প্রায় ১০ বছর আগে বগুড়ার নন্দীগ্রাম উপজেলায় ২০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল ভবন নির্মাণ করা হয়। জনবল নিয়োগ না দিয়েই তড়িঘড়ি করে উদ্বোধন করা হয় হাসপাতালটি।
শুধু প্রয়োজনীয় উদ্যোগের অভাবে এক সময়ের চকচকে-ঝকঝকে হাসপাতাল ভবনটি বর্তমানে ‘মাকাল ফল’র মতো দাঁড়িয়ে আছে। নষ্ট হচ্ছে ভবনের মূল্যবান আসবাবপত্র ও যন্ত্রপাতি। নেই পানির ব্যবস্থা। ভবনের নিরাপত্তায় নেই কোনো নৈশপ্রহরী। এ নিয়ে সংশ্লিষ্টদের কোনো মাথা ব্যথা নেই।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, উপজেলা সদর থেকে প্রায় ৯ কিলোমিটার দূরে ভাটগ্রাম ইউনিয়নে নন্দীগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স অবস্থিত। এতে পৌরশহরসহ আশপাশের বিপুল জনগোষ্ঠী প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছিলেন। এ দশা থেকে মুক্তি পেতে স্থানীয়রা উপজেলা সদরে একটি আধুনিক হাসপাতাল নির্মাণের দাবি তোলেন।
২০০১-০২ অর্থবছরে তৎকালীন সরকারের আমলে উপজেলা সদরে ২০ শয্যাবিশিষ্ট একটি অত্যাধুনিক হাসপাতাল নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়।
২০০২ সালে হাসপাতালের ভিত্তিপ্রস্থর স্থাপন ও নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করা হয়। ২০০৫ সালে অবকাঠামো নির্মাণ কাজ শেষ হয়। স্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের তত্ত্বাবধানে ৩ কোটি ৫৪ লাখ টাকা ব্যয়ে হাসপাতাল ভবন নির্মাণ করা হয়। কিন্তু জনবল নিয়োগ না দেওয়ায় হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা শুরু হয়নি।
২০০৬ সালের ১৮ অক্টোবর তৎকালীন সরকার ক্ষমতা ছাড়ার শেষ মুহূর্তে জনবল নিয়োগ ছাড়াই তড়িঘড়ি করে হাসপাতালের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করে। জনবলের অভাবে দীর্ঘ সময়েও হাসপাতালটির চিকিৎসাসেবা কার্যক্রম চালু হয়নি।
অত্যাধুনিক এ হাসপাতালে চিকিৎসক, নার্স, ওষুধ, ওয়ার্ডবয়, অফিস সহকারী, ল্যাব অ্যাটেনডেন্টসহ ১৩টি পদ রয়েছে। বর্তমানে দু’জন মেডিকেল অফিসার, একজন মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট ও একজন ফার্মাসিস্ট দিয়ে হাসপাতালের আউটডোর চালু রয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, হাসপাতালের প্রধান গেট ও স্টোর রুম ছাড়া তালা ঝুলছে সব কক্ষে। বারান্দায় প্রধান গেটের পাশে একটি কক্ষে প্রাথমিক চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন ডা. সাজ্জাদ হোসেন।
এই চিকিৎসক বাংলানিউজকে জানান, এখানে নিয়োগপ্রাপ্ত দু’জন মেডিকেল অফিসার ও একজন ফার্মাসিস্ট রয়েছেন। প্রতিদিন গড়ে ১০০ জন রোগী চিকিৎসা সেবা নিতে আসেন। তবে প্রাথমিক সেবা ছাড়া রোগীদের কোনো সেবা দেওয়া যায় না। বর্তমানে হাসপাতালে পানি সরবরাহ না থাকায় রোগীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
চিকিৎসা সেবা নিতে আসা শাহনাজ পারভীন, নূরজাহানসহ একাধিক রোগী বাংলানিউজকে বলেন, আমরা গরিব মানুষ। চিকিৎসা নিতে দূরে যাওয়ার সামর্থ্য নেই। এখানে আসলে কিছু সাদা বড়ি (ওষুধ) দেওয়া হয়। সাধারণ মানুষের কথা চিন্তা করে হাসপাতালটি পূর্ণাঙ্গভাবে চালুর জোরালো দাবি জানান তারা।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. তোফাজ্জল হোসেন মণ্ডল বাংলানিউজকে জানান, প্রয়োজনীয় জনবলের অভাবে হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা কার্যক্রম পুরোপুরিভাবে চালু করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে পূর্ণাঙ্গভাবে চালুর বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন বলে দাবি করেন এ কর্মকর্তা।
বাংলাদেশ সময়: ১৩২৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৫, ২০১৭
এমবিএইচ/আরআর/জেডএস