অতিরিক্ত মুনাফার লোভে দেশের শীর্ষস্থানীয় ওষুধ উৎপাদক প্রতিষ্ঠানের এহেন অসাধুতা জনস্বাস্থ্যে বড় ধরনের বিপর্যয়ের কারণ হতে পারে বলে মনে করছে ‘ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর’।
২০১৬ সালের ডিসেম্বরে ওষুধ নিয়ন্ত্রণ কমিটির সভায় ‘সুডোএফিড্রিন’ দিয়ে তৈরি হয় এমন সবধরনের ওষুধের নিবন্ধন বা রেজিস্ট্রেশন বাতিলের নির্দেশ দেওয়া হয় অধিদপ্তরকে।
‘স্যুডোএফিড্রিন’ ওষুধের একটি নেশা জাতীয় উপাদান। ঠাণ্ডা ও সর্দিজনিত কারণে নাক বন্ধ হয়ে গেলে এ উপাদানটি ডিকনজেস্টেন্ট (নাকের কার্যাবলি স্বাভাবিক করতে) হিসেবে কাজ করে। কিন্তু উদ্দীপক বা উত্তেজক ক্রিয়ার কারণে এটি নেশা ধরানোর উপাদান হিসেবেও বিবেচিত। তাই অনেকেই কম খরচে নেশা করতে ‘স্যুডোএফিড্রিন’যুক্ত সিরাপ গ্রহণ করে থাকেন।
নিয়ন্ত্রণ কমিটির সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ২০১৭ সালের মার্চে ‘ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর’ ‘স্যুডোএফিড্রিন’ দিয়ে তৈরি সব ওষুধের রেজিস্ট্রেশন বাতিল করে এবং এ জাতীয় ওষুধ উৎপাদক সবগুলো প্রতিষ্ঠানের ব্র্যান্ড রেজিস্ট্রেশন বাতিল করে চিঠি দেয়। চিঠিতে তিন মাসের মধ্যে বাজার থেকে এ জাতীয় সব ওষুধ প্রত্যাহারপূর্বক ধ্বংস করে ‘ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর’কে অবহিত করতে বলা হয়।
ওষুধ উৎপাদক অন্য প্রতিষ্ঠান ‘স্যুডোএফিড্রিন’ মেশানো সিরাপ ‘তুসকা’ ও ‘অফকফ’ বাজারজাত বন্ধ না করে সরবরাহ অব্যাহত রাখে। বর্তমানে কর্তৃপক্ষকে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে সিরাপ দু’টি বিক্রি করছে উচ্চমূল্যে।
সূত্রে জানা যায়, রেজিস্ট্রেশন বাতিল করার পরও ‘তুসকা’ ও ‘অফকফ’ সিরাপ বাজারজাত ও বিক্রি করার অভিযোগে ২০১৭ সালের অক্টোবরে স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যাল লিমিটেডকে কারণ দর্শানোর (শো’কজ) নোটিশ দিয়েছিল ‘ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর’। কিন্তু তাতেও কোনো কাজ হয়নি।
ঢাকার বিভিন্ন এলাকার ফার্মেসিতে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, নিষিদ্ধ ‘তুসকা’ ও ‘অফকফ’ সিরাপ নির্ধারিত মূল্যের দ্বিগুণ ও তার চেয়ে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। ভাটারা এলাকায় ৬৫ টাকার ‘তুসকা’ সিরাপ বিক্রি হচ্ছিলো ১৩০ টাকায়।
আর ‘ডেক্সপোটেন’ সিরাপ উৎপাদন করছে এস্কাইফ ফার্মাসিউটিক্যাল লিমিটেড। এই কফ সিরাপটি নেশা হিসেবে সেবন করা হয়। বাজারে নিষিদ্ধ থাকলেও দেদারছে মিলছে ফার্মেসিগুলোতে। সিরাপের মোড়কে বাজার মূল্য ৮০ টাকা লেখা থাকলেও ১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ফার্মেসির লোকজন।
কারণ জানতে চাইলে ঢাকা ল্যাব ফার্মার মালিক রাকিব তালুকদার বাংলানিউজকে বলেন, সরকার এই ওষুধটি নিষিদ্ধ করেছে। তাই বেশি দামে কিনতে হচ্ছে এবং দাম বেড়ে গেছে।
রাকিব আরও বলেন, ওষুধ দু’টিতে নেশা জাতীয় উপদান থাকায় বাজারে এর চাহিদাও অনেক।
দক্ষিণ বাড্ডা রতন মেডিকেল হলে ‘তুসকা’ ও ‘অফকফ’ সিরাপের খোঁজ করলে ৬৫ টাকার তুসকা সিরাপ ১০০ টাকা এবং ৮০ টাকার অফকফ্ ১২০ টাকা বিক্রি করতে দেখা যায়। অবশ্য বিক্রয়কর্মীর কাছে ক্যাশমেমো চাইলে সেখানে নির্ধারিত দামের বেশি উল্লেখ করা যাবে না বলেও জানিয়ে দেওয়া হয়।
জানা যায়, স্কয়ারের ‘তুসকা’ ও ‘অফকফ’ বাজারে বিক্রি হওয়ার বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও ইমেইল বার্তার মাধ্যমে জানার পর ‘ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর’ দেশব্যাপী অভিযান পরিচালনা করে নিষিদ্ধ এই সিরাপ জব্দ করে। এরপর গত বছরের ১২ অক্টোবর যে শো’কজ নোটিশ দেওয়া হয়েছিল, তার প্রেক্ষিতে স্কয়ারের দেওয়া জবাবেও সন্তুষ্ট হয়নি ‘ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর’। পরবর্তীতে এ ব্যাপারে সতর্ক করে আবারও স্কয়ার ফার্মাকে চিঠি দেয় অধিদপ্তর।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের সিনিয়র ম্যানেজার (রেগুলেটরি অ্যাফায়ারস) আন্দালিব ইবনে আফাজ বলেন, ‘ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর’র নির্দেশনার পর আমরা অফকফ্ ও তুসকা সিরাপ উৎপাদন বন্ধ করে দিয়েছি।
এখনো সিরাপ দু’টি বাজারে নির্ধারিত মূল্যের দ্বিগুণ দামে বিক্রির বিষয়ে তিনি বলেন, এগুলো অনেক আগেই ফার্মেসিগুলোর কাছে ছিল। তবে ‘ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর’র নির্দেশনা অনুযায়ী বাজার থেকে সব ওষুধ প্রত্যাহার করা হয়েছিল কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, দেশে এক লাখ দোকান আছে। সব ওষুধ প্রত্যাহার করতে কতদিন সময় লাগবে বুঝতেই পারছেন।
বাংলাদেশ সময়: ০৮৫৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ০১, ২০১৮
এসই/এনএইচটি/এইচএ/