বিশেষ করে দিনের চেয়ে রাতে বেশি বিপাকে পড়তে হচ্ছে ভর্তি থাকা রোগীদের। নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন নারী রোগীরা।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, হাসপাতালটিতে ২০০৯ সালে ৪০ কেভির অত্যাধুনিক শক্তিশালী জেনারেটর বরাদ্দ দেওয়া হয়। কিন্তু জ্বালানি তেল কেনার অর্থ বরাদ্দ না থাকায় জেনারেটরটি আজ পর্যন্ত চালু করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। জেনারেটরটি চালু করলে প্রতি ঘণ্টায় প্রায় ৬-৭ লিটার জ্বালানি তেলের প্রয়োজন হবে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে আইপিএস ব্যবহার করা হতো। কিন্তু মাস দু’য়েক আগে দুর্বল হয়ে যাওয়ায় সেটিও ব্যবহার করা যাচ্ছে না। ফলে বিদ্যুৎ চলে গেলে রাতে কর্তব্যরত নার্স, চিকিৎসক ও রোগীদের ঝুঁকি নিয়েই থাকতে হচ্ছে।
রাতে সরজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, বিদ্যুতের বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় মোমবাতি ব্যবহার করছেন অনেক রোগী। দরিদ্র রোগীরা অন্ধকারে বসে আছেন বিদ্যুতের অপেক্ষায়। আর নার্স ও চিকিৎসকরা টর্চ লাইটের আলো দিয়ে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।
হাসপাতালের পুরুষ ওয়ার্ডে ভর্তি উপজেলার নবাবপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা আকতারুজ্জামান খান (৪০) বাংলানিউজকে বলেন, রাতে বিদ্যুৎ চলে গেলে মনে হয়, এটি হাসপাতাল নয়, ভূতের আস্তানা। এতো বড় হাসপাতালে বিদ্যুৎ চলে গেলে বিকল্প ব্যবস্থা থাকবে না, তা ভাবাই যায় না।
উপজেলার নারুয়া ইউনিয়নের গাড়াখোলা গ্রামের কাদের মণ্ডলের সঙ্গে থাকা তার মা আছিয়া খাতুন (৬০) ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘এখানে সুস্থ মানুষ থাকলে অসুস্থ হয়ে যাবে। আজ প্রায় ৫-৬ দিন ছেলেকে নিয়ে এখানে রয়েছি। রাতে কারেন্ট চলে গেলে খুবই কষ্ট হয়। সেদিন রাতে অন্ধকারে আমাদের খাবার বিড়ালে খেয়ে গেছে’।
মহিলা ওয়ার্ডে ভর্তি বহরপুর ইউনিয়নের বাঘুটিয়া গ্রামের রাম বিশ্বাসের স্ত্রী অনিতা বিশ্বাস (৪৫) বলেন, ‘বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় রাতে বিদ্যুৎ চলে গেলে পুরো ওয়ার্ডটি অন্ধকার হয়ে যায়। তখন আমরা সম্পূর্ণ নিরাপত্তাহীনতায় থাকি’।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. ফারুক হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, ‘বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় বিদ্যুৎ চলে গেলে রোগী দেখতে আমাদের ভীষণ অসুবিধায় পড়তে হচ্ছে’।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সুফিয়া ইয়াসমিন বলেন, হাসপাতালের জন্য বরাদ্দকৃত জেনারেটরটি জ্বালানি তেলের অভাবে চালু করা সম্ভব হচ্ছে না। বিকল্প আইপিএসটিও দুর্বল হয়ে যাওয়ায় বেশ কিছু দিন ধরে রোগীদের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় আলোর ব্যবস্থা করতে হচ্ছে’।
‘রোগীদের দুর্ভোগ কমাতে সোলার প্যানেলের জন্য উপজেলা পরিষদের কাছে লিখিত আবেদন করেছি। আশা করছি, খুব দ্রুত সোলার প্যানেলটি পেয়ে যাবো’।
বালিয়াকান্দি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আবুল কালাম আজাদ বাংলানিউজকে বলেন, রোগীদের অসুবিধার কথা ভেবে মাসিক সমন্বয় সভায় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন সোলার প্যানেল বরাদ্দের সিদ্ধান্ত হয়েছে। খুব দ্রুতই সমস্যার সমাধান হবে।
বাংলাদেশ সময়: ২০৩৫ ঘণ্টা, জুন ২৩, ২০১৭
এএসআর