বুধবার (১৪ জুন) বিকেলে কারখানাটিতে গিয়ে দেখা গেছে, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খাদ্যপণ্য তৈরি হচ্ছে। ময়দা পিষিয়ে তৈরি মণ্ড দিয়ে সেমাই এবং ময়লা-আবর্জনার স্তুপ ও টয়লেটের পাশে ভিজিয়ে রাখা ডাল দিয়ে চানাচুর, বিস্কুট, মুরালি, চমচমসহ বিভিন্ন খাদ্যপণ্য তৈরি করছেন অপরিচ্ছন্ন থাকা শ্রমিকরা।
ভোক্তাদের অভিযোগ, সদরের বিসিক শিল্প এলাকা, বিবিরবাজার, লাকসাম, সদর দক্ষিণ, বুড়িচংসহ পুরো কুমিল্লা জেলাজুড়েই এভাবেই অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তৈরি হচ্ছে নিম্নমানের সেমাই, চানাচুর, বিস্কুট, চমচম, মুরালিসহ বিভিন্ন খাদ্যপণ্য। আর এসব পণ্যে বিভিন্ন নামি-দামি ব্র্যান্ডের প্যাকেট ও লোগো লাগিয়ে বাজারজাত করা হচ্ছে।
ফলে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ছেন সব বয়সের নারী-পুরুষেরা। এন কে ফুড প্রোডাক্টস্ কারখানায় আরও দেখা গেছে, প্রবেশপথেই ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে বড়-বড় তেলের ড্রাম। ভেতরের একটি কক্ষের মেঝেতে বসে চানাচুর প্যাকেট করায় ব্যস্ত ১০-১৫ জন নারী শ্রমিক।
আরও ভেতরে চলছে সেমাই তৈরির কাজ। খালি গায়ে ৪/৫ জন শ্রমিক অপরিচ্ছন্নভাবে ময়দা পিষিয়ে মণ্ড তৈরি করছেন, যাদের মধ্যে রয়েছে ৮/৯ বছরের শিশুও। একপাশে খালি গায়ে ঘামে ভেজা শরীরে দু’টি চুলায় গাদযুক্ত তেলে সেমাই ভাজছেন শ্রমিকরা। অন্যপাশে মাটিতেই রাখা হচ্ছে ভাজা সেমাই।
আশে-পাশে ময়লা-আবর্জনার স্তুপ, টয়লেটের পাশে বড় দু’টি কড়াইয়ের মধ্যে ভিজিয়ে রাখা হয়েছে ডাল। এ ডাল দিয়ে তৈরি হবে চানাচুর, বিস্কুট, মুরালি, চমচমসহ বিভিন্ন খাদ্য।
পাশের একটি কক্ষে খালি গায়ে লুঙ্গি পরা শ্রমিকরা মেঝেতে বসে সেমাই প্যাকেট করছেন। বিভিন্ন নামি-দামী ব্র্যান্ডের প্যাকেট রাখা হয়েছে পাশে। একই সেমাই বিভিন্ন প্যাকেটে প্যাকিং করা হচ্ছে।
এসব সেমাই চলে যাচ্ছে বুড়িচং উপজেলার বুড়িচং সদর বাজার, কংশনগর বাজার, দেবপুর বাজার, ময়নামতি বাজার, ক্যান্টনমেন্ট, নিমসার বাজার ও কাবিলা বাজার ছাড়াও ব্রাহ্মণপাড়া, দেবিদ্বার, বড়ুরা, চান্দিনাসহ বিভিন্ন উপজেলায়।
অস্বাস্থ্যকর এসব খাদ্য খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন অনেকেই। কারখানার মালিক খোরশেদ আলম জানান, অদুদ মিয়ার বাড়িটি এক বছর আগে ১৫ হাজার টাকায় ভাড়ায় নিয়ে এ কারখানা চালু করা হয়। অপরিচ্ছন্ন ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘পরে কথা বলবো’।
জেলাজুড়ে এসব কারখানার অনেকগুলোরই ট্রেড লাইসেন্স ও বিএসটিআই’র অনুমোদন নেই বলেও অভিযোগ করছেন ক্রেতারা।
কুমিল্লা বিএসটিআই’র ফিল্ড অফিসার রিয়াজ হোসেন মোল্লা বাংলানিউজকে বলেন, ‘জেলাজুড়ে আমাদের ভেজালবিরোধী অভিযান চলছে। আমরা প্রতিদিনই বিভিন্ন কারখানা-দোকানে অভিযান পরিচালনা করে মামলা-জরিমানা করছি। অভিযান অব্যাহত থাকবে’।
বাংলাদেশ সময়: ১১৪৪ ঘণ্টা, জুন ১৫, ২০১৭
এএসআর