সুন্দর-নিরিবিলি পরিবেশে আদ্-দ্বীন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চলতি বছরে এমবিবিএস কোর্সে ভর্তি হওয়ার স্বপ্ন পূরণ করতে পারায় ভীষণ খুশি শারমিন আক্তার ও তার বাবা হারুন-অর-রশীদ।
খুলনা-যশোর মহাসড়কের পাশে আদ্-দ্বীন আকিজ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শনিবার (২৩ ডিসেম্বর) বাংলানিউজের কথা হয় বাবা ও মেয়ের সঙ্গে।
এ সময় শারমিনের বাবা হারুন-অর-রশীদ বলেন, আমার জায়গা জমি কিছুই নেই। খুলনা মহানগরীর ছোট বয়রা মসজিদ বাড়ি রোডে পরের জায়গায় ঘর তুলে থাকি। একটা ভাঙ্গা রিকশা চালিয়ে কোনো মতে সংসার চালাই। শারীরিক অক্ষমতার কারণে বেশি সময় রিকশা চালাতে পারি না। মেডিকেলের আশেপাশে রিকশা চালানোর সময় অনেক শিক্ষার্থী ও ডাক্তারের সঙ্গে আমার পরিচয় হয়। তারা বিভিন্ন সময় আমার মেয়ের পড়ালেখার খোঁজ খবর নেয়। আমি তাদের জানাই মেয়েটার ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন, কিন্তু অভাব-অনটনের কারণে তা সম্ভব হচ্ছে না। তারা আমাকে আকিজে দারিদ্র্য কোঠার কথা বলেন।
‘আমি এসে যোগাযোগ করলে তারা কাগজপত্র জমা দিতে বলেন। জমা দেওয়ার পর আমাদের জানানো হয় ভাইবা হবে। ভাইবার দিন আসলে তারা আমার আয় ব্যয়সহ সব খোঁজ খবর নেয়। এবং দরিদ্র কোঠায় ভর্তি নেয়’।
শিক্ষার্থী শারমিন আক্তার বলেন, সরকারি মেডিকেলে চান্স না পাওয়ায় দিশেহারা হয়ে পড়েছিলাম। অনেক টেনশনের মধ্যে ছিলাম। দ্বিতীয়বার পরীক্ষা দিয়েছি। সব বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা শেষ, কোথাও ভর্তি হতে পারিনি। অবশেষে আদ্-দ্বীন আকিজ মেডিকেল কলেজে ভর্তি হতে পেরে আমি ভীষণ খুশি এবং আল্লাহর কাছে অনেক শুকরিয়া। ছোটবেলা থেকে বাবা-মার স্বপ্ন ছিলো ডাক্তার হওয়ার। আমি সেভাবে পড়াশোনা করেছি।
‘আদ্-দ্বীন আকিজ মেডিকেল আমাদের যে সুযোগ দিয়েছে তাতে আমরা তাদের কাছে চিরকৃতজ্ঞ। তারা সুযোগ না দিলে আমাদের স্বপ্ন পূরণ হতো না’।
আবেগাপ্লুত শারমিন বলেন, অভাব আর অনটনের জীবনযুদ্ধে বেশ কয়েকটি বিজয় এসেছে আমার। তার মধ্যে সবচেয়ে বড় হলো মেডিকেল কলেজে পড়ার সুযোগ পাওয়া।
বয়রা ডাক বিভাগীয় মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসিতে গোল্ডেন এ প্লাস পাওয়ার পর খুলনা সরকারি মহিলা কলেজ থেকে এইচএসসিতেও এ প্লাস পান। এমবিবিএস পরীক্ষার রেজাল্টে স্কোর করেন ২৬৪.২৫। ৬২৫৮ পজিশন অর্জন করেন।
আদ্-দ্বীন আকিজ মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ড. পরিতোষ কুমার রায় বাংলানিউজকে বলেন, আদ্-দ্বীন ফাউন্ডেশনের এ অঙ্গ প্রতিষ্ঠানটির মূল উদ্দেশ্য সুবিধাবঞ্চিত মানুষকে সেবা দেওয়া এবং গরিব, মেধাবী শিক্ষার্থীদের কোঠায় পড়ালেখার সুযোগ দেওয়া। ৫ ভাগের এ কোঠায় এবার ১৫ জনের ভাইবা নেওয়া হয়। তার মধ্য থেকে তিনজনকে পড়ালেখার সুযোগ দেওয়া হয়। যার মধ্যে শারমিন একজন। তার বাবা হতদরিদ্র রিকশাচালক।
হাসপাতালের উপ-ব্যবস্থাপক মো. হোসেন আলী বলেন, এখানে গরিব ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের সরকারি নিয়ম অনুযায়ী প্রায় নিখরচায় পড়াশোনার সুযোগ দেওয়া হয়। এখানে কোনো রাজনীতি নেই। পড়াশোনার সুষ্ঠু পরিবেশ রয়েছে। যে কারণে শিক্ষার্থীরা ভালো ফলাফল করছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭০৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৩, ২০১৭
এমআর/জেডএস