ময়লা-আবর্জনা, হকার-দালালের দৌরাত্ম্যের পাশাপাশি চিকিৎসা সেবার পরিবর্তে রোগীর ভোগান্তিই ছিলো বেশি। তবে সরকারি হাসপাতালের এমন চিরচেনা জঞ্জালময় পরিবেশ থেকে নিজেদের বের করে এনেছে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল।
ঘুরে দেখা যায়, হাসপাতালটির সুসজ্জিত অন্দরমহল। রোগী ও স্বজনদের ব্যবহৃত প্রতিটি টয়লেট পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন। প্রতিটি ওয়ার্ডে, কেবিন, বিভাগ ও ইউনিটও পরিপাটি। কোথাও সামান্য টিস্যু পড়ে থাকতে দেখা যায়নি। প্রয়োজন অনুসারে জায়গায় জায়গায় পর্যাপ্ত ময়লা-আর্বজনা ফেলানোর ঝুড়ি-বালতি রাখা। নাকে লাগে না সামান্য দুর্গন্ধও। ব্যবহৃত সুই-সিরিঞ্জ, ওষুধ ও স্যালাইনের খোসাও রাখা নির্দিষ্ট স্থানে। সরকারি হাসপাতালগুলোতে তেলাপোকা, মশা-মাছি, ছারপোকার উপদ্রবের যে নিত্য অভিযোগ মেলে, সে তুলনায় সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের পরিবেশ একবারেই ভিন্ন। পুরো হাসপাতালের মেঝে টাইলস করা।
হাসপাতালটির এই অভূতপূর্বভাবে বদলে যাওয়ার পেছনে যিনি, তিনি পরিচালক উত্তম কুমার বড়ুয়া। ২০১৫ সালে পরিচালকের দায়িত্ব নেন তিনি। তারপর থেকে হাসপাতালটির সেবার মান ও পরিবেশ উন্নয়নে প্রাণবন্ত চেষ্টা করে যাচ্ছেন তিনি। সরকারি হাসপাতালের ওপর দেশের মানুষের যে অনাস্থা, তা পরিবর্তনই উত্তম কুমার বড়ুয়ার মূল লক্ষ্য। মানুষের আস্থা ফেরানোর লক্ষ্যে সোহরাওয়ার্দীকে ‘মডেল হাসপাতালে’ পরিণত করার পরিকল্পনায় কাজ করছেন তিনি। এরইমধ্যে হাসপাতালকে ময়লা-আর্বজনামুক্ত করার জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে পুরস্কারও পেয়েছেন পরিচালক উত্তম কুমার বড়ুয়া।
বাংলানিউজের কথা হচ্ছিল ডা. উত্তম কুমার বড়ুয়ার সঙ্গে। তিনি বলছিলেন, ‘হাসপাতাল সম্পর্কে মানুষের ধারণা হতে হবে—ভালো পরিবেশ, ভালো চিকিৎসা। হাসপাতালের পরিবেশ অপরিচ্ছন্ন থাকলে রোগীদের আগ্রহ কমে যায়, তাতে ধারণা হয় চিকিৎসা ভালো হবে না। এজন্য সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে রোগীর সেবার মান উন্নত করতে প্রথম চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতাকে। ’
তিনি বলেন, ‘সরকারি হাসপাতাল মানে মানুষের ধারণা ময়লা-আবর্জনায় দুর্গন্ধময় পরিবেশ। এ অবস্থা থেকে সোহাওয়ার্দী হাসপাতাল বেরিয়ে এসেছে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতায় বেসরকারি হাসপাতাল সম্পর্কে মানুষের যে ধারণা, আমাদের হাসপাতালের পরিবেশও তেমনভাবে করে তোলা হয়েছে। হাসপাতাল ২৪ ঘণ্টা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকে। দিনে ৩ বার, ক্ষেত্রবিশেষে ৫-৬ বারও পরিষ্কার করা হয়। এরইমধ্যে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতায় ৯০ ভাগ সফলতা অর্জন করেছি আমরা। পরিচ্ছন্নতা-কর্মীদের শুক্রবার গ্রুপ করে ছুটি কর্তন করা হয়। সেদিন আমি ব্যক্তিগতভাবে কাজের জন্য আর্থিক প্রণোদনা দেই। তারা কাজে উৎসাহ পায়। টয়লেট সবসময় পরিষ্কার রাখার জন্য সরকারি কর্মীর বাইরেও অতিরিক্ত সুইপার (ডোম) রাখা হয়েছে। ’
পরিচ্ছন্নতার বিষয়টিসহ চিকিৎসা সেবার মানোন্নয়নে কোয়ালিটি ইমপ্রুভমেন্ট কেয়ার (কেইসি) নামে কার্যক্রম পরিচালনা করা হয় সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে। এ কার্যক্রমে ওয়ার্ড, ইউনিট, বিভাগ ও কেবিন নিয়ে ৪৩টি কমিটি রয়েছে। কমিটিতে ডাক্তারের নেতৃত্বে নার্স, ক্লিনাররাও সদস্য হিসেবে রয়েছেন। হাসপাতালের পরিবেশ দূষণমুক্ত রাখতে পুরস্কার দেওয়ার কথা জানিয়ে পরিচালক ডা. উত্তম কুমার বড়ুয়া বলেন, ‘হাসপাতালকে আর্বজনামুক্ত রাখার দায়িত্ব এই কমিটির হাতে। প্রতিমাসে হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা করা হয়। প্রতি মাসে যে সেরা কাজ করছে, তাকে সার্টিফিকেট ও আর্থিক অনুদানের ব্যবস্থা করা হবে। এছাড়া পরিচ্ছন্নতা-কর্মীদের দুই মাস পরপর ‘বেস্ট ক্লিনার অ্যাওয়ার্ড’ দেওয়া হয়। ’
কথা হচ্ছিল চিকিৎসা সেবা নিতে আসা কয়েকজন রোগী ও তাদের স্বজনদের সঙ্গে। তারাও সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের বর্তমান পরিবেশ নিয়ে বেশ স্বস্তি ও সন্তোষ প্রকাশ করেন। হাসপাতালের ৭ নং ওর্য়াডের রোগী আক্কাস বাংলানিউজ বলেন, ‘এক বছর আগেও এমন পরিবেশ ছিলো না সোহরাওয়ার্দীর। দুর্গন্ধে থাকা কষ্টকর হয়ে পড়তো। এখন পরিষ্কার হয়ে গেছে সব। চিকিৎসা সেবাও ভালো হয়েছে। বেশিক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয় না। ’
বাংলাদেশ সময়: ১০২৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৩, ২০১৭
এমসি/এইচএ/