শনিবার (২০ মে) রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপের মিলনায়তনে (ইডব্লিউএমজি) গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা এ অভিমত ব্যক্ত করেন। বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ঋতু ও বাংলাদেশ প্রতিদিনের যৌথ উদ্যোগে ‘ঋতুকালীন স্বাস্থ্য নিশ্চিতে বাধা ও এর ভবিষ্যত: সরকারি-বেসরকারি-ব্যক্তিগত খাতের ভূমিকা’ শীর্ষক বৈঠকের আয়োজন করা হয়।
বক্তারা বলেন, ঋতুস্রাব একটি প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া। প্রতিদিন গড়ে ৮ মিলিয়ন নারী ঋতুস্রাব প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যান। তথ্য ঘাটতি ও লজ্জায় তারা অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে এই সময়টা পার করেন। ফলে অনেক জটিল রোগের জন্ম হয় এই অজ্ঞতার কুসংস্কার থেকে। তাই ঋতুস্রাব বিষয়ে জানতে সমাজিক প্রতিষ্ঠান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং পরিবারে খোলাখুলি কথা বলা প্রয়োজন।
বেসরকারি সংস্থা ওয়াটার এইডের কান্ট্রি ডিরেক্টর ড. খাইরুল ইসলামের সভাপতিত্বে গোলটেবিল বৈঠকে বিশেষ অতিথি ছিলেন মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা অধিদফতরের পরিচালক ড. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন। অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন বাংলাদেশ প্রতিদিন সম্পাদক ও সংবাদভিত্তিক টিভি চ্যানেল নিউজ টোয়েন্টিফোর এবং রেডিও ক্যাপিটালের প্রধান নির্বাহী নঈম নিজাম। তিনি বলেন, মেয়েদের বয়ঃসন্ধিকাল বিষয়ে যে সমস্যা তৈরি হয় তা আলোচনার বিষয়। অথচ মিডিয়াকর্মী হিসেবে কাজ করতে গিয়ে দেখেছি মানুষের মাঝে সচেতনতার অভাব রয়েছে। আমরা যতোই ডিজিটাল যুগে প্রবেশ করি না কেন এখনও গ্রামাঞ্চলে মানুষের মধ্যে কুসংস্কার বিদ্যমান।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ড. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, নারী স্বাস্থ্য ও লিঙ্গ বৈষম্যদূরীকরণ বিষয়ে সরকারের অনেকগুলো প্রজেক্ট চলমান রয়েছে। সমস্যা সমাধানে আমাদের মূলত দরকার লিঙ্গ সমতা নিশ্চিতকরণ।
নারী স্বাস্থ্য সচেতনতা বিষয়ে বাংলাদেশ প্রতিদিনের যুগ্ম-সম্পাদক আবু তাহের বলেন, ‘মিন্সট্রেশন হাইজিন ডে’ বা এমএইচএমএম- বিষয়গুলো অধিকাংশ মানুষেরই জানা নেই। নারীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় তাই এ বিষয়ে আলোচনা বাড়ানো উচিত।
স্বাগত বক্তব্য দেন রেড অরেঞ্জের কৌশলী যোগাযোগ উপদেষ্টা আইরিন বার্টেলডস। তিনি বলেন, নারীদের ঋতুস্রাব বিষয়টিকে সমাজে ট্যাবু বা নিষিদ্ধ বিষয় হিসেবে মনে করা হয়। এ জন্য খোলাখুলি কেউ কারো সঙ্গে আলোচনা করেন না। ঋতুস্রাব সচেতনতা বাড়াতে ভাঙতে হবে সামাজিক প্রতিবন্ধকতা।
