একজন মধ্যবয়সী সুস্থ মানুষ কর্মক্ষম অবস্থায়ও মস্তিষ্কের কার্যক্রম হ্রাসের প্রাথমিক আক্রমণের শিকার হতে পারেন। স্বাস্থ্যবিজ্ঞানের অগ্রগতিতে এই দু’টি সমস্যারই চিকিৎসা আছে।
কেন্দ্রীয় স্নায়ূতন্ত্রের উন্নয়ন ও মস্তিষ্কের সুরক্ষা দিয়ে স্মৃতিশক্তি বাড়ায় এই মাশরুম। পম পম মাশরুম সারাবিশ্বে পরিচিত মূল্যবান ওষুধি মাশরুম। মাশরুমটি দেখতে অত্যন্ত নরম সুতা বা পশমি বলের মতো। মাথার ক্যাপ বা অন্য সৌখিন পোশাকের সঙ্গে অনেক সময়ই এমন গঠন সৌন্দর্য বৃদ্ধির উপকরণ হয়। মাশরুমটি তাই শুধু পুষ্টিগুণের মাশরুমই নয়, নান্দনিক গুণেও এটি অনন্য।
১৯৫৯-৬০ সালের আগ পর্যন্ত মাশরুমটি খুবই দুষ্প্রাপ্য ছিলো। উত্তর আমেরিকার এক গহীন অরণ্যের বিচ উদ্ভিদ থেকে এটিকে প্রথম সংগ্রহ করা হয়। কৃত্রিমভাবে উৎপাদনের পর চীনে এর ব্যাপক ব্যবহার শুরু হয়। চীনে গার্মেন্টস শিল্পে কর্মরত এক প্রসিদ্ধ বাবুর্চি মাশরুমটির নাম দেন পম পম।
সারা বিশ্বে মাশরুমটির বিভিন্ন নামে পরিচিতি আছে, যেমন বাচ্চা বানরের মাথার মতো হওয়ায় এটিকে মাঙ্কিহেড মাশরুম বলা হয়। ভালুকের মাথার মতো হওয়ায় বেয়ার হেড মাশরুম বলেও এর পরিচিতি রয়েছে। আবার সিংহের মাথার মতো দেখতে লাগে বলে লায়ন মেইন মাশরুমও বলে কেউ কেউ। তবে কেন্দ্রীয় স্নায়ূতন্ত্রের উন্নয়ন ও এর ফলশ্রুতিতে মস্তিষ্কের স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতে সহায়ক হওয়ায় জীববিজ্ঞানীরা একে ব্রেইন মাশরুম বা ব্রেইন ফুড নামে পরিচিতি করাতে উৎসাহবোধ করেন।
মাশরুমটি মোটামুটি ক্যালরি মুক্ত ও প্রোটিনের অন্যতম উৎস। দেহ রোগমুক্ত রাখার জন্য প্রাকৃতিক প্রাণরাসায়নিক উপাদানে সমৃদ্ধ। মাশরুমটিতে রয়েছে বিটাগ্লুকান, হেটারো-গ্লুকান এবং হেরিসিনোন্স ও এরিনাসিন্স নামক জটিল প্রাণ রাসায়নিক উপাদান। চীন দেশে প্রায় শতাব্দীকাল ধরে মাশরুমটি স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধির খাবার হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এতে রয়েছে পামিটিক এসিড, থ্রেইটল ও ডি-অ্যারাবিনোজ যা রক্তের চিনি ও কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে কাজ করে।
সাম্প্রতিক গবেষণা থেকে জানা যায়, মাশরুমটি ক্ষতিগ্রস্ত স্নায়ূর পুনর্গঠন করে ও মস্তিষ্কের কোষগুলোর দ্রুত উন্নয়নে কাজ করে। এছাড়া বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মস্তিষ্কের কার্যক্রম হ্রাসের প্রাথমিক প্রক্রিয়াকে বিলম্বিত করে। ফলে বৃদ্ধাবস্থায়ও এটি স্মৃতি ধরে রাখতে সাহায্য করে। এই মাশরুম ব্যবহারকারী পুরোপুরি স্মৃতি হারানোর রোগ আলঝেইমার রোগ থেকে রক্ষা পেতে পারে।
গবেষণা থেকে আরও জানা যায়, পম পম মাশরুমের পলিস্যাকারাইড পরিপাকতন্ত্র, যকৃত, অগ্ন্যাশয় ও ত্বকের ক্যানসার প্রতিরোধে কাজ করে। বিশ্বব্যাপী মাশরুমটি তাজা, শুকনা ও প্রক্রিয়াজাত পাউডার, ক্যাপসুল হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
চিকিৎসা বিজ্ঞানের উৎকর্ষের কারণে মানুষের গড় আয়ু বেড়েছে। বিজ্ঞানী ও বুদ্ধিজীবীরা অধিক সময় চাকরিতে বহাল থাকছেন। বয়োজ্যেষ্ঠদের অভিজ্ঞতা আমাদের সাফল্যের নিয়ামক শক্তি হিসেবে কাজ করে।
পম পম মাশরুম এই বয়োজ্যেষ্ঠদের কর্মচাঞ্চল্য ধরে রাখতে বিশেষ ভূমিকা রাখবে। শীত মৌসুমে আমাদের দেশে মাশরুমটি চাষিবান্ধব প্রযুক্তিতে উৎপাদন করা সম্ভব হচ্ছে। এর সহজ চাষ পদ্ধতির খবর বেশ কিছু দৈনিক পত্রিকা ও অনলাইনে প্রকাশিত হয়েছে, যা মাশরুম শিল্পের জন্য একটি সুখবর।
পম পম মাশরুমের বৈজ্ঞানিক নাম Hericium erinaceus (হেরিসিয়াম এরিনাসিয়াস)। বর্তমানে বিশ্বব্যাপী মাশরুমটির বার্ষিক উৎপাদন ২ মিলিয়ন মেট্রিকটন। মাশরুম শিল্পের সমৃদ্ধির জন্য এর ব্যাপক উৎপাদন ও ব্যবহার এখন শুধু সময়ের ব্যাপার।
লেখক: মাশরুম গবেষক ও উদ্যোক্তা
ই মেইল: [email protected]
বাংলাদেশ সময়: ১৪৪৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৭, ২০১৭
এএ