ঢাকা, শুক্রবার, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

মমেক হাসপাতালের বারান্দায় শীতে নাকাল রোগীরা

এম.আব্দুল্লাহ আল মামুন খান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪০৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ২০, ২০১৬
মমেক হাসপাতালের বারান্দায় শীতে নাকাল রোগীরা ছবি- অনিক খান- বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর

ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ (মমেক) হাসপাতালের ৪ নং ওয়ার্ডের বারান্দায় কাঁথা মুড়িয়ে শুয়ে আছেন জেসমিন নাহার (৪০)। হাসপাতালের ভবনে ফাটল ধরায় আতঙ্কে শনিবার (১৯ নভেম্বর) সকাল থেকেই আশ্রয় নিয়েছেন বারান্দায়।

ময়মনসিংহ: ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ (মমেক) হাসপাতালের ৪ নং ওয়ার্ডের বারান্দায় কাঁথা মুড়িয়ে শুয়ে আছেন জেসমিন নাহার (৪০)। হাসপাতালের ভবনে ফাটল ধরায় আতঙ্কে শনিবার (১৯ নভেম্বর) সকাল থেকেই আশ্রয় নিয়েছেন বারান্দায়।

 

কয়েকদিন আগে সিজার হয়েছে তার। বারান্দায় শুয়ে শীতের রাতে ঠাণ্ডা বাতাসে কষ্ট আরো বেড়ে গেছে। ঠাণ্ডা লেগে কাশিতে সেলাই ফেটে যাওয়ার আতঙ্কও কাটছে না জেসমিনের।  

শীত এলে শ্বাসকষ্ট বাড়ে তারাকান্দা উপজেলা থেকে আসা কমলা বেগমের। টিউমারের সফল অস্ত্রোপচার হয়েছে। এখনো চিকিৎসাধীন রয়েছেন ৪ নং ওয়ার্ডে। কিন্তু হঠাৎ করেই ভবনে ফাটল দেখা দেওয়ায় জেসমিনের মতো তিনিও জায়গা নিয়েছেন হাসপাতালের বারান্দায়।

ক্ষোভ নিয়ে বলেন, সুস্থ রোগীরাও এখানে থাকলে অসুস্থ হয়ে যাবে।  

শুধু জেসমিন-কমলা নন, হাসপাতালের তিনটি ওয়ার্ডের প্রায় তিন শতাধিক রোগী শীতের রাতে হাসপাতালের বারান্দায় অবস্থান নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন। ভবনের বিভিন্ন স্থানে ফাটল ও ইট-সুরকি বেরিয়ে আসায় বারান্দায় শুয়ে নাকাল হতে হচ্ছে তাদের।  

শনিবার (১৯ নভেম্বর) রাতে মমেক হাসপাতালের ৪, ৭ ও ১৪ নং ওয়ার্ড ঘুরে রোগীদের মানবেতর জীবনের এমন করুণ চিত্র চোখে পড়ে।  

হাসপাতাল সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ১৯৬০ সালে নির্মিত হয় ৫শ’ শয্যার নতুন ভবন। কিন্তু সময়ের ভারে জরাজীর্ণ এ ভবনেই দীর্ঘদিন ধরে ঝুঁকি নিয়ে চলছে রোগীদের চিকিৎসা।  

এরই মধ্যে গত শুক্রবার (১৮ নভেম্বর) রাতে হাসপাতালের ৪, ৭ ও ১৪ নং ওয়ার্ডে মোটা দাগে ফাটল ও ভবনের পলেস্তার খসে পড়ায় আতঙ্ক নিয়েই সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডগুলো থেকে বেরিয়ে আসেন রোগীরা। আশ্রয় নেন হাসপাতালের বারান্দায়, সিঁড়ির নিচে অথবা করিডোরে।  

হাসপাতালের ৭ নং সার্জারি ওয়ার্ডে দেখা যায়, বড় বড় ফাটল আর ইট-সুরকি বেরিয়ে আসায় ওয়ার্ডের ভেতরে কোনো রোগী নেই। কিন্তু দায়িত্ব পালন করতে জীবনের ঝুঁকি নিয়েই ওয়ার্ডের ভেতরে অবস্থান করতে হচ্ছে নার্সদের।  

এখানেই আলাপ হলো নার্স রাহিমা আক্তার, তাহমিনা ও সজলা রাণীর সঙ্গে।  

‘একদিন নার্সরা অনুপস্থিত থাকলে খবর হয়। কিন্তু মৃত্যুঝুঁকি নিয়েও যে নার্সরা দায়িত্ব পালন করেন, এটা কেউ দেখেন না’, অনুযোগের সুরে বলছিলেন রাহিমা আক্তার।  

তার কথায় সমর্থন দিয়ে তাহমিনা বলেন, রোগীরা বাইরে নিরাপদে আশ্রয় নিতে পেরেছেন। কিন্তু আমাদের সব জিনিসপত্র ভেতরে। তাই ঝুঁকি নিয়েই ডিউটিতে আছি।  

হাসপাতালের ৪ নং ওয়ার্ডের ভেতরে থাকা জনা পাঁচেক রোগীকে বারান্দায় বের করে আনতে উদ্যোগী ভূমিকায় দেখা গেলো আনসার কমান্ডার মো. আব্দুল্লাহকে।  

বাংলানিউজকে তিনি বলেন, ভেতরে থাকা রোগীদের আমরা বারান্দায় নিরাপদে নিয়ে যেতে চাই। এসব রোগীদের নিরাপত্তায় মহিলা ও পুরুষ নার্সরা দায়িত্ব পালন করছেন।  

সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের নার্স শাহনাজ বেগম বাংলানিউজকে জানান, ২৪ শয্যার বিপরীতে তার ওয়ার্ডের বারান্দায় ৯৪ জন রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তবে শীতের কারণে বারান্দায় থাকতে রোগীদের কষ্ট হচ্ছে।  

রোগীদের নিরাপত্তা ও অন্যান্য বিষয়ে খোঁজ নিতে রাত ১০টার দিকে কথা বলতে আসেন হাসপাতালের উপ-পরিচালক আবুল আহসান ও সহকারী পরিচালক (অর্থ) লক্ষ্মী নারায়ণ মজুমদার।  

বাংলানিউজকে তিনি বলেন, জরাজীর্ণ ভবনগুলো সংস্কারের জন্য গণপূর্ত বিভাগকে একাধিকবার চিঠি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তারা তখন সাড়া দেননি।  

খানিকটা বিলম্বে হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডের সংস্কার কাজ শুরু হয়েছে। এ কারণে এখন রোগীদের বারান্দায় বা করিডোরে থাকতে হচ্ছে। ৫শ’ শয্যার নতুন ভবনে আমরা কিছু জায়গা বের করেছি।  

উপ-পরিচালক জানান, রোববার (২০ নভেম্বর) হাসপাতালের সব বিভাগীয় প্রধান ও প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের নিয়ে জরুরি বৈঠক হবে। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হবে রোগীদের স্থানান্তরের বিষয়টি।   

বাংলাদেশ সময়: ১০০২ ঘণ্টা, নভেম্বর ২০, ২০১৬
এমএএএম/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।