বিশ্ব কিডনি দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক গোলটেবিল বৈঠকে বিশেষজ্ঞরা এমন তথ্য জানিয়েছেন।
স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ‘কিডনি অ্যাওয়ারনেস মনিটরিং অ্যান্ড প্রিভেশন সোসাইটি (ক্যাম্পস) আয়োজিত জাতীয় প্রেসক্লাবে শুক্রবার (৩ মার্চ) ‘স্থূলতা কিডনি রোগের ঝুঁকি বাড়ায়ঃ সুস্থ কিডনির জন্য সুস্থ জীবন ধারা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়।
বৈঠকে বক্তারা বলেন, শুধু আমেরিকায় অতি ওজনের জন্য অকাল মৃত্যুবরণ করে ৩ লাখের বেশি লোক এবং এদের চিকিৎসা ব্যয় হয় ১৫০ বিলিয়ন ডলার বা ১৪ লাখ ৪০ হাজার কোটি টাকা। যা আমাদের জাতীয় বাজেটের প্রায় চারগুণ।
তারা জানান, শুধু লাইফস্টাইল পরিবর্তন করে ৬৮ শতাংশ মৃত্যু ঝুঁকি কমানো সম্ভব। আর এ জন্য প্রতিদিন কমপক্ষে ৩০ মিনিট হাঁটা, পর্যাপ্ত ফলমূল ও শাকসবজি খাওয়া, ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা এবং ধূমপান মুক্ত থাকা।
কিডনি ফাউন্ডেশনের চেয়াম্যান অধ্যাপক ডা. হারুন অর রশিদ বলেন, দেশে ব্যাপক সংখ্যক কিডনি রোগীর তুলনায় ডায়ালাইসিস সেন্টার খুবই কম; মাত্র ৯৬টি এবং ১৮ হাজার রোগী এসব সেন্টারে সপ্তাহে ২ বার করে ডায়ালাইসিস পায়। বেসরকারি সেন্টারগুলোতে ৩৫০০ থেকে ৫০০০ টাকা পর্যন্ত পর্যন্ত ডায়ালাইসিস মূল্য রাখা হয়।
তিনি বলেন, সাউথ এশিয়াতে মোট কিডনি রোগীর তুলনায় মাত্র ১৫ শতাংশ রোগী ডায়ালাইসিসের সুযোগ পায়, বাকি বিশাল সংখ্যক রোগী অর্থাভাবে ডায়ালাইসিস নিতে পারে না। তাই বাংলাদেশে ডায়ালাইসিস খরচ কমাতে সরকারি-বেসরকারিভাবে বাস্তবিক উদ্যোগ নিতে হবে।
গোলটেবিল আলোচনায় অন্যদের মধ্যে অংশ নেন- বাংলাদেশ রেনাল অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব অধ্যাপক ডা. ম. মহিবুর রহমান, কুমুদিনী ওমেন্স মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রিন্সিপাল অধ্যাপক ডা. আব্দুল হালিম, এটিএন বাংলা’র উপদেষ্টা কর্নেল মীর মোতাহার হোসেন, বেলা’র নির্বাহী পরিচালক রেজওয়ানা হাসান, দৈনিক ইত্তেফাকের নির্বাহী সম্পাদক শাহীন রেজা নূর, বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক গাজী আশরাফ হোসেন লিপু, সাবেক ডিস্ট্রিক্ট গভর্নর জে এল ভৌমিক প্রমুখ।
বক্তাদের দাবি, অপরিকল্পিত নগরায়নের ফলে হাঁটার পরিবেশ নেই। ফুটপাথ হকারদের দখলে। অধিকাংশ স্কুল-কলেজে খেলার মাঠ নেই। ফলে ছেলেমেয়েরা ফেসবুক, ভিডিও গেমস, টিভি দেখার প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছে। এতে অলস নিস্ক্রিয় জীবন যাপনে অভ্যস্থ হয়ে পড়ছে তারা।
ল্যাবএইড স্পেশালাইজড হাসপাতালের কিডনি বিভাগের প্রধান ও ক্যাম্পস’র প্রতিষ্ঠাতা এবং সভাপতি বিশিষ্ট কিডনি রোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. এম এ সামাদ আলোচনায় মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন।
তিনি বলেন, বিশ্ব কিডনি দিবসের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে কিডনি রোগের ব্যাপকতা ও ভয়াবহতা সম্পর্কে বিশ্বের মানুষকে সচেতন করা ও কিডনি বিকল প্রতিরোধে প্রাথমিক অবস্থায় কিডনি রোগ শনাক্ত করে চিকিৎসা করা এবং সুস্থ জীবন ধারায় সবাইকে অভ্যস্ত করা।
ডা. এম এ সামাদ বলেন, পৃথিবীব্যাপী কিডনি রোগের হার অত্যন্ত ব্যাপক। বাংলাদেশে প্রায় ২ কোটি লোক কোনো না কোনো কিডনি রোগে আক্রান্ত। কিডনি বিকলের চিকিৎসা অত্যন্ত ব্যয়বহুল। বিধায় এদেশের শতকরা ১০ জন রোগী এ চিকিৎসা চালিয়ে যেতে পারে না। অর্থাভাবে অকালে প্রাণ হারান বেশির ভাগ রোগী। পক্ষান্তরে একটু সচেতন হলে ৫০ থেকে ৬০ ভাগ ক্ষেত্রে কিডনি বিকল প্রতিরোধ করা সম্ভব। এজন্য প্রয়োজন প্রাথমিক অবস্থায় কিডনি রোগের উপস্থিতি ও এর কারণ শনাক্ত করে তার চিকিৎসা করা।
চিকিৎসা করে নয় বরং প্রতিরোধ করেই কিডনি রোগের প্রাদুর্ভাব প্রশমন করতে হবে। আর এ জন্য সচেতনতাই একমাত্র উপায়। এমনটাই মত দেন বিশেষজ্ঞ আলোচকরা।
বাংলাদেশ সময়: ১৬২৫ ঘণ্টা, মার্চ ০৪, ২০১৭
টিআই