তাই স্বল্প খরচে ভালো চিকিৎসা সেবা পেতে ভারতের বিখ্যাত সিএমসি হাসপাতাল অন্যতম গন্তব্য হতে পারে। তবে বিশ্বমানের এই হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা সেবা পেতে রোগী ও তার আত্মীয়-স্বজনকে দিতে হবে অনেক ধৈর্য ও সময়ের পরীক্ষা।
ভেলোরের খ্রিস্টান মিশনারি পরিচালিত এই হাসপাতালটিতে জটিল অপারেশন, কিডনি সমস্যা, ক্যান্সার, ডাক্তার দেখানো, টেস্ট করাসহ সব ধরনের চিকিৎসা সেবা কম খরচে পাওয়া যায়। তাই সময় ও ধৈর্য্য থাকলে বাংলাদেশে বসে চিকিৎসা করানোর চেয়ে সিএমসি শ্রেয়। বাংলাদেশে নামিদামি হাসপাতালে যে খরচ পড়বে, ভেলোরে এলে তার চেয়েও কম খরচে ট্রান্সপোর্ট, থাকা-খাওয়া ও চিকিৎসার পুরোটা সেরে ফেলা যাবে। সঙ্গে পাওয়া যাবে বিশ্বমানের চিকিৎসা সেবা।
দক্ষিণ ভারতের তামিলনাডু রাজ্যের রাজধানী চেন্নাই থেকে ভেলোর ১৩৩ কিলোমিটার দূরে। এখানেই অবস্থিত অলাভজনক হাসপাতাল সিএমসি। ভারতের আশপাশের রাজ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে প্রতিদিন ১০ হাজার নতুন রোগী চিকিৎসা সেবা নিতে আসেন হাসপাতালটিতে। এর মধ্যে বাংলাদেশ থেকে প্রতিদিন সাড়ে সাতশ’ থেকে আটশ’ রোগী চিকিৎসা নিতে ভেলোরের সিএমসিতে আসেন।
রোগী আসার সংখ্যা বেশি হওয়ায় সবকিছুতেই একটু সময় বেশি লাগে সিএমসিতে। টেস্ট করানোসহ অন্য সেবা পেতে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। দীর্ঘ সময় বসে থাকতে হয় ওয়েটিং রুমে। ডাক্তারের অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিতে ভোর হওয়ার আগেই রোগী ও তার স্বজনদের দীর্ঘ লাইন শুরু হয়। তবে অপেক্ষা শুরু হলে শেষও হবে।
এক সপ্তাহ হল বাংলাদেশের চট্টগ্রাম থেকে চিকিৎসা করাতে ভেলোরে এসেছেন রুবিনা ইসলাম। দীর্ঘদিন ধরে হাঁটুর জটিল রোগে ভুগছেন। বাংলাদেশে অনেক নামিদামি হাসপাতালে চিকিৎসা নিলেও পরিত্রাণ পাচ্ছিলেন না। পরে আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে পরামর্শ করে ভেলোরে খ্রিস্টান মেডিক্যাল কলেজে আসেন।
রুবিনা বলেন, হাঁটুর সমস্যায় দীর্ঘদিন ধরে ভুগছি। ঢাকার নামিদামি হাসপাতালে চিকিৎসা করিয়েছি। কিন্তু সাময়িক ব্যথা কমলেও সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পাচ্ছিলাম না। প্রায় তিন লাখ টাকা খরচ করেছি। উপায় না পেয়ে সিএমসিতে এলাম।
চিকিৎসা নিতে আসা এই রোগী আরো জানান, ভেলোরে সিএমসিতে চিকিৎসা নিতে হলে সময় নিয়ে আসতে হবে। সঙ্গে জেনে আসা ভালো, এখানে বিদেশিদের জন্য অনেক নিয়ম কানুন। না জানা থাকলে সময় ব্যয়ের সঙ্গে ভোগান্তি পোহাতে হবে। প্রতিটি কাজে অনেক সময় লাগছে। তবে সময় লাগলেও এখনকার ডাক্তারসহ চিকিৎসার সঙ্গে জড়িত সংশ্লিষ্ট সবাই বেশ আন্তরিক।
চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের জেনে রাখা ভালো, ঢাকা থেকে চেন্নাই সরাসরি প্লেন থাকলেও বাড়তি খরচ এড়াতে কলকাতা থেকে ভেলোরে আসাই ভালো। কলকাতা থেকে ট্রেন বা আকাশ পথে আসা যাবে ভেলোরে।
সিএমসিতে আউটডোর পেশেন্ট বিল্ডিং (ওপিডি) বাইরের রোগীদের জন্য। ডাক্তার দেখানো, টেস্ট করানোর সব কাজ এখানেই। সব সেবা পেতে ধৈর্য্য ধরে অপেক্ষা করতে হবে। সপ্তাহে তিনদিন ওপিডি খোলা থাকে। সে অনুযায়ী ডাক্তারের অ্যাপয়েন্টমেন্ট দেওয়া হয়। ফলে টেস্ট দিলে রির্পোর্ট পাওয়া ও আবার ডাক্তারের অ্যাপয়েন্টমেন্ট পেতে চার দিন থেকে এক সপ্তাহের উপরে অপেক্ষা করতে হবে।
সিএমসিতে চিকিৎসার শুরুতেই সব বিদেশি রোগী ও তার অ্যাটেনডেন্টকে আইআর অফিস ৯০০ নম্বর রুমে গিয়ে রেজিস্ট্রেশন করতে হয়। তার আগে নতুন রোগীদের পি-রেজিস্ট্রেশন করতে হয়। বাংলাদেশ থেকেই অনলাইনে প্রি-রেজিস্ট্রেশন করতে পারেন বা আইআর অফিসের আশপাশের কম্পিউটার দোকান থেকে ৫০ রুপির বিনিময়ে এটা করে নিতে পারেন।
এ সময় একটি প্রিন্টেড কপি পাওয়া যাবে। এটিসহ রোগী ও অ্যাটেনডেন্টের পাসপোর্টের মূল ও ফটোকপি আইআর অফিসে জমা দিতে হবে। এবার অপেক্ষার পালা। রেজিস্ট্রেশন, ডাক্তারের অ্যাপয়েন্টমেন্ট সবকিছু এখানে হবে। এখানে একটি আইডি নম্বর দেওয়া হবে।
ভেলোরে পৌঁছে রোগী ও রোগীর অ্যাটেনডেন্টকে পুলিশ স্টেশনে রিপোর্ট করতে হয়। এই কাজটা পৌঁছার পর রাত আটটার মধ্যে করে ফেলা ভালো। তা না হলে এখানেও সময় ক্ষেপন হবে। হোটেল ম্যানেজার ‘সি’ ফরম পূরণের ব্যবস্থা করে দেবেন। এজন্য পাসপোর্ট ও পাসপোর্ট সাইজের ছবি দিতে হবে। প্রতি ফরম পূরণে ১০০ রুপি করে দিতে হয়। পরে ‘সি’ ফরমের প্রিন্টে দুই কপি, হাসপাতালের রেজিস্ট্রেশন ফরম (যদি থাকে), হোটেল/লজের ভিজিটিং কার্ড, পাসপোর্টের মূল ও ফটোকপিসহ ভেলোর পুলিশ স্টেশনে রিপোর্ট করতে হবে।
ভেলোরে থাকা ও খাবারে বিলাসিতা না করাই শ্রেয়
বাংলাদেশ সময়: ১৩৫০ ঘণ্টা, আগস্ট ৭, ২০১৭
ভিএস/এমসি/জেডএম