হাসপাতালটিতে অত্যাধুনিক মেশিনের মাধ্যমে দেওয়া এই থেরাপির সফলতার হার খুবই আশাব্যঞ্জক। আদ-দ্বীনের ফিজিওথেরাপিস্ট হিতোষী চাকমা বলছেন, হাসপাতালটিতে চিকিৎসা নিতে আসা চিকুনগুনিয়া রোগীদের মধ্যে প্রায় পঁচাশি শতাংশই পুরোপুরি আরোগ্য লাভ করেছেন এই থেরাপির মাধ্যমে।
খরচও বলা চলে যৎসামান্য। মাত্র দেড়’শ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে এই সেবাটি। দৈনিক দেড়শ’ হিসাবে হলে সাত দিনের মোট খরচ দাঁড়ায় এক হাজার টাকার মতো। এতো কমমূল্যে এই সেবার খবর পেয়ে আদ-দ্বীনে ছুটে আসছেন মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়া চিকুনগুনিয়া আক্রান্তরা।
রাজধানীর প্রাণকেন্দ্র মগবাজারে অবস্থিত আদ্-দ্বীন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ২০০৭ সালে ফিজিওথেরাপি বিভাগ চালু করা হয়। এই বিভাগে শর্ট ওয়েভ ডায়াথার্মি, ওয়াক্স থেরাপি, ট্রাকশন, টেনস্, ইনফ্রারেড রেডিয়েশন, আল্ট্রাসাউন্ড থেরাপি, থেরাপিউটিক এক্সারসাইজ, ম্যানুয়াল থেরাপি ও লেজার থেরাপি সেবা দেওয়া হয়।
একসঙ্গে ৮ জন রোগীকে ফিজিওথেরাপি দেওয়া হয় এখানে। এই সেবা দিতে দু’জন ফিজিওথেরাপিস্টের নেতৃত্বে রয়েছেন একদল দক্ষ কর্মী। যারা সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত হাসিমুখে সেবা দিয়ে যাচ্ছেন।
আধুনিক বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আদ-দ্বীনে প্রতিনিয়ত যুক্ত করা হচ্ছে নতুন নতুন প্রাযুক্তিক মেশিন। হাসপাতালটিতে আপডেট প্রযুক্তির এয়ার প্রেসার থেরাপি মেশিন যুক্ত করা হয় গত এপ্রিল মাসে, ঠিক যখন চিকুনগুনিয়া জ্বরে কাঁপছিলো পুরো ঢাকা।
আদ্-দ্বীন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছেন, সংযুক্ত নতুন এই মেশিন এখন চিকুনগুনিয়া থেকে মুক্তি দিতে মোক্ষম হাতিয়ার হিসেবে কাজ করছে। প্রথম মাসেই ৪৫৭ জন রোগীকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে এই মেশিনে। দ্বিতীয় মাস অর্থাৎ জুনে এই সেবা নেন ৪২৩ জন। চলতি মাসে এখন পর্যন্ত ৪৫ জন চিকুনগুনিয়া রোগী চিকিৎসা নিয়ে আরোগ্য লাভ করেছেন।
যাদের অনেকেই ঠিক মতো উঠতে-হাঁটতে পারছিলেন না জ্বরের কারণে, তারা এখানে চিকিৎসা নিয়ে এখন দিব্যি হাঁটা-চলা করছেন।
ডা. শাহনাজ আক্তার ও রামপুরা এলাকার সিথি সাহাও এসেছিলেন চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে। তাদের দু’জনেরই হাঁটুতে ব্যথা জমেছিল, যে কারণে হাঁটা-চলা করতে পারছিলেন না। তারা পত্রিকায় দেখেছেন, এই রোগ ছয় মাস পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। তাতে ভয়ে আঁতকে উঠেছিলেন। অসহ্য ব্যথা থেকে কিছুটা রক্ষা পেতে থেরাপি নিতে আসেন আদ-দ্বীনে। তাদের অবাক করে দেয় হাসপাতালটির থেরাপি। তারা এখন পুরোপুরি সুস্থ্য।
