছি। দুর্গন্ধের জন্য আমার অবস্থাই খারাপ। তাই অন্য হাসপাতালে নেওয়া ছাড়া কোনো উপায় নেই।
এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে এনআইসিআরএইচ’র পরিচালক অধ্যাপক মোয়াররফ হোসেনের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কলা হলেও তিনি রিসিভ করেনি।
বাংলাদেশ সময়: ১০২৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৮, ২০১৭
ইইউডি/এইচএ/