ঢাকা: রাজধানীর শ্যামলী শিশু পার্কের বিপরীতে ট্রমা সেন্টার। এখানে সাধারণত হাড় ভাঙা রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হয়।
সব ক্ষেত্রেই নেওয়া হয় অতিরিক্ত ফি। এ নিয়ে বিপাকে পড়েছেন নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত শ্রেণীর রোগীরা। ট্রমা সেন্টারে খরচ বহন করতে না পেরে অনেককে মাঝখানেই ক্ষ্যান্ত দিতে হয় চিকিৎসা।
ট্রমা সেন্টারের ৩০৪ নম্বর বেডের রোগী রাজধানীর ডেমরার হাবিবুল্লাহ ভূঁইয়া। কম্প্রেসার বিস্ফোরণের ঘটনায় ডান হাতের হাড় ভেঙে গেছে তার।
তিনদিন আগে এই হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন তিনি। এরমধ্যে সব মিলিয়ে খরচা হয়ে গেছে প্রায় দুই লাখ টাকা। দু’টি অস্ত্রোপচার হয়েছে, আরও তিনটি অস্ত্রোপচার করতে হবে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা।
সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরতে আরও কয়েক লাখ টাকার প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন তার স্বজন আমেনা খাতুন। শুধু হাবিবুল্লাহ-ই নয়, সোমবার (২১ নভেম্বর) হাসপাতাল ঘুরে ও অন্যান্য রোগীদের সঙ্গে কথা বলে হাসপাতালের এমন চিত্র দেখা গেছে।
বাংলানিউজকে আমেনা বলেন, ‘ডাক্তাররা বলেছেন সব মিলিয়ে ৪ থেকে ৫টা অপারেশন লাগবে। দুইটা হইছে, এরমধ্যে দুই লাখ টাকা শেষ। বাকি অপারেশনগুলোতে আরও বেশি টাকা লাগবে। কিন্তু সে টাকা জোগাড় করতেই আমাদের খুব বেগ পেতে হচ্ছে। ’
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ট্রমা সেন্টারে চিকিৎসা খরচ অত্যন্ত ব্যয়বহুল। এখানে হাড় ভাঙা সারাতে এসে যেনো রোগী ও তাদের স্বজনদের আর্থিক অবস্থা ভেঙে যায়!
যাদের আর্থিক অবস্থা ভালো শুধু তারাই চিকিৎসা নিতে পারেন এখানে। তবে দালালের নানা প্রলোভনে পড়ে অনেক নিম্নবিত্ত রোগীও ভর্তি হন এখানে। কিন্তু অর্থের অভাবে যাদের মাঝপথে চিকিৎসা থেমে যায়।
উত্তরা থেকে ট্রমা সেন্টারে এসেছেন সাইফুল ইসলাম। পেশায় চালক ওই ব্যক্তি আলাপকালে বাংলানিউজকে বলেন, ‘আপনাদের জমি জায়গা কেমন আছে? জমি জায়গা যদি না থাকে তবে এই হাসপাতাল থেকে চলে যান। এইখানে চিকিৎসা মানে টাকার খেলা। ’
কুষ্টিয়ায় বাস দুর্ঘটনায় আহত হয়ে এসেছেন একটি চিনিকলের ব্যবস্থাপক মহসীন আলী। হাত ভেঙে গেছে। প্রাথমিকভাবে পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন তিনি। পরে দালালের খপ্পরে পড়ে ভর্তি হয়েছেন ট্রমা সেন্টারে।
‘এখানে ৭ টা অপারেশন লাগবে। ইতোমধ্যে তিনটা করা হয়েছে, প্রতি অপারেশনে লেগেছে ৭০ হাজার টাক,’ বলছিলেন মহসীনের শ্যালক সাহেদুর রহমান।
আর অসুস্থ মেয়েকে নিয়ে এসেছেন সাভারের কৃষক আরশাদ শেখ। তার পরনের লুঙ্গি ও লাল শার্টের পকেটে আকিজ বিড়ির প্যাকেট-ই জানান দিচ্ছে তার আর্থিক অবস্থা!
মেয়ে সেলিনা আক্তার যক্ষা রোগে আক্রান্ত। সকাল থেকে বেশ কয়েক দফা এক্স-রে করা হয়েছে। এরপরও নির্ণয় করা যায়নি রোগের সঠিক কারণ। একের পর এক উচ্চ মূল্যের এক্সরে করে যাচ্ছে ট্রমা সেন্টার।
বাংলানিউজকে আরশাদ বলেন, ‘সকাল থেইকা ৫ থেকে ৬ বার এক্সরে হয়ে গেছে। এখনও ফল দেয় নাই। আরও নাকি এক্স-রে করতে হবে। ’
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ট্রমা সেন্টারের আইসিইউ-এর ভাড়া প্রতিদিন সাড়ে ৭ হাজার টাকা। তৃতীয় তলায় ডাক্তার চেম্বার ও আল্ট্রাসনোগ্রাফি, চতুর্থ তলায় জরুরি সিঙ্গেল কেবিন, যার ভাড়া তিন থেকে সাড়ে চার হাজার টাকা।
পঞ্চম তলায় অপারেশন থিয়েটার, ষষ্ঠ তলায় কেবিন। এক কেবিনে ১৭ জন থাকেন। ভাড়া প্রায় দুই হাজার টাকা। এক্স-রে ও আলট্রাসানোগ্রাফি হয় হাসপাতালের দ্বিতীয় তলায়।
এদিকে অতিরিক্ত ফি নিলেও রোগী ও তাদের স্বজনদের নানা ধরনের হয়রানি করা হয় বলেও অভিযোগ রয়েছে ট্রমা সেন্টারের বিরুদ্ধে। অভিযোগ রয়েছে ওষুধের বাড়তি দাম রাখার।
সাইফুল ইসলাম বলেন, ১০ ধাপ সিঁড়ি বেয়ে হাসপাতালে প্রবেশ করতে হয়। যা হাড় ভাঙা রোগীদের ক্ষেত্রে বেশ কষ্টের। বাইরের ওষুধ কেনার নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তাই বেশি দামে ওষুধ কিনতে হয় এখানকার ফার্মেসি থেকে।
এ বিষয়ে চেষ্টা করেও ট্রমা সেন্টার কর্তৃপক্ষের কারও সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
বাংলাদেশ সময়: ০৬৫১ ঘণ্টা, নভেম্বর ২২, ২০১৬
এমআইএস/এমএ
** পঙ্গুর কর্মচারীর ‘সুপারিশে’ ট্রমায় রোগী