প্রযুক্তির উন্নয়নের ফলে আমরা ঘরে বা অফিসে অ্যান্ড্রয়েড ফোন কিংবা কম্পিউটারের সঙ্গে সংযুক্ত। এ কারণে বেশিরভাগ সময় আমরা বসে কিংবা দাঁড়িয়ে অনেকটা মাথা ঝুঁকে সময় পার করে থাকি।
আধুনিক মানুষের জীবনধারার কারণেই এসব রোগের প্রকোপ বাড়ছে বলে জানিয়েছেন কলকাতার মেডিকা সুপার-স্পেশালিটি হসপিটালের কনসালটেন্ট স্পাইন সার্জন ডা. সূমায়ু দত্ত।
সোমবার (২৩ এপ্রিল) জাতীয় প্রেসক্লাবের কনফারেন্স লাউঞ্জে মেরুদণ্ড ও হৃদরোগ সমস্যা বিষয়ক সেমিনারে এসব কথা জানান তিনি।
ডা. সূমায়ু দত্ত বলেন, এই রোগের ৮০ শতাংশ ফিজিওথেরাপিস্টের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যায়ামের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। বাকি ২০ ভাগের ক্ষেত্রে সার্জারির প্রয়োজন হয়। তবে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন আমাদের জীবনধারায় পরিবর্তন আনা। অফিসে বাসায় আমরা সবাই ঝুঁকে কাজ করি আবার কাজ শেষে অ্যান্ড্রয়েড ফোন নিয়ে সময় কাটাই তাও ঝুঁকে। এতে আমরা দ্রুত অস্টিওপোরোসিস রোগে আক্রান্ত হই এবং অনেক ক্ষেত্রে এই রোগ ছাড়াই এসব সমস্যায় আমরা যুবক বয়সেই ভুগী।
তিনি বলেন, এ রোগের সার্জারির ক্ষেত্রে মানুষের অনেক ভীতি রয়েছে। কেননা এ অপারেশনে অনেক বেশি রক্ত ঝরে যায়। বড় কাটাকুটির কারণে তা সেরে উঠতেও ২ থেকে ৩ মাস সময় লাগে। আবার অপারেশনের পরও অনেক সময় ইনফেকশনের সৃষ্টি হয়।
এসব সমস্যা কাটিয়ে উঠে নতুন পদ্ধতিতে অপারেশনের কথাও বলেন এই স্পাইন সার্জন। যে পদ্ধতিতে অপারেশনের একদিনের মধ্যেই রোগী সুস্থ হয়ে স্বাভাবিক কাজকর্মে অংশগ্রহণ করতে পারবে।
অপারেশন পদ্ধতি সম্পর্কে ডা. সূমায়ু দত্ত বলেন, এই অপারেশনের নাম ‘মিনিমাল ইনভ্যাসিভ স্পাইন সার্জারি’ মেরুদণ্ডের পাশে বা শিরার স্থানে পিন ঢোকানো হয়। পিন ঢোকানোর মাধ্যমে ডিস্ক বের করে আনা হয় একটি ডিভাইসের মাধ্যমে। এতে রক্তক্ষয়ের পরিমাণ একেবারেই অল্প। তাতে রোগীর অতিরিক্ত রক্তের প্রয়োজন হয় না। আমি সফলভাবে এই অপারেশন সম্পন্ন করেছি। এছাড়া মেরুদণ্ডের হাড় ক্ষয় হয়ে ভেঙে গেলে এই একই পদ্ধতিতে ভাঙা হাড়ের স্থানে সিমেন্ট ভরে দেওয়া হয়। আর এর খরচও খুব কম। মাত্র দেড় থেকে দুই লাখ টাকায় এ অপারেশন করানো যায়।
হৃদরোগের সমস্যা সমাধানে সেমিনারে আরও উপস্তিত ছিলেন ভারতের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক কলকাতার এম বিড়লা হার্ট রিসার্চ সেন্টারের সিনিয়র কনসালটেন্ট ও কার্ডিওলজিস্ট ডা. শুভ দত্ত।
হৃদরোগের সমস্যা সমাধানে তিনি রোগ পূর্ব সচেতনতার কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, এই রোগ একবার হয়ে গেলে তার চিকিৎসা যথেষ্ট জটিল। তার চেয়ে আমরা কীভাবে রোগ থেকে দূরে থাকতে পারি সে চেষ্টা করা উচিৎ। তৈলাক্ত খাবার পরিহার, ধূমপান থেকে বিরত থাকা, অতিরিক্ত মানসিক চাপ থেকে বিরত থাকা জরুরি।
প্রেসক্লাবের সভাপতি মোহাম্মদ শফিকুর রহমানের সভাপতিত্বে সেমিনারে আরও উপস্থিত ছিলেন সাবেক সভাপতি হাসান শাহরিয়ার, সাধারণ সম্পাদক ফরিদা ইয়াসমিনসহ প্রেসক্লাবের সদস্যরা।
বাংলাদেশ সময়: ২১৫০ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৩, ২০১৮
এমএএম/এমজেএফ