হাসপাতালের ওয়ার্ডের স্টোরে কলেরা স্যালাইন মজুদ করে রোগীদের বাহির থেকে কিনে আনতে বাধ্য করা, যথাসময়ে কর্মস্থলে দুই চিকিৎসককে না পাওয়া এবং সঠিকভাবে ভর্তিরত রোগীদের পরিসংখ্যান না রাখায় এ ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।
এছাড়া রোগীদের না দিয়ে এক হাজার ব্যাগ সরকারি স্যালাইন মজুদের সঙ্গে জড়িত ডায়রিয়া ওয়ার্ডের ইনচার্জ সিনিয়র স্টাফ নার্স মুনিয়া ইয়াসমীনের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে আবাসিক মেডিকেল অফিসারকে (আরএমও) নির্দেশ দেন তিনি।
বৃহস্পতিবার (১২ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ১০টায় দুদক কমিশনার আমিনুল ইসলাম আকস্মিক বরিশাল জেনারেল হাসপাতাল পরিদর্শন করেন।
এসময় তার সঙ্গে দুদকের বরিশাল বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালক আবু সাঈদ, দুদকের পরিচালক মনিরুজ্জামানসহ দুদক কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকালে দুদক কমিশনার হাসপাতালে এসে বিভিন্ন চিকিৎসকের কক্ষ পরিদর্শন করেন। এসময় তিনি জরুরি ও দন্ত বিভাগের দুই চিকিৎসককে পাননি। এছাড়া তিনি প্যাথলজি, স্টোর, এক্সরে বিভাগ, জরুরি বিভাগ, ডায়রিয়া বিভাগ, বহিঃবিভাগসহ হাসপাতালের বিভিন্ন জায়গা পরিদর্শন করেন।
হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ড পরিদর্শনকালে দুদক কমিশনার রোগীদের সঙ্গে কথা বলেন। এসময় ওই ওয়ার্ডে ভর্তিরত রোগীরা হাসপাতাল থেকে সরকারিভাবে কোনো কলেরা স্যালাইন বা ওষুধ পান না বলে জানান। যা দুদক কমিশনার খতিয়ে দেখে সত্যতা খুঁজে পান এবং ওয়ার্ডের স্টোর পরিদর্শন করেন।
এসময় তিনি স্টোর রুমের ভেতরে থাকা একটি বেডের নিচ এবং বিভিন্ন জায়গায় লুকায়িত ও পরিত্যক্ত অবস্থায় প্রায় এক হাজার ব্যাগ বিভিন্ন প্রকারের কলেরা স্যালাইন উদ্ধার করেন। যা রোগীদের না দিয়ে মজুদ করা হয়েছে বলে নিশ্চিত হয়ে বিষয়টি নিয়ে ক্ষুব্দ হন দুদক কমিশার।
পরিদর্শন শেষে দুদক কমিশনার বলেন, আমরা প্রতিরোধমূলক বহু কাজ করেছি সারা বাংলাদেশব্যাপী। এর মধ্যে আমরা গণশুনানি করছি, বিভিন্ন অফিস পরিদর্শনে যাচ্ছি, হাসপাতাল পরিদর্শন করছি, হাসপাতাল পরিদর্শনে বিভিন্ন অনিয়ম পেয়ে আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি, তারা যেমন ব্যবস্থা নিয়েছে, আমরাও ব্যবস্থা নিয়েছি।
তিনি আরও বলেন, কিন্তু আগের সবকিছু আজকে ছাপিয়ে গেছে। আজকে বরিশাল জেনারেল হাসপাতাল পরিদর্শনে এসে জরুরি বিভাগে চিকিৎসক পাইনি। দাঁতের ডাক্তার ছুটিতে আছেন না হাসপাতালে আছেন তা আরএমও জানেন না। এরপর কলেরা ওয়ার্ডে গিয়ে প্রত্যেক রোগী ও স্বজনদের সঙ্গে কথা বললাম। তারা বললো তাদের কলেরা স্যালাইন দেওয়া হয় না।
দুদক কমিশনার বলেন, আরএমও বলছে, তাদের দেওয়ার অনুমতি রয়েছে। নার্স বলছে, স্টোরে রিকুইজিশন দিয়েছি সেখান থেকে আমাদের দেয়নি। আবার স্টোর বলছে, সব আমরা দিয়ে দিয়েছি। এরপর আমরা ওয়ার্ডের স্টোর খুলে দেখলাম আনাচে-কানাচে, খাটের তলে, বস্তায় ভর্তি, ছড়ানো-ছিটানো অবস্থায় প্রায় এক হাজারের বেশি সরকারি স্যালাইন আছে।
তিনি বলেন, কি অমানবিক। সরকারি স্যালাইন থাকতেও সাধারণ মানুষ সকাল থেকে কোনো স্যালাইন পায়নি। একেকজনকে তিনটা-চারটা স্যালাইন বাহির থেকে কিনে আনতে হয়েছে। সিভিল সার্জন না থাকায় আমরা আরএমওকে বলেছি, সংশ্লিষ্ট ইনচার্জের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য এবং আমরা কমিশনে গিয়ে বিষয়টি নিয়ে আলাদা ব্যবস্থা নেবো।
এ ঘটনায় হাসপাতাল ও জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তাদের দায়ী করে দুদক কমিশনার বলেন, সরকারের ওষুধের কোনো শেষ নেই, কিন্তু যারা রোগী তারা পাচ্ছে না। আর যাদের দেখার কথা তারা দেখছে না।
এ বিষয়ে আরএমও দেলোয়ার হোসেন জানান, মার্চ থেকে মে মাস পর্যন্ত ডায়রিয়ার প্রকোপ বেশি থাকে। এ সময়ের জন্য কিছু স্যালাইন মজুদ করে রাখা হয় ওয়ার্ডে। সর্বোশেষ অডিটে ওই স্যালাইন মজুদের বিষয়টি অডিট কর্মকর্তাসহ তারা দেখেছেন। এগুলো রোগীকে দিয়ে দেওয়া হবে, তবে সকাল থেকে ওয়ার্ডের রোগীদের কোনো স্যালাইন না দেওয়ার ঘটনায় ইনচার্জকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হবে।
ওয়ার্ডের ইনচার্জ সিনিয়র স্টাফ নার্স মুনিরা ইয়াসমীন জানান, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ রয়েছে রোগী ভর্তি হওয়ার পর প্রথম স্যালাইনটি হাসপাতাল থেকে দেওয়ার, বাকিগুলো রোগীকে কিনে আনতে হবে। এর বাহিরে তার কোনো কাজ করার সুযোগ নেই। আর মজুদ স্যালাইনের বিষয়ে আরএমওসহ সবাই অবহিত। জরুরি সময়ের জন্য এগুলো হাতে রাখা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৯০৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ১২, ২০১৮
এমএস/আরবি