এ বিষয়ে কক্সবাজারের সিভিল সার্জন ডা. আব্দুস সালাম বাংলানিউজকে বলেন, প্রতিদিনই ডিপথেরিয়া আক্রান্ত রোহিঙ্গাদের সনাক্ত করা হচ্ছে। দিনে দিনে এই রোগে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে।
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সেনাবাহিনীর হত্যাযজ্ঞ ও দমন-পীড়নের মুখে গত ২৫ অগাস্ট থেকে প্রায় ৭ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিয়েছে। রাখাইন রাজ্যের বাসিন্দা, মানবিক ও নাগরিক অধিকারবঞ্চিত রোহিঙ্গারা দশকের পর দশক ধরে মৌলিক স্বাস্থ্যসেবা থেকেও বঞ্চিত। ফলে তারা বিভিন্ন প্রাণঘাতী সংক্রামক রোগের শিকার।
সিভিল সার্জন ডা. আব্দুস সালাম আরও বলেন, সংক্রামক ব্যাধি ডিপথেরিয়ায় আক্রান্তের হাঁচি, কাশির বা স্পর্শের মাধ্যমে খুব দ্রুতই রোগটি অন্যের শরীরে ছড়িয়ে পড়তে পারে। আক্রান্তের গলার পিছন দিকে সরু পর্দা তৈরি হয়। এতে শ্বাসকষ্ট, হৃদযন্ত্রের সমস্যা, পক্ষাঘাত, এমনকি মৃত্যুর ঘটনা পর্যন্ত ঘটতে পারে ঘটে।
উখিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য অফিসার ডা. মেজবাহ উদ্দিন বলেন, ডিপথেরিয়া সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া যে বিষাক্ত পদার্থ উৎপন্ন করে তা শ্বসনতন্ত্রের, বিশেষ করে নাক ও গলার টিস্যুকে নষ্ট করে দেয়। ডিপথেরিয়ার লক্ষণগুলো দেখা যায় ইনফেকশন হওয়ার দুই থেকে সাত দিন পরে। ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা ১০০.৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট তাপমাত্রার জ্বর থাকে গায়ে। প্রচণ্ড ক্লান্তি লাগে এবং শরীর ঠান্ডা হয়ে যায়। গলাব্যথা হয়। গলার গ্রন্থি ফুলে যায়। ঢোক গিলতে সমস্যা ও ব্যথা হয়। অনেক বেশি কাশি হয়।
তিনি আরো বলেন, দুই থেকে তিন দিনের মধ্যে ব্যাকটেরিয়া যখন ভালো টিস্যুকে নষ্ট করে দেয় তখন মৃত টিস্যুগুলো পুরো ধূসর আবরণ তৈরি করে রোগীর গলা ও নাকে, একে ‘সিউডো মেমব্রেন’ বলে। বিষাক্ত পদার্থ রক্তস্রোতে মিশে যেতে পারে যার ফলে হার্ট, কিডনি ও স্নায়ু ড্যামেজ হয়ে যায়। গলার ভেতরে ধূসর আবরণ বা ফুলে যাওয়া টনসিল দেখে প্রাথমিকভাবে এ রোগ সনাক্ত করা হয়। এরপর আক্রান্ত স্থান থেকে টিস্যু নিয়ে কালচার করতে ল্যাবরেটরিতে পাঠিয়ে নিশ্চিত হতে হয়।
কক্সবাজার সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার শাহীন মো. আব্দুর রহমান চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, একজন চিকিৎসক হিসেবে আমার পরামর্শ হবে স্থানীয় লোকজন অপ্রয়োজনে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ঘোরাঘুরি যেন না করেন। কারণ রোহিঙ্গারা শুধু ডিপথেরিয়ায় নয়, অনেক ধরনের ছোঁয়াচে রোগে আক্রান্ত। নিতান্ত প্রয়োজনে যদি সেখানে যেতেই হয় তবে দ্রুত কাজ শেষ করে ক্যাম্প ত্যাগ করুন। এছাড়া মাস্ক ব্যবহার করুন।
কক্সবাজারের সিভিল সার্জন ডা. আবদুস সালাম বাংলানিউজকে বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থার সহযোগিতায় বাংলাদেশ সরকার ৯ ডিসেম্বর থেকে উখিয়ার ৪৮টি ও টেকনাফের ১২টি ভ্রাম্যমান ক্যাম্প থেকে রোহিঙ্গাদের ডিপথেরিয়ো রোগের প্রতিষেধক টিকা দিচ্ছে। এতে ১২০জন স্বাস্থ্যকর্মী কাজ করছেন। এ পর্যন্ত (২৫ ডিসেম্বর) প্রায় ৮৫ হাজার রোহিঙ্গাকে এই রোগের প্রতিষেধক টিকা দেওয়া হয়েছে। যাদের বয়স ১৫ বছরের নিচে।
সিভিল সার্জন আবদুস সালাম আরো বলেন, সংক্রামক এই রোগের কারণে আপাতত ক্যাম্পে কোনো নতুন রোহিঙ্গা প্রবেশ না করানোর জন্য জেলা প্রশাসনকে অনুরোধ করা হয়েছে।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, বান্দরবান জেলার নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তে হাজার তিনেক রোহিঙ্গা রয়েছে। এই ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগেরে কারণে তাদেরকে ক্যাম্পে আনা হচ্ছে না।
বাংলাদেশ সময়: ১৭১৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৮, ২০১৭
টিটি/ জেএম