ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

বিনামূল্যে চোখের অপারেশন বসুন্ধরা চক্ষু হাসপাতালে

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৫৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০১৮
বিনামূল্যে চোখের অপারেশন বসুন্ধরা চক্ষু হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা

ঢাকা: ১৪ ফেব্রুয়ারি ভালোবাসা দিবসে অসহায় দরীদ্র মানুষদের চোখের আলো ফিরিয়ে দেওয়ার মহৎ কাজটি সম্পাদন করছে বসুন্ধরা আই হসপিটাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউট। সম্পূর্ণ বিনামূল্যে চোখের চিকিৎসার ক্যাম্প কুষ্টিয়ার হরিনারায়ণপুরের শিবপুর এলাকায় চলছে গত বছরের নভেম্বর মাস থেকে। সেখানে চক্ষু সমস্যাজনিত প্রায় ১৫০০ জন দরিদ্র রোগীকে এখন পর্যন্ত ফ্রি চিকিৎসা এবং ওষুধ সরবরাহ করা হয়েছে।

তাদের মধ্যে যাদের অবস্থা গুরুতর বা অপারেশনের প্রয়োজন তাদেরকে নিয়ে আসা হচ্ছে রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় অবস্থিত বসুন্ধরা আই হসপিটাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটে। এখানেও অপারেশন হচ্ছে বিনামূল্যে।

বুধবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) হাসপাতালটি ঘুরে দেখা যায়, অপারেশনের জন্য অপেক্ষারত রোগীদের। মঙ্গলবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) সর্বমোট ৩৪ জন রোগী এ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তাদের মধ্যে ৩১ জনের অপারেশন হবে বুধবার। অপারেশন শেষে বৃহস্পতিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) নিজ নিজ আবাসস্থলের উদ্দেশ্যে ফিরে যাবেন বলে জানিয়েছেন হাসপাতালটির হিউম্যান রিসোর্স (এইচআর) ম্যানেজার মো. আহসান হাবিব।

তিনি বলেন, এখানে আসা রোগীদের থাকা ও খাওয়া ফ্রি। চোখে ছানি পড়া রোগীর সংখ্যাই বেশি। এছাড়া চোখে বিভিন্নভাবে আঘাতপ্রাপ্ত রোগীও রয়েছেন, যারা অর্থের অভাবে চিকিৎসা করাতে পারছিলেন না। আমরা সর্বমোট ৩০০ জন রোগীকে পেয়েছি অপারেশন করানোর জন্য। কুষ্টিয়া থেকে আমরা রোগীদের এনেছি, চিকিৎসা শেষে আবার পৌঁছেও দিচ্ছি। তবে এই আসা-যাওয়ার জন্য তাদের কাছ থেকে ১০০০ টাকা করে নেওয়া হচ্ছে। আজ অপারেশন ও আগামীকাল ড্রেসিং করার পর তারা বাসে উঠবেন এবং রোগীদেরকে একমাসের ওষুধ বিনামূল্যে দেওয়া হবে।

জানা যায়, অপারেশন পরিচালিত হচ্ছে তিন সদস্যবিশিষ্ট চিকিৎসক এবং ৮ সদস্যবিশিষ্ট মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্টদের মাধ্যমে। প্রফেসর ডা. মো. সালেহ আহমেদের নেতৃত্বে অপর দুই চিকিৎসক হলেন ডা. মজিবর রহমান ও ডা. রুবিনা আক্তার।

হাসপাতালে ভর্তিকৃত নারী ও পুরুষ রোগীরা রয়েছেন পৃথক ওয়ার্ডে। এর মধ্যে  নারী ১৩ জন এবং পুরুষ ১৮ জন। শিবপুর এলাকা থেকে এসেছেন সামেলা ও কাজল বিবি। বাংলানিউজকে তারা জানান, আমাদের চোখে সমস্যা হয়েছে অনেক আগেই। অনেকদিন ধরেই চোখে দেখি না। খুলনা, কুষ্টিয়ায় ডাক্তার দেখাইছি। তারা বলেছিলো অপারেশন করতে ঢাকায় যেতে হবে। কিন্তু অপারেশনের জন্য এতো টাকা কই পাবো? পরে এই ক্যাম্পের খবর পেলাম। এখন আসছি। এখানে এরা যাতায়াতের জন্য ১০০০ করে টাকা নিয়েছে। এছাড়া কোনো টাকা লাগে নি। ওষুধ, খাবার সবই এরা দিচ্ছে।

বেশিরভাগ রোগীদের সঙ্গে তাদের আত্মীয়-স্বজন কেউই আসে নি। তাই কিছুটা চিন্তিত থাকলেও হাসপাতালটির সঠিক পরিচর্যার কারণে চিন্তামুক্ত সবাই। মকবুল, কুবাদ আলীরা প্রকাশ করছিলেন সে রকম অভিব্যাক্তি। বাংলানিউজকে তারা বলেন, এখানে যারা এর আগে আইছিলো তারাই কয়েছে যে, যত্নআত্মী এহেবারে শ্বশুরবাড়ির মতো। আর অপারেশনের পরে সবাই ফকফকা দেখতি পারতেছে। আমাগে অপারেশন হয়ে গেছে। সবাই খুব ভালো ব্যবহার করতেছে। ভালো খাতি দেচ্ছে। তয় চোখটা এখনও আটকানো রয়েছে। কাইল খুইলে দেবে। কাইল বাড়িও যাবো। আমার আর আন্ধার আন্ধার দেখতি হবে না।

হাসপাতালে কর্মরত মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট আমীর জানান, আমরা এক শিফটে ১৫ জন করে কাজ করি। তার মধ্যে ৮ জন অপারেশন থিয়েটারে আর বাকিরা ওয়ার্ডে। রোগীদের সঙ্গে কেউ নেই। তাই এখানে আমরাই সব। সব দুঃখ, কষ্ট, সমস্যা আমাদেরকেই বলেন। আমরাও যতদূর পারি ওনাদের জন্য কাজ করে যাচ্ছি।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৫৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০১৮
এমএএম/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।