বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে দেশব্যাপী তুমুল সমালোচনার সৃষ্টি হয়।
বৃহস্পতিবার (২৯ মার্চ) চুয়াডাঙ্গার সিভিল সার্জন ডা. খায়রুল আলম ইমপ্যাক্ট মাসুদুল হক মেমোরিয়াল হাসপাতালের চক্ষু বিষয়ক সব চিকিৎসা কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন।
পরে বিকেলে ওই হাসপাতালের প্রশাসনিক কর্মকর্তা ডা. শফিউল কবির জিপু সাংবাদিকদের বিষয়টি জানান। তিনি জানান, বিকেলে সিভিল সার্জন স্বাক্ষরিত একটি স্মারকপত্র পাওয়ার পর থেকে হাসপাতালের চিকিৎসা সেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
এর আগে, বুধবার (২৮ মার্চ) দুপুরে জেলা সিভিল সার্জন খায়রুল আলমের নির্দেশে স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে তিন সদস্যর একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। ওই তদন্ত দলের প্রধান করা হয় সদর হাসপাতালের চক্ষু কনসালটেন্ট ডা. শফিউজ্জামান সুমনকে। শনিবার (৩১ মার্চ) থেকে তদন্ত কমিটি আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের কাজ শুরু করবে।
সরেজমিনে দেখা যায়, হাসপাতালটিতে সব ধরনের রোগীর চাপ একেবারেই কম। চক্ষু সেবার ইনডোর আউটডোর, ডাক্তার বসার চেম্বারসহ অপারেশন থিয়েটার তালাবদ্ধ রয়েছে।
গোটা পরিস্থিতি নিয়ে ইমপ্যাক্ট মাসুদুল হক মেমোরিয়াল কমিউনিটি হেলথ সেন্টারের প্রশাসনিক কর্মকর্তা ডা. শফিউল কবির জিপু বাংলানিউজকে বলেন, অপারেশন করা ২৪ জনের মধ্যে যে ২০ জনের চোখে ইনফেকশন ধরা পড়েছে। এতে আমাদের হাসপাতাল বা চিকিৎসকের কোনো ত্রুটি নেই। অপারেশনে ওরাবুলু নামের ব্যবহৃত কিডসে গার্ম নেগেটিভ সেসিলি ব্যাক্টেরিয়ার অস্তিত্ব রয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।
অপারেশনে ব্যবহৃত কিডসে গার্ম ওষুধ কোম্পানির বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন বলেন, ওষুধ কোম্পানিটি ভারতীয়। এ ব্যাপারে করণীয় নিয়ে আমাদের ম্যানেজমেন্ট দফায় দফায় বৈঠক করছেন।
৫ মার্চ চুয়াডাঙ্গা শহরের ইমপ্যাক্ট মাসুদুল হক মেমোমিরয়াল কমিউনিটি হেলথ সেন্টারে ছানি পড়া ২৪ রোগীর একটি করে চোখে অপারেশন করা হয়। অপারেশনের একদিন পরই ছাড়পত্র দিয়ে রোগীদের বাড়িতে পাঠানো হয়। বাড়িতে ফেরার কয়েক ঘণ্টার মাথায় ২০ জন রোগীর চোখে তীব্র যন্ত্রণা শুরু হয়।
পরে ওই ২০ জন রোগী একে একে পুনরায় হাসপাতালটিতে ভর্তি হয়। প্রাথমিক পরীক্ষায় ২০ জন রোগীরই চোখে ধরা পড়ে ইনফেকশন। অবস্থা বেগতিক দেখে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ গোপনে ওই ২০ জনকে ঢাকার ইসলামিয়া চক্ষু ইনস্টিটিউট ও ভিশন আই হাসপাতালে ভর্তি করান। সেখানে ২০ জনের প্রত্যেকের পুনরায় অপারেশন করে ইনফেকশনে আক্রান্ত হওয়া চোখটি তুলে ফেলা দেওয়া হয়।
ওই হাসপাতালে অপারেশন করিয়ে যারা চোখ হারিয়েছেন তারা হলেন- চুয়াডাঙ্গা গাইদঘাটের গোলজার হোসেন, আলুকদিয়ার ওলি মোহাম্মদ, আলমডাঙ্গার বাড়াদী এনায়েতপুরের খন্দকার ইয়াকুব আলী, খাসকররার লাল মোহাম্মদ, চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গার সোনাপট্টির আবনী দত্ত, আলমডাঙ্গা মোড়ভাঙ্গার আহমেদ আলী, হারদীর হাওয়াতন, দামুড়হুদা লক্ষ্মীপুরের তৈয়ব আলী, মদনার মধু হালদার, আলমডাঙ্গা নতিডাঙ্গার ফাতেমা খাতুন, খাস-বাগুন্দার খবিরন নেছা, জীবননগর সিংনগরের আজিজুল হক, দামুড়হুদা চিৎলার নবীছদ্দিন, মজলিশপুরের সাফিকুল ইসলাম, আলমডাঙ্গা রংপুরের ইকলাস, দামুড়হুদা কার্পাসডাঙ্গার গোলজান, সদাবরীর হানিফা, আলমডাঙ্গা স্টেশনপাড়ার কুতলি খাতুন, কুটি পাইকপাড়ার উষা রাণী ও দামুড়হুদার বড় বলদিয়ার আয়েশা খাতুন।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৫৬ ঘণ্টা, মার্চ ২৯, ২০১৮
এনটি