আরও কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে ডা. শাহনাজ ও সিথি সাহার মতোই অভিমত পাওয়া গেল।
আদ্–দ্বীন হাসপাতালের ফিজিওথেরাপিস্ট হিতোষী চাকমা বাংলানিউজকে বলেন, আমরা দেখেছি চিকুনগুনিয়া চিহ্নিত হওয়ার পর দ্রুত থেরাপি দিলে সফলতার হার বেশি। অনেকে আসছেন দেরিতে। তাদের একটু বেশি সময় ধরে থেরাপি দিতে হচ্ছে।
ফিজিওথেরাপিস্ট হিতোষী বলেন, ওষুধ খেলে নানারকম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে, দেয়। কিন্তু ফিজিওথেরাপির কোনো প্রতিক্রিয়া নেই। সারাবিশ্বে দ্রুতই থেরাপি জনপ্রিয় হচ্ছে। বিশেষ করে স্পাইনাল পেইন, হাড় ভেঙে যাওয়া, আর্থ্রাইটিস, মাংসপেশীর সমস্যায় থেরাপি সফল চিকিৎসা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
চিকুনগুনিয়ার দাপটে দিশেহারা ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের মেয়র যখন ছুটছেন এপাড়া ওপাড়ায়, ঠিক তখন এমন একটি খবর সত্যিই স্বস্তির বলে মনে করেছেন চিকুনগুনিয়ার ভুক্তভোগীরা।
‘সবার সাধ্যের মধ্যে মানসম্মত সেবা’ শীর্ষক মূলমন্ত্রে নিয়ে পথচলা শুরু করা আদ-দ্বীনের প্রসূতি সেবা এখন দেশখ্যাত। অনেক সরকারি হাসপাতাল থেকেই রোগী রেফার করা হয় এখানে। হাসপাতালটির প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, সর্বোচ্চ পর্যায় পর্যন্ত নরমাল ডেলিভারির চেষ্টা। অনেক হাসপাতালে যখন নরমাল ডেলিভারির হার শূন্য শতাংশ, তখন আদ্-দ্বীন হাসপাতালে ডেলিভারির একটি বড় অংশই হয় নরমাল।
পাঁচশ শয্যার এই হাসপাতালে স্বাস্থ্য সেবার খরচ অন্যান্য হাসপাতালের তুলনায় ৭০ শতাংশ কম। এমন দাবি হাসপাতালের ডেপুটি পরিচালক ডা. নাহিদ ইয়াসমিনের। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, অন্যান্য হাসপাতালে সিজার করতে ৩০-৪০ হাজার টাকা নেওয়া হয়। আমরা ৮ হাজার ৬’শ টাকায় পুরো প্যাকেজ সেবা দিচ্ছি। এরমধ্যে অপরেশন-ওষুধ থেকে শুরু করে থাকা-খাবার পর্যন্ত রয়েছে।
ডা. নাহিদ ইয়াসমিন বলেন, অনেক হাসপাতালের আউটডোরে মেডিকেল অফিসাররা ব্যবস্থাপত্র দেন। কিন্তু আমরা শুধু স্পেশালিস্ট ডাক্তারদের মাধ্যমে সেবা দিচ্ছি, মাত্র ১৬০ টাকায়।
হাসপাতালে গৃহীত সব ধরনের সেবামূল্য কেবল প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা ব্যয় মেটানোর জন্যই নেওয়া হয় জানিয়ে ডা. নাহিদ ইয়াসমিন বলেন, মুনাফার লক্ষ্যে কোনো সেবামূল্য নেওয়া হয় না আদ-দ্বীনে। প্রত্যেকটি সেবার মূল্য নির্ণয় করা হয়েছে কেবল পরিচালনা ব্যয় মাথা রেখেই।
বাংলাদেশ সময়: ২৩৩২ ঘণ্টা, জুলাই ২৪, ২০১৭
এসআই/এইচএ/