এছাড়া, মৃত্যুর পরপরই ‘নতুন রোগে’ মারা গেছে বলে ডাক্তাররা জানিয়েছিলেন বলে অভিযোগ করেন স্বজনরা।
গত ১০ মে দিবাগত মধ্যরাতে রাতে জ্বরাক্রান্ত সামিউল হোসাইন সানিকে(১৬) স্বজনরা শমরিতা হাসপাতালে নিয়ে গেলে তাকে ভর্তি করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
এ ঘটনায় সানির বড়ভাই বিল্লাল হোসাইন সোহেল বাদী হয়ে ১৬ মে শেরেবাংলা নগর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। তাতে তিনি ডাক্তারদের অবহেলার কারণে রোগীর মৃত্যু হয়েছে বলে উল্লেখ করেন।
মামলায় হাসপাতালের ডাক্তার মো. জিয়াউল করিম, হাইকেয়ার ইউনিটের প্রফেসর এমএন আলম, ডাক্তার শাকিল আহমেদ শুভ্র, ডাক্তার রাম কুমার চৌধুরী, ডাক্তার মাহবুব, ওয়ার্ডবয় কামাল, ব্রাদার রবীন্দ্র ওরফে রবিনসহ মালিক কর্মকর্তা কর্মচারীদের আসামি করা হয়েছে। বড়ভাই সোহেল বাংলানিউজকে বলেন, ১০ মে দুপুর থেকেই সানি জ্বর অনুভব করছিল। প্যারাসিটেমলে জ্বর না কমায় রাত পৌনে একটার দিকে সানিকে ইন্দিরা রোডের বাসা থেকে শমরিতা হাসপাতালে নিয়ে যাই। তারপর, ইমারজেন্সিতে ডাক্তার জিয়াউল করিম ও ব্রাদার রবিন রাত একটার দিকে সানিকে ভর্তি করেন। যাওয়ার পরপরই সানিকে তারা দুইটি ওষুধ একসাথে মিশিয়ে একটি ইনজেকশান এবং একটি স্যালাইন দেন।
রাত সোয়া একটার সময় সানিকে হাসপাতালের অষ্টম তলায় হাই কেয়ার ইউনিটে (এইচসিএন-১) প্রফেসর এম এন আলমের কাছে রেফার করেন। আমরা বারবার আমার ভাইয়ের অবস্থা জানতে চাইলে তারা আমাদের কিছুই বলে না। আমরা থাকা অবস্থায় তারা কয়েকবার নিচে গিয়ে বিভিন্ন ধরনের ওষুধ ও ইনজেকশান আনেন। সোহেল বলেন, এর প্রায় আধা ঘণ্টা পরে ইমারজেন্সির ডাক্তার জিয়াউল করিম ওই রুমে যান। তারও প্রায় ২০ মিনিট পর ডাক্তাররা বের হয়ে আমাকে জিজ্ঞাসা করেন, আপনার ভাইয়ের নাক মুখ দিয়ে রক্ত ঝরছে কেন? আমি অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করলাম, আমি কীভাবে বলব কেন রক্ত ঝরছে? তার পরপরই ডাক্তাররা বলেন, ‘আপনার ভাই মারা গেছেন। কি কারণে মারা গেছে জানতে চাইলে তারা একেক জন একেক ধরনের তথ্য দিতে থাকেন। একজন বলেন, একটা নতুন এক রোগে মারা গেছে। ’
তাদের কথায় সন্দেহ হলে ভেতরে যেতে চাইলেও ডাক্তাররা বাধা দেন উল্লেখ করে সোহেল বলেন, ‘তাদেরকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে ভেতরে গিয়ে দেখি দুইজন পুরুষ রুম পরিষ্কার করছেন। বেডের সামনের পর্দা সরিয়ে দেখি, সানির কান, মুখ, চোখ, নাক দিয়ে রক্ত পড়ছে। মুখে লাগানো একটি পাইপ দিয়ে গড়ানো রক্তে একটি জার ভরে গেছে। ’
‘পরে মা কান্নাকাটি শুরু করে, মাকে নিয়ে হাসপাতালের গ্রাউন্ড ফ্লোরে এসে দেখি সানির ডেড বডিও নিচে নামিয়ে ফেলা হয়েছে। তারা অ্যাডমিশন চার্জ বাবদ নেওয়া তিন হাজার টাকা ফেরত দেয় এবং হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্সে ফ্রি পৌঁছে দেওয়ার কথা বলে। ’
সোহেল বলেন, ‘রোগীর ডেথ সার্টিফিকেটে লেখা হয়: Diagnosis: Dengue hemorrhagic fever. Cause of death: Irreversible cardio respiratory failure. অথচ ভর্তি করানোর সময় ডেঙ্গুর কথা বলা হয়নি। ব্লাড প্রেসারও ঠিক আছে বলে উল্লেখ করেছিলেন ডাক্তাররা। ডেঙ্গুতে মারা গেছে মানলাম, ডেঙ্গুর রিপোর্ট চাইলেও কর্তৃপক্ষ আমাদের দেয়নি। তারা মৃত্যুর সময়টাও প্রেসক্রিপসন ও ডেথ সার্টিফিকেটে আলাদা উল্লেখ করেন। পরে শুধুমাত্র ডেথ সার্টিফিকেট ছাড়া আর কোন কাগজপত্রই আমাদেরকে দেওয়া হয়নি। ভুল চিকিৎসাতেই সানির মৃত্যু হয়েছে। এটা লুকাতে তারা ছলচাতুরির আশ্রয় নেয়।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শেরে বাংলা নগর থানার উপ-পরিদর্শক(এসআই) খোকন মিয়া বাংলানিউজকে বলেন, আমি দুই পক্ষের সাথেই কথা বলেছি। তদন্ত চলছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৪১১ ঘণ্টা, মে ১৮, ২০১৭
পিএম/জেএম