ঢাকা: মেরুদণ্ডের সমস্যায় কুমিল্লার মুরাদনগর থেকে চিকিৎসা নিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে (বিএসএমএমইউ) এসেছেন আল মাসুদ। হাসপাতালের বহির্বিভাগের গেটের পাশে ফ্লোরে শুয়ে আছেন তিনি।
আল মাসুদের স্ত্রী আরিফা বাংলানিউজকে বলেন, ‘মেরুদণ্ডের ব্যথার কারণে সোজা হয়ে বসে থাকতে পারেন না, এর জন্য চিকিৎসা করাচ্ছি। ডাক্তার বলেছেন, মেরুদণ্ডের অপারেশন করাতে হবে’।
‘প্রায় দেড় মাস হলো হাসপাতালে ভর্তির জন্য ঘুরছি। কিন্তু বেড পাওয়া যাচ্ছে না। বেড পেলেই তার অপারেশনটা দ্রুত করানো সম্ভব হবে’।
বহির্বিভাগের ফ্লোরে শুয়ে-বসে চিকিৎসা শুরুর অপেক্ষায় আছেন আরো অনেক রোগী ও স্বজনেরাও।
এদিকে টিকিটের অপেক্ষাও দাঁড়িয়ে আছেন অনেক রোগী ও স্বজনেরা। তবে টিকিট কাউন্টারের সামনে নয়, বহির্বিভাগের বাইরে সিড়ির পাশে নারী ও পুরুষের দু’টি লম্বা লাইন রয়েছে।
রোববার (২০ নভেম্বর) সরেজমিনে গিয়ে বিএসএমএমইউ হাসপাতালের বহির্বিভাগের এমন চিত্র দেখা যায়।
নাকে ব্যথার সমস্যা নিয়ে রাজধানীর পল্লবী থেকে এসেছেন আরিফ রহমান। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দেখাতে সকাল থেকেই টিকিট সংগ্রহের লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘দুপুর আড়াইটা থেকে টিকেট দেওয়া শুরু হবে। আগে না এলে পেছনে দাঁড়াতে হবে। টিকিট কাউন্টারে গিয়ে আগে টিকিট সংগ্রহ করতেই এ লাইনে দাঁড়াতে হয়েছে’।
‘তবে বাইরে রোগীদের এই লাইন টিকিটের জন্য নয়, টিকিট কাটার লাইনে দাঁড়ানোর জন্য। সময় হলে এখানকার আনসাররা বহির্বিভাগের ভেতরে আমাদের নিয়ে যাবেন। সেখানে ব্যাংক থেকে টিকিট কাটতে হবে’।
হাসপাতালের বহির্বিভাগটি সম্পূর্ণ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন। নিচতলায় রোগীদের প্রচণ্ড ভিড় থাকলেও বসার জন্য চেয়ার নেই। নিচতলায় রিপোর্ট ডেলিভারি সেকশনেও রয়েছে লম্বা লাইন। আর দ্বিতীয়তলায় প্রত্যেক চিকিৎসকের কক্ষের বাইরে রয়েছে রোগীদের লাইন।
সিরিয়াল ভেঙে হাসপাতালের স্টাফরাই রোগীদের ভেতরে নিয়ে যাচ্ছেন- এমন অভিযোগ করেন দ্বিতীয়তলার নাক-কান-গলা বিভাগের চিকিৎসকের কক্ষের সামনে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা অনেকে।
মগবাজার থেকে আসা রোগী ফাতেমা বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমরা লাইনে দাঁড়িয়ে আছি। কিন্তু কিছুক্ষণ পর পর হাসপাতালের স্টাফ পরিচয় দিয়ে সিরিয়াল ছাড়াই রোগীকে চিকিৎসকের কক্ষের ভেতরে নিয়ে যাচ্ছেন। বার বার না করার পরও একই অবস্থা’।
চিকিৎসকের কক্ষের দরজায় লেখা রয়েছে, ‘প্রতি সাধারণ ৩ জন রোগীর পর ১ জন স্টাফ রোগী যাবেন’।
রোগীদের অভিযোগ, তারা স্টাফ রোগী বলে সাধারণ রোগীদের ভেতরে নিয়ে যাচ্ছেন।
হাসপাতালের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আনসার সদস্যরা জানান, বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানির মেডিকেল রিপ্রেজেন্টটিভ ও অফিসাররা বহির্বিভাগের বাইরে এসে প্রতিদিন ভিড় করেন। অনেকেই রোগী দেখার সময় চিকিৎসকদের বিরক্ত করে থাকেন। আর দালাল ও ছিনতাইকারী তো আছেই।
হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আব্দুল্লাহ আল ফারুক বাংলানিউজকে বলেন, ‘লাল ফিতার দৌরাত্ম্য সব জায়গাতেই আছে। এর বিরুদ্ধে আমরা প্রতিনিয়ত ব্যবস্থা নিচ্ছি’।
‘দালাল চক্রের দৌরাত্ম্য সব হাসপাতালেই আছে, আমাদের এখানেও আছে, তবে কম। প্রতিদিনই দুই একজন দালালের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে’।
‘হাসপাতালের আয়া ও কিছু স্টাফও এ চক্রে জড়িত থাকেন। আর যারা দালাল, তারা খুব ভদ্রবেশেই এখানে আসছেন। দেখে বোঝার কোনো উপায় নেই যে, তারা দালাল’- যোগ করেন পরিচালক।
তিনি বলেন, ‘দালালদের দৌরাত্ম্য কমাতে আমরা কাজ করছি, এটি চলমান প্রক্রিয়া। তাদের বিরুদ্ধে আমাদের কার্যক্রম চলতে থাকবে। নিরাপত্তায় নিয়োজিত কিছু সাদা পোশাকের পুলিশ সদস্যও রয়েছেন। তারা পুরো হাসপাতালে রোগীদের বিভিন্ন সমস্যা পর্যবেক্ষণ করছেন’।
মেডিকেল রিপ্রেজেন্টটিভদের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘তারা যেন চিকিৎসকদের বিরক্ত করতে না পারেন, সেজন্য সপ্তাহে দু’দিন শনিবার ও মঙ্গলবার দুপুরের পর তাদের কাজ করার অনুমতি রয়েছে’।
বাংলাদেশ সময়: ০৯২০ ঘণ্টা, নভেম্বর ২১, ২০১৬
এসজেএ/এএসআর