রাজধানীর মগবাজারে অবস্থিত আদ্-দ্বীনে গেলেই তাদের ‘এয়ার প্রেসার থেরাপি’ মাত্র সাত দিনে রোগীকে মুক্তি দেবে চিকুনগুনিয়ার ব্যথা থেকে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের ঘোষণা অনুযায়ী, দুস্থ এবং অসহায় রোগীরা পুরোপুরি বিনামূল্যে পাচ্ছেন এই চিকিৎসা।
কথা হচ্ছিল হাসপাতালটির উপ-পরিচালক ডা. নাহিদ ইয়াসমিনের সঙ্গে। তিনিই বাংলানিউজকে বলছিলেন আদ্-দ্বীন হাসপাতালের সবসময় দুঃস্থদের পাশে থাকার কথা। ডা. নাহিদ ইয়াসমিন বলেন, কোনো রোগী যদি মূল্য পরিশোধে অসমর্থ হন, তাহলে তার আসা-যাওয়া ও চিকিৎসার সব খরচ অবশ্যই আদ্-দ্বীন বহন করবে।
হাসপাতালটির উপ-পরিচালক বলেন, আমাদের প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার আদ্-দ্বীন ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক ডা. শেখ মহিউদ্দিন স্যারের প্রথম কথা হচ্ছে টাকার অভাবে যেন কেউ বিনা চিকিৎসায় পড়ে না থাকে। চিকুনগুনিয়া ব্যাপক মাত্রায় ছড়িয়ে পড়ার পর এর মোক্ষম চিকিৎসা ফিজিওথেরাপির মাধ্যমে দেওয়া হচ্ছে, যা মিলছে অনেক সাশ্রয়ী মূল্যে। আদ্-দ্বীনের চিকুনগুনিয়া চিকিৎসার সফলতা নিয়ে কথা হচ্ছিল হাসপাতালটির ফিজিওথেরাপিস্ট হিতোষী চাকমা। তিনি জানান, চিকুনগুনিয়া জ্বরের কারণে শরীরের জোড়ায় জোড়ায় যে ব্যথা হয়, তা এয়ার প্রেসার থেরাপির মাধ্যমে মাত্র সাত দিনে দূর করে দিচ্ছে আদ্-দ্বীন। এক্ষেত্রে সফলতার হার খুবই আশাব্যঞ্জক, ৮৫ শতাংশ।
আর খরচ? বলা চলে যৎসামান্য। মাত্র দেড়’শ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে এই সেবাটি। দৈনিক দেড়শ’ হিসাবে হলে সাত দিনের মোট খরচ দাঁড়ায় এক হাজার টাকার মতো। এতো কমমূল্যে এই সেবার খবর পেয়ে আদ-দ্বীনে ছুটে আসছেন মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়া চিকুনগুনিয়া আক্রান্তরা।
আদ্-দ্বীন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ২০০৭ সালে ফিজিওথেরাপি বিভাগ চালু করা হয়। এই বিভাগে শর্ট ওয়েভ ডায়াথার্মি, ওয়াক্স থেরাপি, ট্রাকশন, টেনস্, ইনফ্রারেড রেডিয়েশন, আল্ট্রাসাউন্ড থেরাপি, থেরাপিউটিক এক্সারসাইজ, ম্যানুয়াল থেরাপি ও লেজার থেরাপি সেবা দেওয়া হয়।
একসঙ্গে ৮ জন রোগীকে ফিজিওথেরাপি দেওয়া হয় এখানে। এই সেবা দিতে দু’জন ফিজিওথেরাপিস্টের নেতৃত্বে রয়েছেন একদল দক্ষ কর্মী। যারা সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত হাসিমুখে সেবা দিয়ে যাচ্ছেন।
আধুনিক বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আদ-দ্বীনে প্রতিনিয়ত যুক্ত করা হচ্ছে নতুন নতুন প্রাযুক্তিক মেশিন। হাসপাতালটিতে আপডেট প্রযুক্তির এয়ার প্রেসার থেরাপি মেশিন যুক্ত করা হয় গত এপ্রিল মাসে, ঠিক যখন চিকুনগুনিয়া জ্বরে কাঁপছিলো পুরো ঢাকা।
