ঢাকা, শুক্রবার, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

খুলি সংক্রান্ত তথ্য দিতে অ্যাপোলোর গড়িমসি

মাজেদুল নয়ন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪২৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৮, ২০১৭
খুলি সংক্রান্ত তথ্য দিতে অ্যাপোলোর গড়িমসি অ্যাপোলো হাসপাতাল/ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা: সাংবাদিক জিয়া ইসলামের মাথার খুলির একাংশ রেখেই চিকিৎসার জন্য তাকে সিঙ্গাপুর পাঠিয়েছে অ্যাপোলো হাসপাতাল। ফুসফুসে সংক্রমণের বিষয়টিও জানাতে পারেননি তাদের চিকিৎসকরা।

এ বিষয়ে এখনও পর্যন্ত কোনো জবাব দেয়নি হাসপাতাল। উল্টো প্রতিবেদককে মন্তব্য দিতে এক দরজা থেকে আরেক দরজায় ঘোরাচ্ছে কর্তৃপক্ষ।

প্রথম আলোর ফটো সাংবাদিক জিয়া ইসলামের চিকিৎসায় অনিয়ম এবং অবহেলার অভিযোগ উঠেছে হাসপাতালটির বিরুদ্ধে। গত ১০ জানুয়ারি অ্যাপোলো হাসপাতালে জিয়ার অস্ত্রোপচার শেষে ৪৮ ঘণ্টার পর্যবেক্ষণে রাখা হয়। পরবর্তীতে ৪৮ ঘণ্টা শেষে তাকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে সিঙ্গাপুরে উন্নত চিকিৎসার জন্যে নিয়ে যাওয়া হয়।

১৩ জানুয়ারি সিঙ্গাপুরে রওনা দেওয়ার পূর্বে জিয়ার খুলির একটি অংশ দেয়নি অ্যাপোলো হাসপাতাল। এছাড়াও তার ফুসফুসে সংক্রমণের বিষয়টিও জানাতে পারেননি হাসপাতালটির চিকিৎসকরা।

জানা যায়, অধ্যাপক ডা. ম্যাথিও জে চ্যান্ডির অধীনে জিয়ার অস্ত্রোপচার সম্পন্ন হয়। এ সময় খুলির একটি অংশ অ্যাপোলো হাসপাতালের ফ্রিজে রাখা হয়। কিন্তু সিঙ্গাপুরে পাঠানোর সময় সেটা দিতে ভুলে যান সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকরা।

গত বৃহস্পতিবার (২৬ জানুয়ারি) চট্টগ্রাম থেকে প্রকাশিত দৈনিক পূর্বকোণের সম্পাদক তসলিম চৌধুরীকে চিকিৎসার জন্যে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে সিঙ্গাপুরে নিয়ে যাওয়া হয়। তিনি সেখানে মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে যান। ওই অ্যাম্বুলেন্সে করে জিয়ার খুলির বাকি অংশটি সিঙ্গাপুরে পাঠানো হয়।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিউরোসার্জারি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক অসিত চন্দ্র সরকার জানান, মানুষের মাথায় আঘাত লাগলে ব্রেন ফুলে যায়। তখন বেশি জায়গার প্রয়োজন হয়। ফলে হাড়ের অংশ খুলে রাখা হয়। এই অংশটি শরীরের ভেতরেও রেখে দেওয়া যায়। আবার বাইরেও রাখা হয় অনেক সময়। সেটি চিকিৎসকরা নোটে টুকে রাখেন।

তাহলে সিঙ্গাপুরে নেওয়ার সময় খুলির একটি অংশ না পাঠানোর কারণ জানতে শনিবার সকালে কথা হয় অ্যাপোলো হাসপাতালের ডিউটি ম্যানেজারের সঙ্গে। এ ধরনের তথ্য নিতে হলে হাসপাতালে যেতে হবে বলেও জানান তিনি।

দুপুরে হাসপাতালে পৌঁছে ডিউটি ম্যানেজারের সঙ্গে কথা হলে, তিনি সব কিছু গুছিয়ে তথ্য দিবেন বলে অপেক্ষা করতে বলেন। কিছুক্ষণ পর তিনি এই প্রতিবেদকে কর্পোরেট অফিসে নিয়ে যান এবং বিজনেস ডেভেলপমেন্ট বিভাগের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার আখতার জামিল আহমেদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন।

আখতার বলেন, আগামীকাল রোববার (২৯ জানুয়ারি) বিজনেস ডেভেলপমেন্ট বিভাগের জেনারেল ম্যানেজার এলে ফোন দিয়ে ডাকা হবে। তখন বিস্তারিত জানানো হবে।

জিয়াকে চিকিৎসা দেওয়া হাসপাতালের চিকিৎসক বর্তমানে দেশের বাইরে রয়েছেন বলেও জানান তিনি।

গত ৯ জানুয়ারি রাজধানীর পান্থপথে গাড়িচাপায় আহত হন মোটরসাইকেল আরোহী জিয়া। সেখান থেকে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। ১০ জানুয়ারি তাকে নেওয়া হয় অ্যাপোলো হাসপাতালে। সেদিনই তার মস্তিষ্কে অস্ত্রোপচার করে ৪৮ ঘণ্টা পর্যবেক্ষণে রাখা হয়।

পর্যবেক্ষণ শেষে উন্নত চিকিৎসার জন্যে ১৩ জানুয়ারি এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হয় ফটো সাংবাদিক জিয়া ইসলামকে।

ঢাকায় থাকতেই জিয়ার ফুসফুসে সংক্রমণ হলেও অ্যাপোলো হাসপাতালের চিকিৎসকরা সেটি জানাতে পারেননি। কিন্তু সিঙ্গাপুরে নেওয়ার পর তা ধরা পড়ে।

গত ১৬ জানুয়ারি জিয়ার ফুসফুসের সংক্রমণ নিরোধে গ্লিনিগালস হাসপাতালে অস্ত্রোপচার করা হয়। এ সময় তার মাথার খুলির বাম পাশটা দেখতে পাননি চিকিৎসকরা। এরপর সিঙ্গাপুর থেকে বিষয়টি জানানো হলে ঢাকার অ্যাপোলো হাসপাতাল খুলি পাঠানোর ব্যবস্থা করে।

বাংলাদেশ সময়: ২০১৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৮, ২০১৭
এমএন/এমজেএফ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।