ধর্মঘটের ফলে মহানগরীর স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। বিশেষ করে বিভিন্ন জেলা থেকে রাজশাহীতে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের সীমাহীন দুর্ভোগ দেখা দিয়েছে।
ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে বিভিন্ন স্বাস্থ্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা বন্ধ থাকায় রোগীদের চিকিৎসা কার্যক্রম প্রায় বন্ধ হয়ে পড়েছে। জনদুর্ভোগের পরও ধর্মঘট থেকে পিছু হটেনি রাজশাহী ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বিষয়টি নিয়ে সমাধানে আসার জন্য বুধবার (২৫ জানুয়ারি) দুপুরে রাজশাহী বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের কার্যালয়ে বৈঠকে বসেছেন অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা।
বৈঠকের আগে ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের রাজশাহী শাখার সাধারণ সম্পাদক মোকলেসুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, নিয়ম বহির্ভূতভাবে তাদের ক্লিনিকগুলএক জরিমানা করা হয়েছে। সরকারি গ্যাজেট অনুসরণ করা হয়নি।
র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট ভোক্তা অধিকার আইনে ক্লিনিকগুলোকে জরিমানা করেছেন। এই ধরনের মোটা অংকের টাকা পরিশোধ করা তাদের পক্ষে সম্ভব না। জরিমানার প্রতিবাদে তারা অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘট শুরু করেছেন বলেও জানান মোকলেসুর রহমান।
তিনি বলেন, বর্তমানে রাজশাহী মহানগরীর প্রায়ি একশো বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ধর্মঘট চলছে। এ কারণে প্রাইভেট চিকিৎসকদের রোগী দেখাও বন্ধ আছে।
এছাড়া বহির্বিভাগেও কোনো চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে না। তবে যেসব রোগী আগে থেকে ভর্তি আছেন, তাদের চিকিৎসা স্বাভাবিক নিয়মেই চলছে। মঙ্গলবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত যেসব রোগীর বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছে, তাদের প্রতিবেদনও দেওয়া হচ্ছে বলে জানান মোকলেসুর রহমান।
এর আগে ২৪ জানুয়ারি (মঙ্গলবার) মহানগরীর লক্ষ্মীপুর এলাকার দু’টি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে অভিযান চালায় ভ্রাম্যমাণ আদালত। এ সময় মেয়াদ উত্তীর্ণ সার্জিক্যাল যন্ত্রপাতি ও ওষুধ রাখাসহ বিভিন্ন অনিয়ম ধরা পড়ায় সাড়ে ৭ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।
এদিন র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রে সারওয়ার আলম বলেন, অপারেশন থিয়েটারে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ ও সার্জিক্যাল সামগ্রী ও মেয়াদোত্তীর্ণ রিএজেন্ট ব্যবহার করে প্যাথলজিক্যাল টেস্ট রিপোর্ট দিচ্ছিছিল লক্ষ্মীপুর এলাকার আমানা ক্লিনিক।
এর অপারেশন থিয়েটার থেকে বিপুল পরিমাণ সার্জিক্যাল সুতা, ক্যাথেড্রাল ও অন্যান্য সার্জিক্যাল সামগ্রী জব্দ করা হয়। যা ২০১১ সালে মেয়াদোত্তীর্ণ হয়েছে। এছাড়া সরকারি হাসপাতালে বিনামূল্যে বিতরণযোগ্য সার্জিক্যাল সামগ্রীও জব্দ করা হয়েছে।
ক্লিনিকের ফার্মেসি ও ল্যাব থেকে বিপুল পরিমাণ মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ ও রিএজেন্ট (রাসায়নিক রোগ নির্ণায়ক) জব্দ করা হয়। এর কারণে সাড়ে ৩ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।
অপরদিকে রয়েল মেডিকেল হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটার থেকে বিপুল পরিমাণ সার্জিক্যাল সামগ্রী ও ওষুধ জব্দ করা হয়। যা ২০১২ সালে মেয়াদোত্তীর্ণ হয়েছে।
প্রতিষ্ঠানের প্যাথলজি ল্যাব হতে বিপুল পরিমাণ মেয়াদোত্তীর্ণ রিএজেন্ট ও ২৮টি স্বাক্ষরিত ব্লাংক প্যাথলজিক্যাল রিপোর্ট জব্দ করা হয়। এছাড়া ফার্মেসি থেকে বাংলাদেশে আমদানি নিষিদ্ধ ভারতের রাজস্থানের সরকারি সার্জিক্যাল আইটেম জব্দ করা হয়।
এ কারণে প্রতিষ্ঠানটিকে ৩ লাখ ৭৫ টাকা জরিমান করা হয়। পরে ভ্রাম্যমাণ আদালত রাজশাহী জেনারেল হাসপাতাল ও ডেলটা ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে চিকিৎসকের স্বাক্ষরিত ৬২টি ব্লাংক প্যাথলজিক্যাল টেস্ট রিপোর্ট জব্দ করেন।
এ কারণে প্রতিষ্ঠানটিকে এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।
বেসরকারি হাসপাতালে এসব অভিযানের খবর জানাজানি হলে দুপুর আড়াইটার দিকে ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক মালিকরা অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘটের ঘোষণা দেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৪২২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৫, ২০১৭
এসএস/জিপি/এমজেএফ