আদ্-দ্বীন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছেন, সংযুক্ত নতুন এই মেশিন এখন চিকুনগুনিয়া থেকে মুক্তি দিতে মোক্ষম হাতিয়ার হিসেবে কাজ করছে। প্রথম মাসেই ৪৫৭ জন রোগীকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে এই মেশিনে। দ্বিতীয় মাস অর্থাৎ জুনে এই সেবা নেন ৪২৩ জন। চলতি মাসে এখন পর্যন্ত ৪৫ জন চিকুনগুনিয়া রোগী চিকিৎসা নিয়ে আরোগ্য লাভ করেছেন।
যাদের অনেকেই ঠিক মতো উঠতে-হাঁটতে পারছিলেন না জ্বরের কারণে, তারা এখানে চিকিৎসা নিয়ে এখন দিব্যি হাঁটা-চলা করছেন।
ফিজিওথেরাপিস্ট হিতোষী চাকমা বাংলানিউজকে বলেন, আমরা দেখেছি চিকুনগুনিয়া চিহ্নিত হওয়ার পর দ্রুত থেরাপি দিলে সফলতার হার বেশি। অনেকে আসছেন দেরিতে। তাদের একটু বেশি সময় ধরে থেরাপি দিতে হচ্ছে। ওষুধ খেলে নানারকম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে, দেয়। কিন্তু ফিজিওথেরাপির কোনো প্রতিক্রিয়া নেই।
সারাবিশ্বে দ্রুতই থেরাপি জনপ্রিয় হচ্ছে। বিশেষ করে স্পাইনাল পেইন, হাড় ভেঙে যাওয়া, আর্থ্রাইটিস, মাংসপেশীর সমস্যায় থেরাপি সফল চিকিৎসা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে বলে জানান তিনি।
চিকুনগুনিয়ার দাপটে দিশেহারা ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের মেয়র যখন ছুটছেন এপাড়া ওপাড়ায়, ঠিক তখন এমন একটি খবর সত্যিই স্বস্তির বলে মনে করেছেন চিকুনগুনিয়ার ভুক্তভোগীরা।
‘সবার সাধ্যের মধ্যে মানসম্মত সেবা’ শীর্ষক মূলমন্ত্রে নিয়ে পথচলা শুরু করা আদ-দ্বীনের প্রসূতি সেবা এখন দেশখ্যাত। হাসপাতালটির প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, সর্বোচ্চ পর্যায় পর্যন্ত নরমাল ডেলিভারির প্রচেষ্টা। চিকিৎসকদের মতে, আদ্-দ্বীন হাসপাতালে ডেলিভারির একটি বড় অংশই হয় নরমাল।
অন্যান্য হাসপাতালের তুলনায় পাঁচশ’ শয্যার এই হাসপাতালে স্বাস্থ্য সেবার খরচ ৭০ শতাংশ কম জানিয়ে উপ-পরিচালক ডা. নাহিদ ইয়াসমিন বলেন, অন্যান্য হাসপাতালে সিজার করতে ৩০-৪০ হাজার টাকা নেওয়া হয়। আমরা ৮ হাজার ৬’শ টাকায় পুরো প্যাকেজ সেবা দিচ্ছি। এরমধ্যে অপরেশন-ওষুধ থেকে শুরু করে থাকা-খাবার পর্যন্ত রয়েছে।
আদ্-দ্বীনের এ উপ-পরিচালক আরও বলেন, অনেক হাসপাতালের আউটডোরে মেডিকেল অফিসাররা ব্যবস্থাপত্র দেন। কিন্তু আমরা শুধু স্পেশালিস্ট ডাক্তারদের মাধ্যমে সেবা দিচ্ছি, মাত্র ১৬০ টাকায়।
বাংলাদেশ সময়: ১৪২৩ ঘণ্টা, জুলাই ২৬, ২০১৭
এসআই/এইচএ/