রিপ্রোডাকটিভ হেলথ সার্ভিসেস ট্রেইনিং অ্যান্ড এডুকেশন প্রোগ্রামের (আরএইচস্টেপ) নির্বাহী পরিচালক কাজী সুরাইয়া সুলতানা বলেন, মিন্সট্রেশনের ফলে নারীদের মধ্য দিয়ে পৃথিবীতে প্রজন্মের বিস্তার ঘটছে। সোশ্যাল ট্যাবুর বিষয়টাকে আলোচনায় আনতে হবে। মূলত প্রতিবন্ধকতা বৈষম্যের তৈরি করছে। এদিকে সমাজে প্রতিবন্ধী নারীরাও আছেন; তাদের আরও বেশি চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয় এই ব্যাপারে।
বৈঠকে বক্তাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, ওয়াশ এলায়েন্স বাংলাদেশ’র (বিডব্লিউএ) কান্ট্রি কোঅর্ডিনেটর অলক কুমার মজুমদার, দাতা সংস্থা সিমাভি’র প্রোগ্রাম ম্যানেজার মাহবুবা হক কুমকুম, হেলথ ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের পরিচালক ড. নাজমুস এস সাদিক, পার্টনারস ফর বেটার লাইফ’র প্রধান নির্বাহী মো. মাহফুজুল বারী চৌধুরী, বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘের উপ-পরিচালক শাহনাজ সুমী, এস এম সি’র বিপণন ব্যবস্থাপক মিজানুর রহমান, বেসরকারি টিভি চ্যানেল বাংলাভিশনের সম্প্রচার ও প্রকৌশল বিভাগের সিনিয়র এক্সিকিউটিভ তাহমিনা শিল্পী, বি-স্ক্যানের সাধারণ সম্পাদক সালমা মাহবুব, দুস্থ স্বাস্থ্য কেন্দ্রের যুগ্ম-পরিচালক ডা. কল্লোল চৌধুরী, বন্ধু সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার সোসাইটির ন্যাশনাল প্রোগ্রাম কোঅর্ডিনেটর সাঈদা বিলকিস বাণী, নারী পক্ষ’র প্রকল্প কর্মকর্তা মাকসুদা খাতুন, এসিআই’র বিজনেস ডিরেক্টর মো. কামরুল হাসান, ঢাকা আহসানিয়া মিশনের ওয়াশ সেক্টরের প্রধান মো. মোসাব্বের হোসেন, ইউনাইট ফর বডি রাইটস এলায়েন্স বাংলাদেশে’র টিম লিডার ডা. আয়েশা সিদ্দিকা, এনজিও কর্মী খাইন আজান থিংগি উ বুবু, নিরাপদ-২ সংগঠনের টিম লিডার খালেদা ইয়াসমিন, প্ল্যান ইন্টারন্যাশনালের সহকারী প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. অনন্যা আসাদ, সিমাভি’র পিএমইএল অফিসার খবির আহমেদ, আইসিডিবি’র রিসার্চ ইনভেস্টিগেটর ফারহানা সুলতানা, গ্লোব বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক শেখ মো. জুনায়েদ আলী, বেসরকারি সংস্থা ডব্লিউ এস ইউ পি বাংলাদেশে’র হাইজেনিক স্পেশালিস্ট আকলিমা খাতুন, এনজিও ফোরাম ফর পাবলিক হেলথের প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর মীম তাবাসসুম, স্বাস্থ্য ও পুষ্টি আই সি ডি পি’র ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার মুহম্মদ বোরহান উদ্দীন, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ডরপ’র পরিচালক (গবেষণা ও পরিকল্পনা) মোহাম্মদ যোবায়ের হাসান, ইনভায়রনমেন্টাল ইন্টারভেনসনস ইউনিটের লিড অ্যান্ড প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর ডা. মো. মাহবুবুর রহমান, এস এম সি’র হেড অব মার্কেটিং খন্দকার শামীম রহমান, রেড অরেঞ্জ মিডিয়া অ্যান্ড কমিউনিকেশনের হেড অব প্রোগ্রামারস নাকিব রাজিব আহমেদ, রেড অরেঞ্জ মিডিয়া অ্যান্ড কমিউনিকেশনের হেড অব ফিন্যান্স-অ্যাডমিন কে এম শহিদুল ইসলাম প্রমুখ।
সভাপতির বক্তব্যে ড. খাইরুল ইসলাম জোর দেন, ঋতুস্রাবের বিষয়ে কাজ করতে এনজিওগুলোর মধ্যে সমন্বয় বাড়ানোর দিকে।
বাংলাদেশ সময়: ২১২৬ ঘণ্টা, মে ২০, ২০১৭
আইএ