ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

সব রোগীর অস্ত্রোপচারকারী চিকিৎসক স্বামী-স্ত্রী!

বেলাল হোসেন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০১৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০১৮
সব রোগীর অস্ত্রোপচারকারী চিকিৎসক স্বামী-স্ত্রী! পালস জেনারেল হাসপাতালের প্রধান ফটক/ছবি: বাংলানিউজ

বগুড়া: বহুতল ভবন। পরিপাটি করে গড়ে তোলা। নতুন হওয়ায় ভবনের ভেতরের পরিবেশটাও বেশ ভালো। চারপাশটা প্রাচীরে ঘেরা। ভেতরে প্রবেশের প্রধান ফটকটা বেশ বড়। ফটকের সঙ্গেই বড় একটি সাইনবোর্ডে লাল রংয়ে খেলা রয়েছে ‘পালস জেনারেল হাসপাতাল।’

এ হাসপাতালের সার্বিক তত্ত্বাবধানে রয়েছেন পাবনা মেডিকেল কলেজের সহকারী অধ্যাপক (চর্ম ও যৌন) ডা. আখতারুল আলম আজাদ ও বগুড়া আর্মি মেডিকেল কলেজের সহকারী অধ্যাপক ডা. তুনারজিনা আখতার মুক্তি। হাসপাতালের মালিকও তারাই।

সম্পর্কে স্বামী-স্ত্রী।

হাসপাতালের ভবনের সামনে অংশে অন্তত ১৮-২০জন ডিগ্রিধারী বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের নাম লিখে ছোট ধরনের সাইনবোর্ড সারিবদ্ধভাবে টানিয়ে দেওয়া হয়েছে। এসব চিকিৎসক এ হাসপাতালে আসেন কি-না তাও কারো জানা নেই। আর যেসব চিকিৎসকের নাম ব্যবহার করে সাইনবোর্ড টানিয়ে দেওয়া হয়েছে তারাও এ ব্যাপারে অবগত কি-না সেটাও কারো জানা নেই।

হাসপাতালের অস্ত্রোপচারের কাজটিও করেন এ চিকিৎসক দম্পতি। প্রায় সব রোগীর অস্ত্রোপচারকারী চিকিৎসক তারা। এ কারণেই প্রায়ই রোগী মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। কিন্তু প্রভাবশালী হওয়ায় এতোদিন বিষয়টি ধামাচাপা দিতে সক্ষম হয়েছেন তারা।

সোমবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) ঘটনার সূত্রধরে বগুড়ার শেরপুর উপজেলার ঢাকা-বগুড়া মহাসড়কের পশ্চিমপ্রান্তে হামছায়াপুর কাঁঠালতলা এলাকায় গড়ে ওঠা ‘পালস জেনারেল হাসপাতালে’র চিকিৎসা কার্যক্রম সম্পর্কে অনুসন্ধানে এ সব তথ্য ওঠে আসে।

সোমবার প্রসূতি ও নবজাতকের মৃত্যুর ঘটনায় শেরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য পরিবার ও পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আব্দুল কাদেরকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী তিন দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে তাদের।

এরআগে শনিবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) চিকিৎসকের অবহেলায় প্রসূতি পুতুলী ও নবজাতকের মৃত্যুর ঘটনায় যেন এতোদিনের চাপা দেওয়া থলের বিড়াল বেরিয়ে পড়েছে।

রোববার (১৮ ফেব্রুয়ারি) রাতে নিহতের স্বামী শিবেন হাসপাতালের মালিক ডা. আখতারুল আলম আজাদ, ডা. লুৎফুন্নেছা, হাসপাতালের ম্যানেজার আমিনুর ও স্টাফ ইউসুফকে অভিযুক্ত করে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলা নম্বর-২১। ওই রাতে অভিযান চালিয়ে আমিনুর ও ইউসুফকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

শেরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, মামলার অপর আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। তদন্তে ঘটনার সঙ্গে কারো নাম উঠে আসলে তাকেও এ মামলায় আসামি করা হবে। যে যতো প্রভাবশালীই হোক না কেন কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।
 
সরেজমিনে, বেলা তখন ১২ টার। হাসপাতালের প্রধান ফটক ভেতর থেকে বন্ধ। ভেতরে একটি অ্যাম্বুলেন্স রয়েছে। ভেতরের দরজা খোলা থাকলেও দায়িত্বশীল কোনো ব্যক্তি হাসপাতালে নেই। তবে টিভি চালু ছিলো তখন। অথচ একদিন আগেও সেখানে রোগী ও তাদের স্বজনরা ভিড় করতো।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ব্যাংকার বাংলানিউজকে জানান, বেশ কয়েকমাস আগে কাজীপুর উপজেলার এক প্রসূতিকে ওই হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। যথারীতি চিকিৎসক স্বামী-স্ত্রী মিলে প্রসূতির অস্ত্রোপচার করেন। কিন্তু তাদের ভুলের কারণে প্রসূতি বেঁচে গেলেও মারা যায় নবজাতক। পরে ম্যানেজ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ঘটনাটি ধামাপাচা দেওয়া হয়।

স্থানীয়রা জানান, শুধু অস্ত্রোপচারের আগে রোগীকে অজ্ঞানের কাজটি করেন সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক। এছাড়া ছোট থেকে বড় এমনকি জটিল রোগের অস্ত্রোপচারের কাজটিও করেন ওই চিকিৎসক দম্পতি। আর সিজারের কাজটি যেন তাদের কাছে মুড়ি মোয়ার মতো।

অস্ত্রোপচারে রোগী মারা গেলে বা মারা যাওয়ার উপক্রম হলে সঙ্গে সঙ্গে সেই রোগীকে আর এখানে রাখা হয় না। অ্যাম্বুলেন্স বা অন্য কোনো যানবাহনে করে অক্সিজেন লাগিয়ে উন্নত চিকিৎসার কথা বলে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজে (শজিমেক) হাসপাতালে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এভাবে অত্যন্ত কৌশলে দাঁড় এড়িয়ে যান ওই চিকিৎসক দম্পতি-যোগ করেন স্থানীয়রা।

বাংলাদেশ সময়: ১৬১০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০১৮
এমবিএইচ/ওএইচ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।