বাংলানিউজকে এসব কথা বলছিলেন খুলনার আদ-দ্বীন আকিজ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের শিক্ষার্থী সাধনা বিশ্বাস।
আবেগাপ্লুত সাধনা জানান, চলতি বছরের এমবিবিএস কোর্সে ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন তিনি।
যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার বাকড়ি গ্রামের হতদরিদ্র পরিবারের মেয়ে সাধনার অন্য কোনো ভাই-বোন নেই। বাবা লক্ষণ বিশ্বাস অর্থের অভাবে বিনা চিকিৎসায় মারা যাওয়ার পর থেকে মা উল্লাসী বিশ্বাস পরের জমিতে কামলা দিয়ে মেয়ের পড়ালেখার খরচ যুগিয়ে আসছেন।
নড়াইলের গুয়াখোলা মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসিতে ও যশোরের বাঘারপাড়ার ভাঙ্গড়া আদর্শ ডিগ্রি কলেজ থেকে এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পান সাধনা। এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষায় ২৬৪ নম্বর পেয়ে মেধা তালিকায় তার অবস্থান ছিল ৬৪৫৪।
সাধনা বলেন, ‘সব সাফল্য যখন মাটির সঙ্গে মিশে যাচ্ছিল, তখন আদ-দ্বীন আমাকে মেধাবী ও দরিদ্র কোটায় পড়ার সুযোগ করে দেয়। আমি তাদেরকে কি বলে কৃতজ্ঞতা জানাবো, সে ভাষা আমার জানা নেই। সরকারি মেডিকেলে সুযোগ না পেয়ে ভেবেছিলাম, আমার মায়ের পক্ষে তো বেসরকারি মেডিকেলে পড়ার খরচ চালানো সম্ভব হবে না। আমার স্বপ্ন বুঝি আর পূরণ হলো না। আদ-দ্বীন কলেজ আমার ও মায়ের স্বপ্ন পূরণ করছে’।
তিনি বলেন, ‘আমি চিকিৎসক হয়ে মানুষের সেবা করতে চাই। যেন কেউ আমার বাবার মতো বিনা চিকিৎসায় মারা না যান। ছোটবেলা থেকেই ইচ্ছা ছিলো, ডাক্তার হবো’।
জীবনযুদ্ধে হার না মানা সাধনার মা উল্লাসী বিশ্বাস বলেন, ‘কষ্ট কইরে মেয়েডারে মানুষ কইরেছি। তার একটা সুযোগ-সুবিধা অইছে, ভালো লাগছে। নিজের সামান্য জমি আছে। তাতি এক ফসল হয়। দুইডা গরু আছে। মেয়ের পড়া-লেহার খরচ চালাতি অন্যের জমিতে কামলার কাজ করি। মাঠে-ঘাটে কাজ কইরে টুকটাক দিন চইলে যায়’।
তিনি বলেন, ‘উচ্চমাধ্যমিক দ্বিতীয় বর্ষের পরীক্ষার সময় সাধনার বাবা মারা যান। ওর মাত্র তিনটি পরীক্ষা হয়েছিলো তখন। মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে। তারপরও সে শোক সামলে মেয়েটি ভালো ফলাফল করে। কিন্তু অর্থের অভাবে মেয়ের ডাক্তার হওয়ার ইচ্ছা পূরণ হচ্ছিল না। তাকে সে সুযোগ দিয়েছে আদ-দ্বীন মেডিকেল কলেজ। যারা আমার মেয়েকে ডাক্তার হওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে, তাদের প্রতি আমি চিরকৃতজ্ঞ’।
আদ-দ্বীন আকিজ মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ড. পরিতোষ কুমার রায় বলেন, ‘দেশে সরকারি মেডিকেল কলেজের আসন সংখ্যা সীমিত। এ কারণে অনেকেরই ভর্তি হওয়ার স্বপ্ন পূরণ হয় না। সে স্বপ্ন পূরণ করছে বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলো। কিন্তু বেসরকারি মেডিকেল কলেজে পড়ার খরচ বেশি হওয়ায় অনেকের পক্ষে তা বহন করা সম্ভব নয়’।
‘আদ-দ্বীন অনেক কম খরচে শিক্ষার্থীদের চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন পূরণ করছে। যাদের পক্ষে সে খরচ দেওয়াও সম্ভব নয়, তেমন দরিদ্র মেধাবীদের বিনামূল্যে পড়ার ব্যবস্থা রয়েছে এখানে। তাদের মধ্যে একজন সাধনা বিশ্বাস’।
বাংলাদেশ সময়: ১২১৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৬, ২০১৭
এমআর/এএসআর