ট্রান্সজেন্ডার বলতে মূলত বোঝায়, যাদের এমন একটি নিজস্ব যৌন পরিচয় বা যৌন অভিব্যক্তি রয়েছে, যা তাদের জন্মগত যৌনতা থেকে ভিন্ন। বর্তমান বিশ্বের অনেক ট্রান্সজেন্ডার ব্যক্তি ডাক্তারি চিকিৎসার সাহায্যে নিজেদের যৌন পরিচয় পরিবর্তন করেন।
একজন পুরুষ যদি চিকিৎসার মাধ্যমে যৌন পরিচয় পরিবর্তন করেন, প্রাকৃতিকভাবে তার দুগ্ধবতী হয়ে ওঠার কথা নয়। প্রাকৃতিকভাবে তা সম্ভব না হলেও চিকিৎসার মাধ্যমে হরমোন প্রভাবিত করে এক ট্রান্সজেন্ডার নারীকে দুগ্ধবতী করে তোলেন নিউইয়র্কের একদল গবেষক।
গবেষকরা এখন বলছেন, ট্রান্সজেন্ডার নারীদের স্বল্পপরিসরে কিন্তু কার্যকরী উপায়ে দুগ্ধবতী করা সম্ভব। এ বিষয়ক গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয় ‘ট্রান্সজেন্ডার হেলথ’ জার্নালে।
যে ট্রান্সজেন্ডার নারীর উপর ভিত্তি করে গবেষণাটি পরিচালিত হয়, জন্মগতভাবে তিনি ছিলেন পুরুষ। দীর্ঘ বছর হরমোন থেরাপির মাধ্যমে নারীসুলভ হরমোনগুলো তার ভেতর প্রবেশ করানো হয়।
একসময় তার সঙ্গী গর্ভবতী হয়ে ওঠেন। তবে তার সঙ্গীটি শিশুকে স্তন্যপান করাতে আগ্রহী ছিলেন না। নবাগত শিশুর প্রাথমিক খাদ্য বুকের দুধ সরবরাহের দায়িত্বটা নিজের ঘাড়ে তুলে নেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেন ৩০ বছর বয়সী ওই ট্রান্সজেন্ডার নারী। তিনি শরণাপন্ন হন নিউইয়র্কের একটি হাসপাতালের।
চিকিৎসকরা কিছু পূর্ব নির্দেশিত স্বাস্থ্যবিধির উপর ভিত্তি করে তার হরমোন প্রভাবিত করার প্রক্রিয়া চালান। নারীদের বুকের দুধ উৎপাদন বাড়ায় এমন কিছু ওষুধও সেবন করান তিনি।
চিকিৎসা শুরুর সাড়ে তিন মাস পর শিশুটি জন্ম নেয়। জন্মের ছয় সপ্তাহ পর্যন্ত খুব ভালো করেই ওই নারীর স্তন্যপান করে শিশুটি। পরে বুকের দুধের ঘাটতির আশঙ্কা দেখা দিলে শিশুকে বিকল্প খাবার খাওয়ানো শুরু হয়।
রিপোর্টে বলা হয়, এ দুধ খাওয়ায় শিশুর পুষ্টি ও বিকাশে কোনো অস্বাভাবিকতা দেখা যায়নি।
কিন্তু এ বিষয়টি এখনও পুরোপুরি নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না যে, ট্রান্সজেন্ডারের স্তন্যপান শিশুর জন্য পুরোপুরি নিরাপদ এবং পরিপূর্ণ মাত্রায় পুষ্টিকর, জানান ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার ট্রান্সজেন্ডার হেলথ বিষয়ক গবেষক মেডেলিন ডিউচ।
তিনি বলেন, যে বিষয়টি নিয়ে আমাদের সবচেয়ে বেশি নিশ্চিত হতে হবে তা হলো এ দুধের পুষ্টিগুণ। তাছাড়া যেসব হরমোন মানুষকে দুগ্ধবতী/মানুষের বুকে দুধ সরবরাহ করার পেছনে কাজ করে, তা কখনো কখনো মানুষের মন-মেজাজ বা ওজনকেও প্রভাবিত করে।
এ বিষয়ে আরও গবেষণার প্রয়োজন বলে মনে করেন ডিউচ।
ট্রান্সজেন্ডার নারীদের স্তন্যপান করানোর ঘটনা এটিই প্রথম নয়। প্রায় ১০ থেকে ১৫ বছর ধরে ট্রান্সজেন্ডারদের কেউ কেউ এ উপায়ে শিশুকে বুকের দুধ সরবরাহ করে আসছেন। তবে এবারই প্রথম বিষয়টি গবেষণাপত্রে স্থান পেয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ০০৩৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০১৮
এনএইচটি/এএ