ঢাকায় ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ডায়রিয়াল ডিজিজ রিসার্চ, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআর,বি) হাসপাতালে সর্বশেষ রোগী ভর্তির তালিকা থেকে দেখা যায়, মঙ্গলবার (১০ জানুয়ারি, ২০১৬) বেলা ১১টা পর্যন্ত ৭৪ জন রোগী ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছেন। এর আগে গত সোমবার (৯ জানুয়ারি, ২০১৬) ২৪ ঘণ্টায় ভর্তি হয়েছেন ৪২৩ জন, ৮ জানুয়ারি ভর্তি হয়েছেন ৪০০ জন, ৭ জানুয়ারি ভর্তি হয়েছেন ৪০১ জন এবং ৬ জানুয়ারি ভর্তি হওয়া রোগীর সংখ্যা ৪১৩ জন।
এবারের শীতে ঢাকার আশপাশের রোগীদের মধ্যে ডায়রিয়ায় আক্রান্তদের সংখ্যার আধিক্য লক্ষ্য করা যায়। গত ১৬ ডিসেম্বর থেকে ২৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৭ দিনের রোগী ভর্তির তালিকা থেকে দেখা যায় জয়দেবপুর থেকে রোগী ভর্তি হয়েছেন ২৫০ জন, কালিয়াকৈর রোগী ভর্তি হয়েছেন ২৫০ জন, সাভার দোহারের রোগী ভর্তি হয়েছে ৫০ জন, নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার রোগী ভর্তি ১৫০ জন।
মাওনা থেকে ১৮ মাসের শিশু জিহাদ হাসানকে নিয়ে আইসিডিডিআর'বি এসেছেন মা লিপি। তিনি জানান, গত ৬ দিন থেকেই ডায়রিয়ায় ভুগছে সন্তান। এখনও তেমন কোনো উন্নতি চোখে পড়েনি। কান্না করছে এবং কিছুই খেতে চাচ্ছে না জিহাদ।
গত রোববার সন্তানকে হাসপাতালে ভর্তি করান মা। তিনি বলেন, তরল পায়খানায় সন্তানের শরীর খুবই দূর্বল হয়ে যায়। বাসায় স্যালাইন দিয়ে লাভ হচ্ছিল না। ফলে হাসপাতালে নিয়ে আসেন।
৮ মাসের সন্তান জান্নাতুলকে নিয়ে মঙ্গলবারই দোহার থেকে আসেন মা চাঁদনী। তিনি বলেন, তিনদিন ধরেই পাতলা পায়খানা হচ্ছিল মেয়ের। শরীর খুব বেশি দূর্বল হয়ে যাওয়ায় হাসপাতালে নিয়ে আসেন।
পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০১৬ সালের একই সময়ে ডায়রিয়ায় ভর্তি রোগীর গড় ছিল প্রায় ৫০০ জন। যা এ বছর ৪০০ জনের মতো।
শীতে শিশুদের ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হলে কিছু বাড়তি সতর্কতা অবলম্বনের প্রয়োজন রয়েছে বলে জানিয়েছেন আইসিডিডিআর,বি'র বৈজ্ঞানিক ও ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটের ক্লিনিক্যাল লিড ডা. মোহাম্মদ জোবায়ের চিসতী।
তিনি বাংলানিউজকে বলেন, শীতকালে ডায়রিয়ায় আক্রান্তের জন্য দায়ী রোটা ভাইরাস। অন্য মৌসুমে ডায়রিয়ার জন্য দায়ী থাকে ইকোলাই ভাইরাস।
তিনি বলেন, গরমের সময় ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হলে শিশুকে বেশি করে স্যালাইন খাওয়ানোর জন্যে পরামর্শ দেওয়া হয়। তবে শীত মৌসুমের ডায়রিয়ায় অতিরিক্ত স্যালাইন হিতে বিপরীত হয়ে যেতে পারে। অতিরিক্ত স্যালাইন পান করলে শরীরে লবণের পরিমাণ বেড়ে যায়। এর ফলে কোষের ভেতর পাণিশূন্যতা তৈরি হয়।
এর ফলে কোষের ভেতর ফ্লুইডের ঘনত্ব বেড়ে যায়। যার ফলে রক্তপাত হয়ে যায়। এ অবস্থাকে বলা হয় হাইপারনাট্রেমিয়া। বর্তমানে যে রোগীরা ভর্তি হচ্ছেন তার ৪ ভাগের তিনভাগই এ সমস্যায় ভুগছেন বলে জানান তিনি।
ডা. জোবায়ের চিসতী বলেন, এ অবস্থায় রোগীর যে পরিমাণ পায়খানা হবে, ঠিক সে পরিমাণ স্যালাইন খেতে হবে। অতিরিক্ত স্যালাইন শরীরে সিরাম সোডিয়াম বাড়িয়ে দিলে তা হতে পারে বিপদজনক।
অনেক সময় শিশুরা তৃষ্ণার্ত থেকে পানি খেতে চায়। ফলে মায়েরা বেশি করে স্যালাইন খাওয়ায়। যেটা পরিমাণমতো খাওয়াতে হবে, বেশি নয়।
আইসিডিডিআর,বি'র আইসিইউ'তে ভর্তি রোগীদের ৭৫ শতাংশই হাইপারনাট্রেমিয়ায় ভুগছেন বলে জানান তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ০২৪০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১১, ২০১৭
এমএন/এএ