ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

‘ওরাল সেক্সে’ বাড়ছে গনোরিয়া ঝুঁকি 

স্বাস্থ্য ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২০৯ ঘণ্টা, জুলাই ৯, ২০১৭
‘ওরাল সেক্সে’ বাড়ছে গনোরিয়া ঝুঁকি  গনোরিয়ার চিকিত্সা অসম্ভব হয়ে উঠছে জানিয়ে সতর্ক করেছেন বিশেষজ্ঞরা

ঢাকা: শারীরিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে জন্মনিরোধক (কনডম) ব্যবহারে অনীহার কারণে ছড়িয়ে পড়ছে গনোরিয়া। আর মৌখিক যৌনতা বা ওরাল সেক্সের কারণে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী এ রোগের আক্রান্ত হওয়ার মাত্রা আরও ভয়াবহ আকারে বাড়ছে।  

সতর্ক করে শুক্রবার (০৭ জুলাই) প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) এ তথ্য জানিয়েছে।  

প্রতিবেদনে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যৌনতার মাধ্যমে ছড়ানো এই রোগের সংক্রমণ শক্তিশালী অ্যান্টিবায়োটিককে প্রতিরোধ করে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে।

এই রোগ নিরাময়ে কার্যকরী নতুন ওষুধ খুব বেশি নেই।  

‘এ কারণে বিষয়টি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। সারা বিশ্বে প্রতিবছর প্রায় ৭ কোটি ৮০ লাখ মানুষ যৌনতার মাধ্যমে সংক্রমণজনিত গনোরিয়া রোগে আক্রান্ত হয়। এর কারণে বন্ধ্যা হয়ে যাওয়ার মতো পরিস্থিতিও হতে পারে। ’

৭৭টি দেশের তথ্য বিশ্লেষণ করে ডব্লিউএইচও এর প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, দিনেদিনে যৌনবাহিত রোগ গনোরিয়া ভয়াবহভাবে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী হয়ে উঠছে। এভাবে যদি কারও গনোরিয়া হয়ে যায়, তাহলে এই সময়ে তা নিরাময় করা বেশ কঠিন। অনেক ক্ষেত্রে তা অসম্ভবও হতে পারে। গনোরিয়ার জীবাণু যৌনাঙ্গ, মলদ্বার এবং গলার ভেতরে সংক্রমণ ঘটায় বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।  

এতে আরও বলা হয়, নেইসেরিয়া গনোরিয়া প্রজাতির ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণে মানুষের গনোরিয়া হয়। এটা স্বাভাবিক যৌনতা, ওরাল সেক্স ও পায়ুকামের মাধ্যমে ছড়ায়। এ রোগ হলে যৌনাঙ্গ থেকে সবুজ বা হলুদাভ পুঁজের মতো বের হতে পারে, প্রস্রাবের সময় জ্বালাপোড়া এবং নারীদের ক্ষেত্রে ঋতুস্রাবের সময় অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হতে পারে।

আক্রান্ত পুরুষদের মধ্যে প্রতি ১০ জনে প্রায় একজন ও তিন-চতুর্থাংশ নারীদের এবং সমকামী পুরুষদের ক্ষেত্রে এ রোগের লক্ষণ সহজে শনাক্ত করা যায় না। এ রোগ প্রতিরোধ করা না গেলে বন্ধ্যাত্বের মতো ঘটনাও হতে পারে। আর গর্ভাবস্থায় এ রোগের সংক্রমণ হলে তা ছড়িয়ে পড়তে পারে শিশুর শরীরেও।

ডব্লিউএইচও-এর বিশেষজ্ঞ থিওডোরা উয়ি বলেন, গনোরিয়া ছড়িয়ে পড়ছে দেশে দেশে। জাপান, ফ্রান্স ও স্পেনে কমপক্ষে তিনটি ঘটনা পাওয়া গেছে, যেখানে গনোরিয়া রোগটি পুরোপুরি নিরাময় সম্ভব নয়।

তিনি বলেন, ‘গনোরিয়ার জীবাণু খুবই স্মার্ট। এর চিকিৎসায় যতবার নতুন ধরনের অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করবেন, ততবারই তা ওই অ্যান্টিবায়োটিককে প্রতিরোধ করতে পারে। আরও চিন্তার বিষয় হলো, এই রোগটি দরিদ্র দেশগুলোতে সবচেয়ে বেশি হচ্ছে। সেখানে এই রোগের জীবাণু ওষুধকে কতটা প্রতিরোধ করতে পারে, তা জানাটাও কঠিন। ’

‘‘যখন সাধারণ গলার সংক্রমণ নিরাময়ের জন্য অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করবেন, তখন তা নেইসেরিয়া প্রজাতির ব্যাকটেরিয়ার সঙ্গে মিলিত হয়। আর এ কারণেই ওই ব্যাকটেরিয়া ওষুধ প্রতিরোধী হয়ে ওঠে। আর ওরাল সেক্সের মাধ্যমে হওয়া গনোরিয়ার ব্যাকটেরিয়া যদি একই ধরনের পরিবেশ পায়, তাহলে তা ‘সুপার গনোরিয়া’ তৈরি করতে পারে। ’’ বলেন এই বিশেষজ্ঞ।  

প্রতিবেদনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে থিওডোরা উয়ি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে সমকামী পুরুষদের মধ্যে ফারিনজেল সংক্রমণের মাধ্যমে গনোরিয়া জীবাণু ক্রমশ অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী হয়ে উঠছে। আর জন্মনিরোধক ব্যবহার না করার কারণে এইচআইভি/এইডসসহ এ ধরনের জীবাণুর সংক্রমণ ক্রমশ ছড়িয়ে পড়ছে।

সতর্ক করে দিয়ে চিকিৎসা প্রসঙ্গে সংস্থাটি বলছে, গনোরিয়ার জীবাণু এতটাই শক্তিশালী। এ রোগ ঠেকাতে যেকোনোভাবে ভ্যাকসিন তৈরি করতেই হবে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, পৃথিবীজুড়ে এখন ওরাল সেক্স বা মৌখিক যৌনতার হার বাড়ছে। ইউরোপের বিভিন্ন দেশ বিশেষ করে যুক্তরাজ্য এবং যুক্তরাষ্ট্রের তরুণ-তরুণীদের কাছে উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে এটি। তাদের কাছে এটা খুব স্বাভাবিক বিষয়।

বাংলাদেশ সময়: ০৯৫৪ ঘণ্টা, জুলাই ০৯, ২০১৭
এমএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।