বঙ্গবন্ধু মেডিকেল, ঢাকা মেডিকেল বা কোনো বেসরকারি হাসপাতাল ক্লিনিকেও নবজাতকের এতো বেশি বেডের সেবা নেই। আদ্-দ্বীন হাসপাতালে অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি সমৃদ্ধ এনআইসিইউ থাকায় কমছে নির্ধারিত সময়ের আগে জন্ম নেওয়া শিশুর মৃত্যুর হার।
হাসপাতালটির এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, সরকারি বা মধ্যম সারির কোনো হাসপাতালে আগে জন্ম নেওয়া শিশুর ৭০ ভাগকেই বাঁচানো সম্ভব হয় না। কিন্তু আদ-দ্বীন হাসপাতালে এনআইসিইউতে ৭৭ ভাগ শিশুকেই বাঁচানো সম্ভব হয়। উন্নত বিশ্বের হাসপাতালের এনআইসিইউতে ৯০ ভাগ শিশুকে বাঁচানো সম্ভব হয়।
মঙ্গলবার (২৫ জুলাই) মগবাজারে আদ্-দ্বীন হাসপাতাল ঘুরে দেখা গেছে, ঠিক উন্নত বিশ্বের সেবার মান নিয়েই এখানে এনআইসিইউ সেবা দেওয়া হচ্ছে। খুবই কম খরচে নির্ধারিত সময়ের আগে জন্ম নেওয়া এবং কম ওজনের শিশুদের সেবার বিশেষ এই দ্বার খুলেছে আদ-দ্বীন।
গত বছরের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বরে এখানে ১হাজার ৬’শ ৩৬ জন প্রি-ম্যা্চিউর শিশু ভর্তি হয়, যাদের ৯৫ ভাগই সুস্থ হয়েছে বাড়ি ফিরেছে।
দেখা গেছে, ঢাকার অন্য ব্যয়বহুল হাসপাতালগুলোতে যেখানে সাধারণ এনআইসিইউতে ভর্তি হওয়া শিশুর মাস শেষে বিল আসে ২০ লক্ষাধিক টাকা। সেখানে আদ-দ্বীনে প্রতিদিনের জন্য ব্যয় হয় ১০ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকা। ইনকিউবেটরের ব্যয় প্রতিদিন ৩ হাজার টাকা মাত্র। যা কিনা অন্য হাসপাতালে একেবারেই অসম্ভব।
শুধু কম খরচে শিশুর জীবন রক্ষা করাই নয় কোনো কারণে এই চিকিৎসার ব্যয় বহনে ব্যর্থ হলেও চিকিৎসা সেবা বন্ধ হয় না আদ্-দ্বীন। রোগীকে সুস্থ করে তোলাই এ হাসপাতালের লক্ষ। এমন নজির দেখা গেলো- আদ্-দ্বীন হাসপাতালের এনআইসিইউ ঘুরে। দু’দিন আগে ব্যয় বহন করতে অক্ষমতা প্রকাশ করার পর হাসপাতালই দায়িত্ব নিয়ে নিয়েছে শিশুর চিকিৎসা ব্যয়। শুধু এনআইসিইউ নয় এ হাসপাতালের প্রতিটি ওয়াডে এমন চিত্র। রোগী যেখানে চিকিৎসা ব্যয়ে অক্ষম সেখান থেকে হাসপাতাল তার নিজের খরচে চিকিৎসা সেবা শুরু করে। টাকার জন্য বন্ধ হয় না সেবা।
