কিন্তু বিড়ি কোম্পানিগুলোর অভিযোগ, অব্যাহতভাবে সিগারেটকে বাদ দিয়ে বিড়ির উপর অধিক হারে শুল্ক আরোপ করা হচ্ছে। আসছে বাজেট অধিবেশনেও বিড়ির উপর উচ্চ শূল্ক আরোপ করতে যাচ্ছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।
সম্প্রতি প্রাক বাজেট আলোচনায় দুই বছরের মধ্যে দেশ থেকে বিড়ি বিদায় করার ঘোষণা দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। কিন্তু ধূমপান পুরোপুরি বন্ধ করার কোনো কথা না থাকায় তার এই ঘোষণায় শঙ্কিত লক্ষ লক্ষ বিড়ি শ্রমিক। তাদের ধারণা, বিড়ি শিল্পের মালিকরা হয়তো ব্যবসা পরিবর্তন করে অন্য ব্যবসা করবেন। কিন্তু সাধারণ শ্রমিকরা বেকার হয়ে যাবেন। তাই বিড়ি শ্রমিকদের বিকল্প কর্মসংস্থানের দাবি উঠেছে বেশ জোরের সঙ্গে।
বিড়ি মালিক সমিতির তথ্যানুযায়ী, বর্তমানে সারাদেশে ছোট-বড় ৮০টির মতো বিড়ি শিল্প রয়েছে। যা আগে ছিলো ২৫০টি। এই শিল্পে বর্তমানে ১০ থেকে ১৫ লাখ শ্রমিক সরাসরি জড়িত। এদের মধ্যে ৮০ শতাংশই নারী ও শিশু শ্রমিক। বিড়ি শিল্প বন্ধ হলে এসব শ্রমিক বেকার হয়ে যাবেন।
বাংলাদেশ জনমিত স্বাস্থ্য জরিপের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, বর্তমানে বাংলাদেশে মোট পুরুষের মধ্যে তামাক সেবনে আসক্ত মানুষের সংখ্যা ৮০ শতাংশ। এরমধ্যে সিগারেটে ৬০ এবং বিড়িতে ২০ শতাংশ। অন্য এক জরিপে দেখা যায়, তরুণ ধূমপায়ীদের মধ্যে ৯৮ শতাংশ সিগারেটে আসক্ত, আর বিড়িতে মাত্র ২ শতাংশ। তাই এতো কম বিড়ি ধূমপায়ী বিলুপ্ত করে কিভাবে ধূমপান কমানো যাবে তা নিয়েও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। তাই উঠেছে বিড়ির চেয়ে সিগারেটে অধিক হারে কর আরোপের দাবি।
২০১৬-১৭ অর্থবছরে বিড়ির ওপর মোট শুল্ক হার দাঁড়িয়েছে ৬৫ শতাংশ। বিড়ির ওপর শুল্ক হার বেড়েছে ৬২.৮৮ শতাংশ এবং সিগারেটের ওপর শুল্ক হার বেড়েছে ৩১.৮৩ শতাংশ। অর্থাৎ বিড়িকে ধ্বংস করে সিগারেটে উৎসাহিত করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে বিড়ি মালিক সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আনোয়ার হোসেন রানা বাংলানিউজকে বলেন, তামাক বন্ধ করতে চাইলে আমরা স্বাগত জানাতাম। কিন্তু গরীবের ধূমপান বিড়ি বন্ধ করে বহুজাতিক কোম্পানির হাতে বাজার তুলে দেওয়ার ষড়যন্ত্র মেনে নেওয়া যায় না। আমরা ধারণা করছি, কোন মহল থেকে মন্ত্রীকে ভুল বুঝানো হয়েছে। ব্রিটিশ আমেরিকান কোম্পানিতে সরকারের সাবেক ও বর্তমান আমলারা জড়িত রয়েছেন। এমনকি সরকারের ১৩ শতাংশ শেয়ারও রয়েছে। তাই তারা চাচ্ছেন বিড়িকে বিদায় করে সিগারেটের একক রাজত্ব কায়েম করতে।
সিগারেট নাকি বিড়ি কোনটিতে বেশী ক্ষতি এর উত্তর জানতে কথা হয় জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ মুহাম্মদ আব্দুস সবুর এর সঙ্গে। বাংলানিউজকে তিনি বলেন, ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতি। বিড়ি, সিগারেট, জর্দা, গুল একইভাবে স্বাস্থ্যের জন্য হুমকি। নিকোটিন জাতীয় দ্রব্য স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।
বাংলাদেশ বিড়ি শ্রমিক ফেডারেশনের যুগ্ম সম্পাদক আব্দুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, অর্থমন্ত্রী সিগারেট, গুল, জর্দা বাদ দিয়ে প্রতি অর্থবছরেই বিড়ির উপর উচ্চ হারে ট্যাক্স বসাচ্ছেন। উনি (অর্থমন্ত্রী) যেহেতু বলেছেন, দুই বছরের মধ্যে বিড়িকে বিদায় জানাবেন। তার মানে এই অর্থ বছরে অত্যধিক হারে ট্যাক্স বসাবেন। এবার কোমর ভাঙবেন, আগামী বছরে মাথা ভাঙবেন। এতে বিড়ে শিল্পের শ্রমিকরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।
** বিড়ি ও সিগারেটে সমান কর প্রণয়নের দাবিতে বিক্ষোভ
বাংলাদেশ সময়: ১৪২০ ঘণ্টা, মে ১৭, ২০১৭
এসএম/জেডএম