কাগজে-কলমে হাসপাতালটিতে কর্মরত তিনজন চিকিৎসক হলেন- উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সাইফুল ইসলাম এবং মেডিকেল অফিসার ডা. নুরুল হুদা খান ও ডা. মাজরাতুল ইসলাম শিকমা।
তবে নার্স আর ওয়ার্ড বয় ছাড়া ওই ডাক্তারদের দেখা মেলে না, তারা আসেন কালেভদ্রে- বাংলানিউজকে এমন অভিযোগই করেন অসহায় হাওরবাসী মানুষেরা।
হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা গ্যাস ও কোমর ব্যথায় আক্রান্ত কৃষ্টপুর গ্রামের দিগেন্দ্র চন্দ্র দাস (৫৪) বলেন, ডাক্তার আসবেন- এ আশায় প্রতিদিন ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করে শেষে না পেয়ে বাড়ি ফিরে যেতে হয়। যাদের অসুস্থতা বেশি, তারা পার্শ্ববর্তী উপজেলা অথবা জেলা শহরে যেতে বাধ্য হন।
শারীরিক দুর্বলতা নিয়ে বল্লভপুর গ্রাম থেকে এসেছেন রেখা রাণী সরকার (৪৮)। তিনি প্রায় প্রতিদিনই ডাক্তারের সাক্ষাতের অপেক্ষায় হাসপাতালে আসেন। কিন্তু এক সপ্তাহ ঘুরেও কোনো ডাক্তারের নাগাল পাননি!
গত বুধ ও বৃহস্পতিবার (২২, ২৩ নভেম্বর) সকাল থেকে রাত পর্যন্ত সরেজমিনে হাসপাতালটিতে থেকে দেখা গেছে, ওই দু’দিনে উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের রোগীরা প্রায় সারাদিন অপেক্ষা করেও ডাক্তারের দেখা পাননি। তাদের কেউ কেউ নেত্রকোনা আধুনিক সদর হাসপাতালে গেলেও বেশিরভাগই রোগ আর হতাশা নিয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন।
তাতিয়ানগর থেকে গাইনি সমস্যা নিয়ে সকাল সাড়ে দশটায় এসেছিলেন বৃদ্ধা চন্দ্র বালা (৫০) ও কিশোরী তানজিনা আক্তার (১৪)। অপেক্ষায় থেকে থেকে দিন পার হলেও শেষ পর্যন্ত ডাক্তারের দেখা না পেয়ে বিকেলে বাড়ি ফিরে যান তারা।
ফেরার পথে চন্দ্র বালা বলেন, সরকার টাকা খরচ করে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতাল, ওষুধ, ডাক্তার ও নার্স সব দিয়েছে। কিন্তু যারা দায়িত্বে আছেন, তাদের ফাঁকিবাজি ও অসততার কারণে সরকারের সব উদ্দেশ্য ভেস্তে যাচ্ছে!
হাসপাতালটিতে চিকিৎসা দিচ্ছিলেন তিনজন নার্স মেগাজিন নকরেক, পানামী ঢালি ও মালেসা রেমা। তাদের কেউই জানাতে পারেননি ডাক্তাররা কোথায় থাকেন! তবে ডাক্তার ছাড়া নিজেরাই রোগী সামলাতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন বলে অভিযোগ তাদেরও।
মেগাজিন নকরেক জানান, তিনি একাই মেডিসিন ওয়ার্ড ও জরুরি বিভাগ দেখেন। এতে তাকে অমানবিক পরিশ্রম করতে হয়।
খালিয়াজুরী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছানোয়ারুজ্জামান জোসেফ বলেন, উপজেলায় নামমাত্র স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতাল রয়েছে, যেখানে নেই কোনো স্বাস্থ্যসেবা। এখানকার গরিব অসহায় মানুষগুলো অসুস্থ হলে চরম বেকায়দা পড়েন।
ডাক্তার না থাকার অভিযোগ দিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে এসেছিলেন রোগী সোহেল মিয়ার বড় ভাই মো. এরশাদ মিয়া।
এরশাদ জানান, পেটের ব্যথায় আক্রান্ত ভাইকে নিয়ে দু’দিন হাসপাতালে গিয়ে অনেক অপেক্ষা করেও ডাক্তার পাননি তিনি। তবে এ দু’দিন কোনোমতে সামলেছেন নার্সরা।
পরে ওই রোগীর প্রেসক্রিপশনে দেখা গেছে, ১৮ বছরের রোগী সোহেলের বয়স ২২০ বছর আর স্বামী হিসেবে লেখা রয়েছে বাবার নাম!
এসব বিষয় সিভিল সার্জন ডা. তাজুল ইসলামকে অবহিত করা হলে তিনি ধৈর্য ধরার পরামর্শ দিয়েছেন বলেও জানান চেয়ারম্যান জোসেফ।
নেত্রকোনার জেলা প্রশাসক (ডিসি) ড. মো. মুশফিকুর রহমানকে জানিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে আশ্বাস দেন ইউএনও মো. তোফায়েল আহমেদ।
বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হাওরাঞ্চল খালিয়াজুরী পরিদর্শনে গত ১৮ মে সকালে এসেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। খালিয়াজুরী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালও পরিদর্শন করেন তিনি। সেদিন হাওরবাসীর শতভাগ চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত ও কোনো ধরনের গাফিলতি না করতে ডাক্তারদের নির্দেশ দিয়ে যান প্রধানমন্ত্রী।
বাংলাদেশ সময়: ১০২২ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৬, ২০১৭
এএসআর/জেএম