হাসপাতালটির এনআইসিইউ বিভাগের প্রধান ডা. মো আবদুল মান্নান জানান, এখানে ঠিক যতটুকু চার্জ আসে তারই খরচ নেয়া হয় মাত্র। অন্য কোনো সার্ভিস চার্জ নেই। যন্ত্রপাতি টেনে এনে লাগানো বা যোগ করা-এ ধরণেরও কোনো চার্জ নেই। আর চিকিৎসা ব্যয় অন্য যেকোনো হাসপাতাল থেকে বেশ কম।
বাংলাদেশে নবজাতকের প্রি-ম্যাচিউর, ওজনে কম, শ্বাসকষ্ট ও জন্ডিসের সমস্যাজনিত সবচেয়ে বড় এই সেবাকেন্দ্রে প্রতিদিন বড় বড় হাসপাতাল থেকে রোগী আসছে। অন্য হাসপাতাল থেকে নিয়ে আসা শিশুদের জন্য দু’টি কক্ষ করেছে আদদ্বীন। আর এই হাসপাতালে ডেলিভারি হওয়া শিশুদের জন্য দুটি কক্ষ রয়েছে। একটি কক্ষ শিশুর ইনফেকশন সারাতে ব্যবহৃত হয়।
এই ৫টি কক্ষ নিয়ে আদদ্বীনের এনআইসিইউ বিভাগ। বিভাগটি ঘুরে দেখা গেছে, এনআইসিইউতে রয়েছে ১১টি ভেন্টিলেটর। এর মধ্যে হাই ফ্রিক্যান্সি ভেন্টিলেটর রয়েছে ৫টি। ডা. মো আব্দুল মান্নান বলেন, নির্ধারিত সময়ের আগে যেসকল শিশুর জন্ম হয় তাদের জন্য প্রয়োজন এনআইএসইউ- সেবা। ৩৭ সপ্তাহের আগে জন্ম নেওয়া বা স্বল্প ওজনের শিশুদের এনআইসিইউ বিভাগে ভর্তি করতে হয়।
আদ দ্বীনের এনআইসিইউ বিভাগ ৫৬ বেডের। এর মধ্যে ৫টি বেডে ক্যাঙ্গারু মাদার কেয়ার সেবার ব্যবস্থা রয়েছে।
‘এই ৫৬ বেডের এনআইসিইউ সমৃদ্ধ হাসপাতাল বাংলাদেশে এই একটিই রয়েছে। যেখানে ১১টি ভেন্টিলেটর আছে যা আর কোনো হাসপাতালে নেই। এছাড়া রয়েছে সি-পপ, ওয়ার্মার, ইনকিউবেটর ও ৯টি এয়ার অক্সিজেন। ’-বলছিলেন ডা আবদুল মান্নান।
এনআইসিইউ সেবা তুলে ধরে তিনি আরও বলেন, ‘এনআইসিইতে শিশু মায়ের গর্ভে যে সেবাটা থেকে বঞ্চিত হয় সেটাই কৃত্রিমভাবে দেওয়া হয় এখানে। এখানে ইনকিউবেটরে ক্লোজ বা ওপেন দুই ধরণের রয়েছে। আর রোগী গুরুতর হলে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয় ।
লাইফ সাপোর্টে থাকা অ্যাপলো বা এই লেভেলের অন্য কোনো হাসপাতালে যেখানে ২০ লাখ টাকা ব্যয় হয় সেখানে ৪ লাখ টাকায় এই সেবা এখানে পাওয়া যাচ্ছে।
মঙ্গলবার এনআইসিউতে ৩৪ জন শিশু রোগী ভর্তি দেখা গেছে। এখানে ৫টি রুম আছে। একটি রুমে ইনফেকশনের শিশু রোগীদের জন্য।
দেখা গেছে, বাংলাদেশে প্রি-ম্যাচিউর বা কম ওজনের বাচ্চা জন্ম হয় প্রায় ৩০ ভাগ। এর মধ্যে ৩ ভাগের এক নির্ধারিত সময়ের আগে জন্ম নেয়। বাকি ২০ ভাগ বিভিন্ন রোগ ধরা পড়ে।
বাংলাদেশ সময়: ০৩১৪ ঘণ্টা, জুলাই ২৬, ২০১৭
এসএ/বিএস